২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করলো সুপ্রিম কোর্ট 

Spread the love

২৬ হাজার চাকরি বাতিল মামলায় রাজ্যের পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করলো সুপ্রিম কোর্ট 

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

মঙ্গলবার নিয়োগ কেলেঙ্কারির জেরে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের নির্দেশ বিবেচনা করে দেখার জন্য পশ্চিমবঙ্গ রকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন এর রিভিউ পিটিশনের আর্জি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। এদিন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ ওই আর্জি খারিজ করে দিয়েছেন।এরফলে ২৬ হাজার চাকরি বাতিলের মামলায় জোর ধাক্কা খেল রাজ্য সরকার। আইনি লড়াইয়ের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। নিয়োগ দুর্নীতির জেরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের ২০১৬ সালের প্যানেল সম্পূর্ণ বাতিল করে দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। যার ফলে এক ধাক্কায় কাজ হারিয়েছিলেন ২৬ হাজার শিক্ষক ও অশিক্ষক কর্মী। কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন। কিন্তু নিয়োগকারীদের মধ্যে যোগ্য ও অযোগ্য বাছাইয়ের পথ না থাকায় চলতি বছরের গত ৩ এপ্রিল শীর্ষ আদালতের ত‍ৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন তিন বিচারপতির বেঞ্চ ২০১৬ সালের পুরো প্যানেল বাতিলের নির্দেশ দিয়েছিল। সেই সঙ্গে পুরো প্যানেল বাতিল করে নতুন করে নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়।প্যানেল বাতিলের রায় পুনর্বিবেচনার জন্য ফের শীর্ষ আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিল রাজ্য সরকার ও স্কুল সার্ভিস কমিশন। মধ্যশিক্ষা পর্ষদ এবং স্কুল সার্ভিস কমিশনের যুক্তি ছিল, ‘প্রত্যেক স্কুল থেকে শিক্ষকদের বের করা হলে, শিক্ষাব্যবস্থা সঙ্কটের মুখে পড়বে। নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত, চলতি শিক্ষাবর্ষ অতিক্রান্ত না হওয়া পর্যন্ত, শিক্ষকদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক।’ ওই আর্জির ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চিহ্নিত অযোগ্য নন যাঁরা, তাঁরা স্কুলে ফিরতে পারবেন। তবে এদিন রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে দায়ের করা প্রায় ২০০টি রিভিউ পিটিশনের সব কয়টি আর্জি খারিজ করে দিয়েছে বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি সতীশ চন্দ্র শর্মার বেঞ্চ। বিচারপতিরা জানিয়েছেন, ‘নিয়োগ পরীক্ষার প্রকৃত ওএমআর শিট মিলছে না। সিবিআই এবং বাগ কমিটির তদন্তের ভিত্তিতে স্পষ্ট, যে দুর্নীতি হয়েছে।’ দেশের শীর্ষ আদালতের এই নির্দেশের ফলে চাকরিহারা সকলকে নতুন করে পরীক্ষায় বসতে হবে। ওই পরীক্ষায় সফল ভাবে উত্তীর্ণ হলে তবেই স্কুলে চাকরিতে ফিরতে পারবেন।সুপ্রিম কোর্টের রায়ে স্পষ্ট বলা হয়েছে—যাঁরা প্রশ্নাতীতভাবে ‘অযোগ্য’ বা ‘দাগী’ (টেন্টেড) হিসাবে ধরা পড়েছেন, তাঁদের চাকরি বাতিলের পাশাপাশি এতদিন পাওয়া বেতনও ফেরত দিতে হবে। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, যেহেতু দুর্নীতির মাধ্যমে তাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন, তাই এটি প্রতারণার সামিল। সেই কারণে বেতন রাখার অধিকার নেই তাঁদের। এঁদের সংখ্যা আনুমানিক ৭ হাজার।শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণে তিনটি প্রধান ক্ষেত্রে প্রার্থীদের অযোগ্য বলা হয়েছে—সাদা খাতা কাণ্ড: এসএসসি পরীক্ষার খাতা থেকে বহু ফাঁকা উত্তরপত্র উদ্ধার হয়েছে, যেগুলি জমা দিয়েই কেউ কেউ চাকরি পেয়েছিলেন।প্যানেলের বাইরে নিয়োগ: সরকারি তালিকায় নাম না থাকা সত্ত্বেও অনেকেই চাকরি পেয়েছিলেন।মেয়াদোত্তীর্ণ প্যানেল ব্যবহার: নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও সেই তালিকা থেকে নিয়োগ হয়েছে।এই তিন শ্রেণির প্রার্থীকেই আদালত সরাসরি ‘অযোগ্য’ বলে চিহ্নিত করেছে। তাঁদের চাকরি যেমন বাতিল, তেমনই বেতন ফেরতের নির্দেশও বহাল থাকল।তবে আদালত স্পষ্ট করেছিল, সব চাকরিপ্রার্থীকে একইভাবে দেখা যাবে না। যাঁদের খাতা উদ্ধার হয়নি বা যাঁদের ক্ষেত্রে অনিয়ম সরাসরি প্রমাণিত হয়নি, তাঁদের ‘যোগ্য’ বা ‘অযোগ্য’ হিসাবে আলাদা করে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। সে কারণেই সমগ্র নিয়োগ প্রক্রিয়াই বাতিল করা হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *