মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু ),
বর্তমান সরকারের আমলে প্রাথমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে চলছে দীর্ঘ আইনী জটিলতা। তিন হাজারের কাছাকাছি গত পাঁচ – ছয় বছরে দাখিল হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। এর মধ্যে বেশিরভাগ মামলা ( আড়াই হাজারের কাছাকাছি) হয়েছিল উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে। যার সিঙ্গেল বেঞ্চের রায়দান ঘটেছিল গত ১১ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের এজলাসে। এই রায়দান কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন দাখিল করেছেন ১২৩ জন পরীক্ষার্থী। যার শুনানির সম্ভাবনা আগামী ৪ জানুয়ারি। আবার গত মঙ্গলবার বিকেলে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সাড়ে ১৬ হাজার শুন্যপদ পূরণের জন্য আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি ইন্টারভিউ এবং ৩১ জানুয়ারি টেটের তৃতীয় পরীক্ষার সময়সূচি জানিয়েছিলেন। যার বিজ্ঞপ্তি গত বুধবার প্রাথমিক শিক্ষক বোর্ড ঘোষণা করে থাকে। এই বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে মামলা দাখিল করেছেন আইনজীবী ফিরদৌস শামীম। যার শুনানি রয়েছে আগামী ৪ জানুয়ারি। অর্থাৎ আগামী ৪ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের দুটি পৃথক বেঞ্চে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে মামলার শুনানি এবং উচ্চপ্রাথমিকে নিয়োগ মামলার আপিল পিটিশনের শুনানি রয়েছে।উল্লেখ্য, গত ১১ ডিসেম্বর উচ্চপ্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া বাতিল ঘোষণা করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চ। পাশাপাশি পরীক্ষা পরবর্তী সমস্ত প্রক্রিয়া নুতন করে চালু করবার নির্দেশ দিয়েছিল এই বেঞ্চ, তাও নিদিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট বহু প্রতিক্ষিত এই মামলার রায়দান ঘটেছিল । আড়াই হাজারের বেশি পরীক্ষার্থীদের দায়ের করা দু হাজারের কাছাকাছি এইসব মামলার একযোগে শুনানিতে গত ১১ ডিসেম্বর এই রায়দান ঘোষণা করে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চ। গত ২০১৪ সালে উচ্চপ্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি জারীর পর লোকসভা ভোটপর্বের জন্য এই পরীক্ষা সূচির বদল ঘটে। ২০১৫ সালে আগস্ট মাসে উচ্চপ্রাথমিকে পনেরো হাজার শুন্যপদের জন্য পাঁচ লক্ষ তেতাল্লিশ হাজার পরীক্ষার্থী এই পরীক্ষা দেয়।এতদূর অবধি সব ঠিকঠাক ছিল। ২০১৯ সালে ২৩ সেপ্টেম্বর লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের নিয়ে ভেরিফিকেশন থেকে ইন্টারভিউ পর্ব অবধি অনিয়ম – দুর্নীতি – স্বজনপোষণের অভিযোগ উঠে উচ্চপ্রাথমিকে পরীক্ষার্থীদের বড় অংশের তরফে। কলকাতা হাইকোর্টে আড়াই হাজার মত পরীক্ষার্থী দফায় দফায় দু হাজারের কাছাকাছি মামলা দায়ের করেন। মূলত উত্তীর্ণ পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যারা প্রশিক্ষিত তাদের কে না ইন্টারভিউ তে না ডেকে অপ্রশিক্ষিত প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয় মেরিট লিস্টে। এমনকি ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন নিয়ে নানান অনিয়মের অভিযোগ উঠে। কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নির্দেশক্রমে সমস্ত মামলা আলাদা আলাদা বেঞ্চ থেকে সরিয়ে বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চে আনা হয় শুনানির জন্য। টানা সাত বছর পর এইবিধ মামলাগুলির গত ১১ ডিসেম্বর কলকাতা হাইকোর্টে রায়দান ঘটে। সেখানে বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য উচ্চপ্রাথমিকে অতীতের সমস্ত নিয়োগ প্রক্রিয়া ( ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন থেকে মেরিট লিস্ট) আইন মেনে হয়নি বলে আদেশনামায় জানিয়েছেন। পাশাপাশি আগামী বছরের ৪ জানুয়ারি থেকে উচ্চপ্রাথমিকে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করবার নির্দেশ দেন। ৫ এপ্রিলের মধ্যে ডকুমেন্টস ভেরিফিকেশন শেষ করার নির্দেশিকা রয়েছে। ৩১ জুলাইয়ের মধ্যে মেধাতালিকা প্রকাশের সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চ। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে মেধা তালিকায় নাম ছিল অথচ কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী তাদের নাম বাদ গেছে। এইরুপ ১২৩ জন পরীক্ষার্থী কেন তাদের নাম বাদ গেছে, তা জানতে বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি সৌগত ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন দাখিল করেছেন।এই আপিল পিটিশন গ্রহণ করে ডিভিশন বেঞ্চ ৪ জানুয়ারি এই মামলার পরবর্তী শুনানি দিনক্ষণ জানিয়েছে। অপরদিকে গত মঙ্গলবার বিকেলে নবান্ন থেকে মুখ্যমন্ত্রী প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে সাড়ে ১৬ হাজার শুন্যপদ পূরণ করবার নির্দেশ দেন। আগামী ১০ জানুয়ারি থেকে ১৭ জানুয়ারি ইন্টারভিউ সহ ৩১ জানুয়ারি তৃতীয় টেট পরীক্ষার সময়সূচি জানিয়েছিলেন। গত বুধবার তা রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বোর্ড বিজ্ঞপ্তিতে তা জানিয়েও দেয়।বৃহস্পতিবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা দাখিল করেন আইনজীবী ফিরদৌস শামীম। পিটিশনে তিনি উল্লেখ্য রেখেছেন যে, – ‘ ২০১৪ সালের টেট পরীক্ষার্থীদের থেকে নিয়োগ হওয়ার কথা।ওই বছরের টেটের প্রশ্নমালায় ৬ টি ভূল প্রশ্ন ছিল, তা আদালতে বিবেচনাধীন রয়েছে। ওই ৬ টি ভূল প্রশ্নের নাম্বার অনেকেই পাননি।তাই লিখিত পরীক্ষায় অনেকেই পাশ করতে পারেননি।সেটা সংশোধন না করে কি করে নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে’? এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী ৪ জানুয়ারি। একাধারে উচ্চপ্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগ মামলায় সিঙ্গেল বেঞ্চের রায় কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল পিটিশন দাখিল এবং অন্যদিকে প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বোর্ডের বিজ্ঞপ্তি কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে মামলা রুজু। জোড়া মামলায় ফের থমকে গেল কি নিয়োগ প্রক্রিয়া? তার উত্তর মিলবে আগামী ৪ জানুয়ারি কলকাতা হাইকোর্টের দুটি পৃথক বেঞ্চের নির্দেশে।