হাইকোর্টে রক্ষাকবচ পেলেন না সুমিত, আজ অভিষেক পত্নী রুজিরার মামলার রায়দান?
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
সোমবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে আইনী রক্ষাকবচ পেলেন না সুমিত রায়।তিনি তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আপ্তসহায়ক।সোমবারই নিয়োগ মামলার তদন্তে সুমিতকে তলব করেছিল ইডি। সেইমতন গিয়েছিলেন সুমিত।তবে ইডির নোটিসের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর আপ্তসহায়ক। দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়ে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।আদালতে সুমিতের আর্জি , -‘ এই মামলায় অভিষেক কে রক্ষাকবচ দেওয়া হয়েছে। তাই তাঁকেও যেন রক্ষাকবচ দেওয়া হয়’। কিন্তু সুমিতের এই আবেদনে সাড়া দিল না কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চ। কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের পর্যবেক্ষণ, -‘ অভিষেকের বিষয়টি আলাদা। কুন্তল ঘোষের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে অভিষেকের বক্তব্য নিয়ে মামলা ছিল। তার সঙ্গে সুমিতকে রক্ষাকবচ দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই’। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ৪ ডিসেম্বর। এর মধ্যে সুমিতের বিরুদ্ধে ইডি কোনও কড়া পদক্ষেপ করলে তিনি (সুমিত) আদালতে আসতে পারবেন বলেও নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি ঘ। একই সঙ্গে আগামী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ইডিকে হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন বিচারপতি । উল্লেখ্য, নিয়োগ মামলার তদন্তে সুমিতকে তলব করেছিল ইডি। ইডি সূত্রে প্রকাশ , -‘ নিয়োগ মামলার নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই তাঁকে তলব করা হয়েছে’। ইডির নোটিসের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছেন সুমিত। দ্রুত শুনানির আবেদন জানিয়ে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন তিনি। শুক্রবার সুমিতের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি ইডির আইনজীবীকে জানিয়েছিওএন যে, -‘সোমবার বেলা সাড়ে ১০টার পরিবর্তে বেলা ১২টায় হাজিরার সময়সীমা ধার্য করা হোক’। প্রসঙ্গত, কেন্দ্রীয় আর্থিক তদন্তকারী সংস্থা ইডির তলবে সাড়া দিয়ে সোমবার সকাল কলকাতায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দফতর সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছে যান সুমিত। নিয়োগ মামলায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করেছিল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। সেই মতো সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে হাজির হন তিনি। উল্লেখ্য যে, এর আগে কয়লাকাণ্ডেও সুমিতের নাম উঠে এসেছিল তাঁর । অপরদিকে আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায় এর দাখিল মামলায় রায়দান হতে পারে। সংবাদমাধ্যমে তাঁদের নিয়ে ভুল খবর প্রচার হচ্ছে, এই মর্মে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায় । এই মামলার শুনানি গত শুক্রবার শেষে হয়েছে আদালতে । কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকে সামনে রেখে এক শ্রেণির সংবাদমাধ্যম তাদের নামে মিথ্যা খবর প্রচার করছে দাবি করে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী রুজিরা নারুলা বন্দ্যোপাধ্যায় ।সেই মামলায় গত শুক্রবার ইডির তরফে হাইকোর্টে জানানো হয়েছে, -‘ তারা রুজিরার বিরুদ্ধে কী অভিযোগে সমন পাঠিয়েছে বা জিজ্ঞাসাবাদ করেছে তা তাদের ওয়েবসাইটে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জনসমক্ষে ইতিমধ্যেই জানানো হয়েছে । তাই বড় সংবাদমাধ্যমগুলিতে যদি এই নিয়ে ভুল খবর পরিবেশন করা হয় তার বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়া যেতে পারে । কিন্তু ছোট ছোট ডিজিটাল পোর্টাল ও ইউটিউব চ্যানেলগুলিতে যে ভুল প্রচার হচ্ছে তার বিরুদ্ধে তাদের কিছু করার নেই’ । ওইদিন হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়েছিল ।এর পাশাপাশি, ইডির তরফে হাইকোর্টে জানানো হয়েছে রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দায়ের করা এই মামলা আদালতে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।সেইসাথে বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যকে ইডির তরফে অনুরোধ জানিয়েছে যে, -‘ যাতে এমন কোনও নির্দেশ বিচারপতি না দেন যার জন্য শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত ব্যহত হয়’ ।ওইদিন এই মামলার শুনানিতে ইডির কাছে বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন -‘ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে কি রুজিরা অভিযুক্ত ‘? ইডির তরফে জানানো হয়েছিল -‘ সরাসরি অভিযুক্ত নন রুজিরা । কিন্তু সন্দেহ করা হচ্ছে তাঁকে এবং তাঁর যোগের বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হচ্ছে’ ।ইডি’ তরফে আদালতে ওইদিন আরও জানানো হয়েছিল যে, -‘ তারা কোনও গসিপ ম্যাগাজিন নয়’ । ইডির আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টে বলেছিলেন, “আমরা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা । সাধারণ মানুষের অবগতির জন্য আমরা আমাদের ওয়েবসাইটে সমস্ত কিছু জানাচ্ছি । তা সত্ত্বেও ইডির বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মিথ্যা অভিযোগ আনা হচ্ছে । এই মামলায় যেকোনও নির্দেশ তদন্তের গতিপ্রকৃতিকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে পারে’ । সেইসময় বিচারপতি জানতে চেয়েছিলেন , -‘ ইডির কোনও আধিকারিক কখনও কি কোনও তথ্য সংবাদমাধ্যমে গোপনে জানাচ্ছে ‘? কিন্তু ইডির তরফে জানানো হয়েছে যে, -‘ তারা গোপন কিছু কাউকে আলাদা করে বলছে না । সবটাই তাদের ওয়েবসাইটে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানানো হয় ‘। গত শুক্রবারে এই মামলার শুনানি শেষ হয়েছে । তবে আপাতত রায়দান স্থগিত রেখেছেন বিচারপতি । ১৭ অক্টোবর অর্থাৎ আজ এই মামলার রায় দেবেন বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলে জানা গেছে । এর আগে রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাগরিকত্ব নিয়ে আদালতে প্রশ্ন তুলেছে কেন্দ্র । কারণ খাতায় কলমে তিনি(রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়) থাইল্যান্ডের নাগরিক। একজন বিদেশি নাগরিক কী করে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করতে আদালতে আবেদন জানান? সেই প্রশ্ন তোলেন কেন্দ্রের সহকারী অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল । এছাড়া গত বৃহস্পতিবার এই মামলার শুনানিতে রুজিরার আইনজীবী বলেছিলেন, -‘ গোপনীয়তার অধিকার খর্ব করা হয়েছে, এই বিষয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন’ । সেসময় বিচারপতি এজলাসে জানান যে, “মামলার আবেদন শুনে মনে হচ্ছে গোটা রাজ্যের নিয়ন্ত্রক কালীঘাট থানা !” আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসে এই মামলার রায়দানের তাকিয়ে সংবাদমাধ্যমের অনেকেই।জানা গেছে, বেশ কয়েকটি বৃহৎ সংবাদমাধ্যমের পাশাপাশি বেশ কয়েকজন ইউটিউবারের বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ পরিবেশন করার অভিযোগ এনেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর স্ত্রী রুজিরা বন্দ্যোপাধ্যায়।