সেখ সামসুদ্দিন
১৬ দফা দাবিতে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যব্যাপী ছাত্র আন্দোলন শুরু করেছে ভারতীয় বিদ্যার্থী মোর্চা ২৪, ২৫ ও ২৬ আগস্ট তিন দিনব্যাপী। আন্দোলনের দাবীসমূহ হল- ১) অ্যাডমিশন ফী না দেওয়া। কলেজে ভর্তির জন্য ছাত্রদের কাছে বড়ো অংকের টাকা (Admission Fees) দাবি করছে কলেজ কর্তৃপক্ষ । লক ডাউনের জন্য অধিকাংশ ছাত্রছাত্রীর পরিবারে রোজগার নেই , তাই অনেক ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে ভর্তি ফী দেওয়া সম্ভব নয় । তাই লকডাউন পরিস্থিতিতে সমস্ত সরকারি কলেজে বিনামূল্যে করানোর দাবি। ২) পর্যাপ্ত পরিমাণে হোস্টেলের দাবি। স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে হোস্টেলের ব্যাবস্থা করতে হবে এবং সেগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনা করতে হবে। ৩) স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সমৃদ্ধ লাইব্রেরি পরিষেবার দাবি। ৪) শিক্ষকের শূন্যপদ গুলি পূরণ করে পর্যাপ্ত পরিমাণে শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে ও ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত বজায় রাখতে হবে। ৫) অনিয়ন্ত্রিত ফী বৃদ্ধির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে দিনের পর দিন নানারকম ফী বেড়ে চলেছে । রাজ্য ও কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও লাগাতার ফী বৃদ্ধি করছে । CBSE স্কুলে দশম-দ্বাদশ শ্রেণীতে SC ST পড়ুয়াদের পরীক্ষার ফী ২৪ গুণ বাড়ানো হয়েছে যা সাধারণ শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফী দ্বিগুণ বাড়ানো হয়েছে। যার তীব্র বিরোধিতা করছে ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফী বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সরকারকে হস্তক্ষেপ করার দাবি। ৬) বিভিন্ন কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার খাতা না দেখেই গড় নম্বর বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে । বাঁকুড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ সব কলেজ এবং রাজ্যের অন্যান্য কলেজে লকডাউনের সময়ে যেসব পরীক্ষার্থীদের গড় নম্বর দেওয়া হয়েছে তাদের খাতা পুনরায় খতিয়ে দেখতে হবে। পরীক্ষার সঠিক মূল্যায়ন করতে হবে । ৭) কলেজ ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির সময় সঠিকভাবে সংরক্ষণ মেনে ভর্তি করাতে হবে। সাধারণ কলেজের সাথে সাথে মেডিকেল কলেজ এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও সংরক্ষণ ঠিকভাবে মান্য করা হচ্ছে কিনা তা কলেজ কর্তৃপক্ষকে বিশেষ নজরদারি করার দাবি। ৮) শিক্ষার্থীরা যেসব স্কলারশিপ পায় সেগুলি নিয়মিত সঠিক সময়ে তাদের একাউন্টে আসে না । এর ফলে পড়াশুনার খরচ চালাতে তাদের পক্ষে অসুবিধা হয় । অনেক ক্ষেত্রে স্কলারশিপের টাকা আসে না। খরচ জোগাতে না পেরে অনেক ছাত্র পড়াশুনা ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সঠিক সময়ে ছাত্রছাত্রীদের স্কলারশিপ দেওয়ার দাবি। ৯) বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিচু জাতির শিক্ষার্থীদের উপরে জাতিগত ভেদাভেদ করা হয় । বিশেষ করে আদিবাসী ছাত্রদের অপমানজনক ও অসম্মানজনক কথা বলে ছোটো করা হয় । অনেক সময় অধ্যাপকরা জাতিগত ভেদাভেদ করেন। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ করার জন্য কঠোর আইন বলবৎ করতে হবে। এছাড়া র্যাগিং বন্ধ করার জন্য বিশেষ পদক্ষেপ নিতে হবে। ১০) অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপকরা তাঁদের ক্ষমতার অপব্যাবহার করে ছাত্রীদের ব্লাকমেল করার চেষ্টা করেন । এরকম ঘটনা ঘটলে সেই অপরাধীকে কঠোর শাস্তি দেওয়ার আইন বলবৎ করতে হবে। ১১) Direct Benifit Transfer আইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের হোস্টেল সুবিধা বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে । তাই DBT বাতিল করে পুরানো ছাত্রবৃত্তি নিয়ম চালু করার দাবি। ১২) কলেজে ছাত্র ছাত্রীদের কাছে সারা বছর নানারকম অজুহাতে ফী বা পেনাল্টি ইত্যাদি নেওয়া হয় । এই ধরনের ফী নেওয়া বন্ধ করতে হবে। ১৩) স্কুল, হোস্টেল, বিশ্ববিদ্যালয় বেসরকারিকরণ করার পথে হাঁটছে সরকার । এমনকি ইউজিসি (ইউনিভার্সিটি গ্র্যান্ট কমিশন) বেসরকারিকরণ করার চেষ্টা চলছে। শিক্ষার প্রাইভেটাইজেশন বন্ধ করার দাবি। ১৪) সাধারণ স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়কে ধর্মীয় প্রভাব থেকে মুক্ত করে কুসংস্কারমুক্ত ও বিজ্ঞান চেতনার প্রসারের পদক্ষেপ নিতে হবে । ১৫) শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি করার জন্য (স্কিল ডেভেলপমেন্ট) সিলেবাস গঠন করতে হবে। এছাড়া অনেক স্কুল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে নিয়মিত সঠিকভাবে ক্লাস হয় না । নিয়মিত ক্লাস করানোর ব্যাবস্থা করার দাবি এবং ১৬) ন্যাশনাল লেভেলের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রছাত্রীদের বাকস্বাধীনতার উপরে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে । ছাত্রছাত্রীদের উপরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চাপ সৃষ্টি করে তাদের বাক স্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে । এর তীব্র বিরোধিতা সহ শিক্ষার্থীদের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা বজায় রাখার দাবি জানাানো হচ্ছে বলে জানান ভারতীয় বিদ্যার্থী মোর্চার পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অমৃত রুইদাস। তিনি আরো জানান আন্দোলন কর্মসূচিতে
ভারতীয় বিদ্যার্থী মোর্চার নেতৃত্বে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রাজ্যস্তরে আন্দোলন করা হবে। মূলনিবাসী বহুজন সমাজের বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং সামাজিক সংগঠনকে এই আন্দোলনে সামিল হতে আহ্বান করছেন। ২৪, ২৫ ও ২৬ আগস্ট এই আন্দোলন করা হবে ।ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে সারা রাজ্য জুড়ে আওয়াজ ওঠানো হবে। শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্যপালকে কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রীর তরফ থেকে ইমেল পাঠানো হবে। উপরিউক্ত ১৬ টি ইস্যুতে সারা রাজ্যের ছাত্রছাত্রীদের জাগৃত ও সংগঠিত করা হবে । মিসড কলের মাধ্যমে সমর্থন সংগ্রহ করা হবে । এছাড়া আরও কিছু কর্মসূচি নেওয়া হবে । সেগুলো আন্দোলনের পূর্বে ঘোষণা করা হবে ।