সিবিআইয়ের কয়লা পাচার মামলায় এক্তিয়ার নিয়ে রায়দান স্থগিত

Spread the love

মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,


বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে কয়লা পাচার মামলায় সিবিআইয়ের এক্তিয়ার নিয়ে মামলায় রায়দান স্থগিত রইলো।এদিন উভয় পক্ষের শুনানি চলে। কয়লা ব্যবসায়ী অনুপ মাঝি ওরফে লালার আইনজীবী ফারুক রাজ্জাক কয়লা পাচার মামলায় সিবিআইয়ের এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।অপরদিকে সিবিআইয়ের আইনজীবী এদিন সওয়াল-জবাবে এই মামলার এফআইআর খারিজে অভিযুক্ত লালা অপেক্ষা রাজ্য সরকারের আগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। এদিন এজলাসে জানতে চাওয়া হয় – ‘অভিযুক্ত রাজ্যের এলাকায় থাকলে সিবিআই কি করতে পারে’? উল্লেখ্য, সিবিআইয়ের স্বতঃস্ফূর্ত কয়লা পাচার মামলায় রাজ্যের অনুমতি প্রশ্নে এফআইআর খারিজ চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন এই মামলায় অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা। গতবছর নভেম্বর মাসে এই রাজ্যে সর্ববৃহৎ অভিযান চালায় সিবিআই। মূলত কয়লা ও গরু পাচার নিয়ে।যে অভিযানে কেন্দ্রের সিআরপিএফ বাহিনী ছিল সিবিআই আধিকারিকদের নিরাপত্তা প্রদানে। কেননা কয়লা ও গরু পাচারে সবথেকে বেশি অভিযোগ রাজ্য পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে। গতবছর নভেম্বর মাসে সিবিআই তাদের দুর্নীতি দমন আইনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মামলা দায়ের করে থাকে। ধাপে ধাপে বিএসএফের কয়েকজন আধিকারিক সহ গরু পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত এনামুল হক গ্রেপ্তার হন।কয়লা পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা অবশ্য ঘটনার পর থেকেই বেপাত্তা।তবে তদন্তের সিজ করা লিস্টে বহু নথিপত্র সহ কম্পিউটার – মোবাইল বাজেয়াপ্ত করেছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। গরুপাচার মামলায় আসানসোল সহ ব্যাংকশালের সিবিআই এজলাসে মামলা চলছে।গতবছর ডিসেম্বর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে সিবিআইয়ের পিটিশনে গরু পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত এনামুল হকের ৬ দিনের সিবিআই হেফাজতের নির্দেশজারী ঘটেছিল। এরেই মধ্যে কয়লা পাচার মামলায় মূল অভিযুক্ত অনুপ মাঝি ওরফে লালা তার আইনজীবীর মাধ্যমে কলকাতা হাইকোর্টে সিবিআই তদন্ত কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দাখিল করেছেন।ঠিক এইরকম পরিস্থিতির মাঝে রাজ্য পুলিশের অধীনে চারজন আইপিএস সহ ইন্সপেক্টর – সাব ইনস্পেকটর পদমর্যাদাপূর্ণ আধিকারিকদের দুর্নীতি দমন আইনে তলব করেছিল সিবিআই। ইতিমধ্যেই বাঁকুড়ার আইসি সহ কয়েকজন পুলিশকর্মী সিবিআই দপ্তরে জেরাপর্বে হাজিরাও দিয়েছেন। চলতি বছরের ৫ জানুয়ারি ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৬০ নং ধারা অনুযায়ী চারজন আইপিএস কে সাক্ষ্যপ্রমাণ এর জন্য তলব করে নোটিশ পাঠায় সিবিআই। এই নোটিশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছেন দুজন আইপিএস। একজন আইজি পদমর্যাদার অপরজন ডিসিপি পদমর্যাদাপূর্ণ আধিকারিক। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চ এই মামলা গ্রহণ করেছে। এই দুজন আইপিএস গরু পাচার মামলায় সিবিআই তদন্তের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে মামলা টি দাখিল করেছেন। এঁদের যুক্তি -‘সিবিআই তদন্তে একাধারে সংশ্লিষ্ট  রাজ্য সরকারের অনুমতি যেমন প্রয়োজন। ঠিক তেমনি সুপ্রিম কোর্ট – হাইকোর্টের অনুমতি লাগে।তবে এক্ষেত্রে কোনটাই প্রযোজ্য হয়নি’। এই দুজন আইপিএসের মধ্যে একজন মুর্শিদাবাদ জোনের আইজি ( আইবি) অপরজন আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের ডিসিপি পদে কর্মরত।গত ৫ জানুয়ারি সিবিআইয়ের প্রেরিত হাজিরার নোটিশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এই মামলা।জানা গেছে, ২০১৮ সালের আগে সিবিআই দুর্নীতি দমন আইনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মামলা দাখিল করতে পারতো। এতে কেন্দ্র ও রাজ্যের আইনী লড়াই বাঁধে।শেষপর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে সিবিআই কে হয় সংশ্লিষ্ট রাজ্যের অনুমতি কিংবা সুপ্রিম কোর্ট – হাইকোর্টের অনুমতি প্রয়োজন বলে আদেশনামায় জানায়।যদিও সিবিআইয়ের একাংশের দাবি – ‘নোটিশ মানেই সমন নয়, অভিযুক্ত হিসাবে নয় সাক্ষ্যপ্রমাণ সংগ্রহে সহযোগিতার জন্য ডাকা হয়েছে ‘। এখন দেখার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চ এই দুই আইপিএসের দাখিল করা পিটিশনে কি নির্দেশ দেয়?  এই নির্দেশের দিকে তাকিয়ে রাজ্য রাজনীতি সহ সর্বভারতীয় রাজনৈতিক মহল।কেননা একুশে বিধানসভা নির্বাচনে সবথেকে বড় ‘হট’ ইস্যু – কয়লা গরু পাচার মামলা! এরেই মধ্যে বুধবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে অনুপ মাঝি ওরফে লালার দায়ের করা এফআইআর খারিজ করা মামলার শুনানি চলে। সেখানে মামলাকারীর আইনজীবী, সহ সিবিআইয়ের আইনজীবীদের সওয়াল-জবাব চলে। বিচারপতি উভয়পক্ষের শুনানি শুনে রায়দান স্থগিত রেখেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *