“স্বাধীনতা কাকে বলে” এক সামাজিক গল্প নিয়ে চমৎকার নাটক

Spread the love

“স্বাধীনতা কাকে বলে” এক সামাজিক গল্প নিয়ে চমৎকার নাটক



ইন্দ্রজিৎ আইচ
………………………………………..
সম্প্রতি নৈহাটী ঐকতান মঞ্চে অনুষ্ঠিত হল অঙ্গন বেলঘরিয়ার নবতম প্রযোজনা “স্বাধীনতা কাকে বলে”। আর পাঁচটা সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের মতোই অতি সাধারণ একটি পরিবার হরিমাধব বাবুর। বয়সের কারণে আজ তিনি প্রায় গৃহবন্দী, তাই একটু খিটখিটে বটে। স্ত্রী কমলা এখনো সংসারের হেঁসেল সামলে যাচ্ছেন। ছেলে রাণা এই ঘরের মূল উপার্জক। তার স্ত্রী জুঁহি বড়লোক বাড়ির মেয়ে তবু ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক সংসার সামলায় কিছুটা। হরি বাবুর বড় ছেলে রাজনৈতিক হত্যার শিকার, সেই শোকে বড় ছেলের বউ অসুস্থ হয়ে মারা যান রেখে যান তাদের দুই সন্তান কাজু আর তুলিকে। সুখে-দুখে আনন্দে দিব্য কেটে যাচ্ছিল দিনগুলি। কিন্তু বিপত্তি আসে যখন লোকাল কাউন্সিলর বরুন পাল হরি বাবুকে নিমন্ত্রণ জানাতে আসেন ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের দিন পাড়ার ক্লাবে পতাকা তোলার জন্য। শুধু একটা দিন জাতীয় পতাকা তুলে মিষ্টি খাওয়ার নাম কি স্বাধীনতা? নাকি স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকা, নিজের মত প্রকাশের নাম স্বাধীনতা? ঘটনার ঘাত প্রতিঘাতে ধীরে ধীরে পরিস্ফুট হয়ে ওঠে প্রকৃত স্বাধীনতা কাকে বলে। নাটকটি লিখেছেন বেবি সেনগুপ্ত ও নির্দেশনা অভি সেনগুপ্ত। গুরুজনেরা বলতেন, কে কত বড় বেনে প্রমাণ হয় তার হাতুড়ির ঠকঠকে। সুকারিগর তিনিই যিনি, মোটামুটি একটি বিষয়কেও সুশিল্পের দক্ষতায় সুউপাদেয় করে গড়ে তুলতে সক্ষম হন। পাশাপাশি, একজন নির্দেশক যদি দক্ষ অভিনেতা হন, গড়নে বলনে বাকি দলটাও চাবুক হয়ে ওঠে। অভির ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। অভি,বেবি, তপনকে নিয়ে কিছু বলাটাই বাতুলতা। এই তিনমুর্তির অভিনয় দক্ষতা সম্পর্কে বাংলার প্রান্ত প্রান্তিক যথেষ্ঠ ওয়াকিবহাল। বরং, শুধু নজর কাড়াই নয়, দলের আরেক সম্পদ তিথি বিশ্বাস, অভি বেবির তালে তাল মিলিয়ে চূড়ান্ত মুন্সিয়ানা ছড়িয়ে দিয়েছে। নেতা বরুনের চরিত্রে সুব্রত সরকার, ছেলে রানার চরিত্রে শুভাশিষ দত্ত, তুলির চরিত্রে মৌসুমী পাল ও কাজুর চরিত্রে সর্বানী ব্যানার্জী সবার মন কেড়েছেন। অভি তপন বেবিদের পাশে পাশে কি অসাধারণ সাবলীল অভিনয়টাই না করে গেলো যৌবনের দল! বেবি অভির কথা কিই বা বলবো! দুএ মিলে অসাড় নিস্তেজ দুটি বার্ধক্য, খুনসুটি, যন্ত্রণা, টুকটাক হাস্যপদ বাচ্য সংলাপের বুনোটে প্রযোজনাটিকে টানটান রেখে দিয়েছে পলে পলে। অভির বাঙাল ভাষায় সংলাপ উচ্চারণ, এক কথায় আলঙ্কারিক। বেবির কলম যেমনটি চেয়েছে, তেমন ভাবেই নাটককে এগিয়ে নিয়ে গেছে অভির সুচারু নির্দেশনা। পরিশেষে বলতে হয়, ভারি চমৎকার হাত নাট্যকার বেবির। টুকরো টাকরা কমেডি, শ্লেষময় সংলাপের পরত নির্মাণ, উতোর চাপান, সবেতেই মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। তপন বিশ্বাসের আবহ নির্মাণ ও গুঞ্জন প্রসাদ গাঙ্গুলীর আলোক ভাবনা নাটকটিতে অন্য মাত্রা যোগ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *