হার্মাদ :- পিনাকী চৌধুরী।। বামফ্রন্টের শাসন চলাকালীন সময়ে আকছার এই কথাটি শোনা যেত ‘ সিপিএম এর হার্মাদ ” ! আর তর্কবাগীশ বাঙালির চায়ের কাপে তুফান উঠতো ! আজও হয়তো অনেকেই গালি দিয়ে এই ‘ হার্মাদ’ শব্দটি প্রয়োগ করেন । কিন্তু আসল সত্যটা কি ? ‘ হার্মাদ’ এর আক্ষরিক অর্থ হল জলদস্যু ! কিন্তু রাজনীতির সঙ্গে তো জলদস্যুদের দূরত্ব শতসহস্র যোজন দূরে ! তাতে কি হয়েছে ? বহুল প্রচলিত এই ছোট্ট শব্দটির দ্বারা অন্ততপক্ষে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে তো কিছুটা হলেও বাক্যবাণে জর্জরিত করা সম্ভব ! কিন্তু এই ‘ হার্মাদ’ শব্দটি এসেছে কিভাবে ? বাস্তবে হার্মাদ পর্তুগিজ আর্মাডা শব্দের অপভ্রংশ। ষোড়শ ও সপ্তদশ শতাব্দীতে বঙ্গদেশের পূর্ব ও দক্ষিণ সীমান্তে উপদ্রুত পর্তুগিজ বণিক ও মগ জলদস্যুদের বোঝাতেই এই হার্মাদ শব্দটি ব্যবহার করা হত। এখানে উল্লেখ্য, মোগল সাম্রাজ্যের সঙ্গে ভয়ানক শত্রুতার জেরে আরাকনের মগ জলদস্যুরা পর্তুগিজ জলদস্যুদের সঙ্গে যোগ দিয়ে তদানীন্তন মোগল শাসনাধীন বাংলায় অবাধে লুটপাট চালাতো । সবথেকে বড় কথা, সেই ভয়ানক জলদস্যুরা নারীদের ওপর অসহনীয় অত্যাচার চালাত । তাদের ভয়ে তটস্থ ছিল তামাম বঙ্গ সমাজ । সুলতান হুসেন শাহের রাজত্বকালে বঙ্গদেশে সর্বপ্রথম পর্তুগিজ হার্মাদ বণিকদের আবির্ভাব ঘটে। সেইসব ভয়ানক জলদস্যুরা মূলত চট্টগ্রাম, সপ্তগ্রাম ও হুগলী জেলায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তার করে অবাধে লুঠপাট চালাত । ১৫২৮ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজ অধিনায়ক মেলো বাণিজ্যের অছিলায় এইসব স্থানে অত্যাচার চালাত এবং সেজন্য পরবর্তীকালে সেই মেলোকে বহুদিন গৌড়ে বন্দী করে রাখা হয় । কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তাঁর চন্ডীমঙ্গল কাব্যে এই হার্মাদ জলদস্যুদের কথা উল্লেখ করেছেন। এখানেই শেষ নয় । ইংরেজ শাসনেও পর্তুগিজ হার্মাদ দের কথা শোনা যায়! ১৮২৪ খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিল মগ জলদস্যুরা ! ১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজ সরকার হাওড়ার শিবপুরে গঙ্গার একটি বাঁধ নির্মাণ করে মগ ও পর্তুগিজ জলদস্যুদের আগমনের পথ বন্ধ করে দেয় !