৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৪৩ নেতাজি আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন।।।।।
৩০ শে ডিসেম্বর, সাল ১৯৪৩। ব্রিটিশ মুক্ত আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করলেন নেতাজী। হঠাৎ শুনলে কাজটা যতটা সহজ মনে হয়, ততটা সহজ ছিল না। এর জন্য ফিরে দেখা দরকার আগের প্রেক্ষাপট। আই.সি.এস প্রত্যাখ্যানকারী এক বাঙালি, বাংলা তথা ভারতবর্ষের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মুখ হয়ে উঠেছিলেন। ব্রিটিশ বিতরণে বাংলার বিপ্লবীদের প্রচেষ্টা সবসময়ই দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিল। সেই প্রচেষ্টাকে স্বাধীনতায় রূপান্তর ঘটনার জন্য তিনি তার নিজের সবটুকু নিয়োজিত করেছিলেন জাতির সেবায়। বাংলার সশস্ত্র সংগ্রামকে এক নতুন রূপ দিতে এবং ব্রিটিশ মুক্ত স্বাধীন ভারতের লক্ষ্যে ১৯৪১ সালের জানুয়ারি মাসে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের চোখে ধুলো দিয়ে ছদ্মবেশে কলকাতার এলগিন রোড থেকে এক ভয়ানক যাত্রায় তিনি পৌঁছলেন জার্মানি এবং সেখানে পৌঁছে তিনি গঠন করলেন ফ্রি ইন্ডিয়া সেন্টার। কিন্তু তিনি বুঝলেন জার্মানি থেকে তিনি খুব একটা সাহায্য পাবেন না ভারতবর্ষের স্বাধীনতার জন্য। এরপর তিনি জাপানে আসেন অকল্পনীয় সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে এবং হয়তো ভারতবর্ষের প্রথম কেউ যিনি সাবমেরিন যাত্রা করেন। সিঙ্গাপুরে ১৯৪৩ সালের ২১ শে অক্টোবর তিনি আজাদ হিন্দ সরকার গঠন করলেন। এবং তার মাত্র দুদিনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করলেন ভারতের স্বাধীনতার জন্য। সে সময় প্রায় পুরো দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় তিনি ছুটে বেরিয়েছেন, সেখানে বসবাসকারী ভারতীয়দের উদ্বুদ্ধ করেছেন। সে সকল অঞ্চলের মানুষেরা নেতাজীর এই মহান প্রচেষ্টাকে সার্থক করতে, আপ্রাণ চেষ্টা করেছে, যাদের মধ্যে এমন অনেকেই ছিলেন যারা ভারতবর্ষ দেখেনি পর্যন্ত। এ বিষয়ে আজাদ হিন্দ ফৌজের ইতিহাস আমাদের পাঠক্রমে সবিস্তারে যুক্ত হলে আগামী প্রজন্ম উপকৃত হবে। এরপর আজাদ হিন্দ ফৌজ কে নিয়ে তিনি এগোতে থাকলেন ভারতের উদ্দেশ্যে। ইতিমধ্যেই জাপান আন্দামান-নিকোবর কে ব্রিটিশ মুক্ত করে এবং নেতাজী কে হস্তান্তর করে। অবশেষে ৩০শে ডিসেম্বর ১৯৪৩ সালে নেতাজী আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে তেরঙ্গা পতাকা উত্তোলন করেন এবং দ্বীপপুঞ্জ দুটোর নাম দেন, শহীদ ও স্বরাজ। সেই অর্থে এই দিনটি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে কাজটি তিনি দেশের মধ্যে থেকে করতে পারছিলেন না সেই কাজটি দেশের বাইরে গিয়ে করতে, তিনি সাংঘাতিক ঝুঁকি নিতেও দুবার ভাবেননি। কারণ তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ছিল ভারতবর্ষের স্বাধীনতা। আর কিছুদিন পরেই দেশ নায়কের ১২৮ তম জন্মবার্ষিকী। বহুদিন ধরেই নেতাজী জয়ন্তীতে জাতীয় ছুটি ঘোষণার দাবি করে আসছেন অনেকেই। ভারতবর্ষের স্বাধীনতায় নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসুর অবদান এবং অগণিত নেতাজী অনুরাগীর আবেগের বিষয়টা বিবেচনা করে কেন্দ্রীয় সরকার খুব শীঘ্রই ২৩ শে জানুয়ারি দিনটিকে জাতীয় ছুটি হিসেবে ঘোষণা করবে আশা রাখি।
মৃন্ময় ব্যানার্জী
নেতাজি অনুরাগী এবং তথ্যচিত্র পরিচালক