সুপায়িনী

Spread the love

সুপায়িনী

নীহার চক্রবর্তী (বেথুয়াডহরি, নদীয়া)

মজা করেই প্রকাশ বলল ওর বৌ অনিতাকে,’প্রতিবছর পুজোর সময় আবার বিয়া করতি ইচ্ছা হয় । প্রতিবার পুরনো মুখ আর ভালা লাগে না গো ।’
সাথে-সাথে একমুখ হেসেই মুখের মতো জবাব দিলো অনিতা,’আমারও খুব হয় গো । তাইতো পাড়ার ছেলেদের সঙ্গে অত মিশি । একদিন একটাকে নিয়ে পালাবোই ।’
শুনে যারপরনাই অবাক প্রকাশ ।
তৎক্ষণাৎ বলে উঠলো,’আরে,চুপ… আমি তো মজা করলাম । এসব কী বলছ তুমি ? আমি একেই সুখী ।’

‘আরে,ধুর.. একে বোকা সুখী হয় । আমাদের পাড়ার কিছু বৌকে দেখি না ? কি চুলবুলি সব । আমি ওদের পথই ধরবো ।’
একচোট হেসে উঠে কথাগুলো বলে গেলো অনিতা ।
একদম চুপ প্রকাশ । ওর ভ্রূ কুঁচকে উঠলো ।
একটু পরে অনিতাকে বলল,’ভোলা এখনো বিরক্ত করে তোমাকে ?’
অনিতা সহাস্যে উত্তর দিলো,’আগে বিরক্ত হতাম । এখন কিন্তু বেশ লাগে । শুনলাম বাজারে কাপড়ের দোকান দিচ্ছে । আমাদের নেমন্তন্ন অবশ্য করবে ।’
‘বাদ দাও । হাতে এখন মেলা কাজ । বাজে কথা যত ।’
মুখভার করে একথা বলে ভোলার কাছে হিসাব বুঝে নিতে বুঝি বাড়ির বাইরে চলে গেলো ।

তারপরেই অনিতার সেকি এলোমেলো হাসি । বাড়ির পাশের রাস্তা দিয়ে তখন ভোলা যাচ্ছিলো ।
অনিতার হাসির শব্দ শুনে ও বাইরে থেকে জিজ্ঞেস করলো,’এত হাসির কী আছে,বৌদি ? দাদা কি কিছু করেছে ? নাকি বলেছে ?’
অনিতা তখন খোলা জানলার কাছে এসে রসিকতার সুরে বলল,’কিছু করেনি । ও বলেছে । আমি বলার পর হারামি নড়ে উঠেছে গো ।’
অনিতার কথা শুনে বিস্মিত ভোলা । কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে অনিতার কথা বুঝতে চেয়ে শেষে বসন্তের দখিণা হাওয়া হাসিতে ছড়িয়ে দিয়ে বাজারের দিকে পা বাড়াল ।
শেষমেশ যেতে-যেতে ভোলা বলল,’পরে সব শুনবো,বৌদি । এখন সময় নেই । হারামি ব্যাপারটা বেশ কানে লেগে থাকলো ।

এরপর অনিতা কাজে হাত দিলো ।
আলনা গোছাতে গোছাতে হাসি-হাসি মুখে গাইতে থাকলো–
‘দিবস-রজনী আমি যেন কার আশায়-আশায় থাকি…’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *