পারিজাত মোল্লা,
চলতি সপ্তাহের শুরুতেই দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আইনী ধাক্কা খেলেন কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামী আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে। তাঁর (প্রতাপচন্দ্র দে) বিরুদ্ধে রাজ্য পুলিশের তদন্তে প্রভাব খাটানোর ঘটনায় সিআইডি’র উপরই ভরসা রাখলো সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ । গত সোমবার রাজ্য গোয়েন্দা সংস্থা সিআইডি এই ঘটনার তদন্ত করবে বলে জানিয়ে দিল সুপ্রিম কোর্ট। অতি সম্প্রতি সিআইডি দফতরে তলব করা হয়েছিল আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে’কে।সেখান থেকে বেরিয়ে সিআইডি’র বিরুদ্ধে একগুচ্ছ অভিযোগ তুলেছিলেন তিনি। ওই আইনজীবীর অভিযোগ, -‘ সিআইডি তাঁকে বসিয়ে রেখে ছিল। আর জিজ্ঞাসাবাদের অজুহাতে তাঁর স্ত্রী বিচারপতি অমৃতা সিনহার সম্পর্কে নানা তথ্য জানতে চাওয়া হয়। এমনকী স্ত্রীর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করতে চাপ দেওয়া হয়’। যদিও সিআইডি বিবৃতি দিয়ে তা খারিজ করে দিয়েছিল। ওই আইনজীবী সুবিচার চেয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় চিঠি লিখেন তিনি। গত সোমবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা রাজ্য পুলিশের তদন্তের ‘স্টেটাস রিপোর্ট’ দেখতে চান। আর সেই রিপোর্ট দেখেই সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন বিচারপতিরা। অভিযোগ তোলা হয়েছিল, -‘এই ঘটনায় রাজ্য পুলিশ নিজের এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে কাজ করছে। তাই সিবিআই তদন্তের দাবি করা হয়’। তবে ওইদিন সুপ্রিম কোর্টে বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছে, -‘এই মামলায় সিবিআই তদন্তের কোনও প্রয়োজন নেই। সিআইডি তদন্তই যথেষ্ট’। আর তাতেই জোর ধাক্কা খেয়েছেন আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । আদালত সুত্রে প্রকাশ কলকাতার একজন বৃদ্ধা ও তাঁর মেয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেন। সেখানে তাঁরা অভিযোগ জানান, -‘সম্পত্তি নিয়ে বিবাদের মামলায় তিনি তাঁর আত্মীয়দের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন। কিন্তু আত্মীয়রা কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার স্বামী আইনজীবী প্রতাপচন্দ্র দে’কে আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ করেন। আর তাঁরা পুলিশের তদন্তে প্রভাব খাটাতে শুরু করেন’। তাতে বৃদ্ধা বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা করে সুপ্রিম কোর্ট যান। সেখান থেকে আগেই নির্দেশ দিয়েছিল, পুলিশ কোনও চাপের মুখে মাথা নত না করে তদন্ত করবে। গত মঙ্গলবার রাজ্য সরকারের আইনজীবি বলেন, ‘পুলিশকে বহিরাগত চাপের থেকে রক্ষা করা হোক।’ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা এই কথা শুনে বলেন, ‘চাপের কোনও প্রশ্ন নেই। পুলিশ জানে কেমন করে চাপ সামলাতে হয়।’ আসলে রাজ্য পুলিশের তদন্তে প্রভাব খাটানোর ঘটনায় সিআইডি’র উপরই ভরসা রাখল সর্বোচ্চ আদালত। আর সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জীব খান্না ওই মহিলার আইনজীবী কে প্রশ্ন করেছেন, -‘ তদন্ত আইন অনুযায়ী এগোচ্ছে? আর মামলায় কী অবশিষ্ট থাকে?’ তখন ওই আইনজীবী বলেন, ‘তদন্তের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।’ সেসময় বিচারপতি তাঁকে সুপ্রিম কোর্ট বিষয়টির স্টেটাস রিপোর্ট পড়ে দেখতে বলেন। আগামী শুক্রবার পুনরায় শুনানি হবে।