হিমঘর থেকে বলছি
সঙ্গীতা কর (কলকাতা)
আমি সুচন্দ্রিতা দত্ত
আমার গর্ভধারিনী মা আমাকে দেখে নাকে কাপড় দিয়ে সরে গেল
ভাবছি এও কি সম্ভব??
এইতো দু’দিন আগেই খেতে খেতে কতবার বুঝিয়েছে সবকিছুর সঙ্গে মানিয়ে নিতে
তবে এখন একটু গন্ধের সঙ্গে মানিয়ে নিতে,
এত অসুবিধা হচ্ছে কেন?
অথচ কতবার কত রকম গন্ধ সহ্য করেছি আমি
মন পোড়া গন্ধ
অনুভূতি পোড়া গন্ধ
ভালোবাসা পোড়ার গন্ধ
ঝাঁঝালো গন্ধে অতিষ্ঠ হয়ে যখন আপনজনদের কাছে স্বস্তি খুঁজেছি
মা বলেছে শাশুড়ি মায়েরা একটু ওরকমই তাদেরকে মানিয়ে নিয়েই বাড়ির বউকে চলতে হয়
বাবা বলেছে ভাশুর, শ্বশুরের কথা মেনে চলতে হয়
আমার একটা বান্ধবী ছিলো
মনের কথা বলার মতো
ও বলেছিল স্বামীদের কথা না শুনলে তারা বিপথে চলে যায়
আমি সবার কথা মেনে নিয়েছিলাম
শ্বশুরের আর্থিক চাহিদা
শাশুড়ির পরিচারিকার চাহিদা
আর তারপর স্বামীর দৈহিক চাহিদা
সারাদিনের মানসিক নির্যাতনের পর শারীরিক নির্যাতন দিনের পর দিন বিষময় লাগতো
দেয়ালে পিঠ ঠেকতে ঠেকতে
একদিন জীবন মরণের মাঝখানে দেয়াল উঠলো
আমি মরে গেলাম নিজের ইচ্ছায়
সবাই বললো আত্মহত্যা
তারপর আরো কিছু যন্ত্রণার বাকি ছিল
দগ্ধ হওয়া শরীরটাকে ডাক্তার আবার ছুরি কাঁচি চালালো
এখন আমি হিমঘরে
আমার বডিতে নাম্বার বসানো হয়েছে
আত্মীয় পরিজন সবাই নাকে দুর্গন্ধ পাচ্ছে
আমার মা ও পাচ্ছে!
আজ একটা শেষ প্রশ্ন আছে আমার
কেন আমার মন পোড়া গন্ধ কেউ পেল না?
কেন কেউ আমার যন্ত্রণায় একটু মলম লাগাতে পারলো না?
জীবনের কাছে হেরে যাওয়ার এই ব্যর্থতা কার
আমার একার না আপনাদের সবার??