মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
প্রায়শই বিভিন্ন ব্যাংক কর্তৃপক্ষের রিকভারি এজেন্টের জুলুমবাজি নিয়ে ঋণগ্রহিতাদের নানান অভিযোগ শোনা যায়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সহ ক্ষমতাসীনদলের একাংশের মদতে এদের বাড়বাড়ন্ত ক্রমশ উদ্ধমুখি। বেশিররভাগ ক্ষেত্রে লাগাদার জুলুমবাজির জন্য আত্মহত্যার ঘটনাও ঘটে।ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে এক হতভাগা স্ত্রী, যে তার স্বামী কে চিরতরে হারিয়েছে পৃথিবীর বুকে।আবার সাত বছরের মেয়ে এবং বয়স্কা শাশুড়ী কে নিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের ‘ম্যাসলম্যান’ রিকভারি এজেন্টের দৌরাত্ম্যে জীবন বিপন্ন প্রায় তার ।তাই বাধ্য হয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন। স্থানীয় থানার পুলিশ কে জানিয়েও কোন সুরাহা না মেলায় তিনি হাইকোর্টের কাছে সুবিচার অর্থাৎ ম্যাসলম্যান রিকভারি এজেন্টের জুলুমবাজি থেকে রক্ষা পেতে চেয়েছিলেন। হ্যাঁ, হাইকোর্ট এই মহিলার আবেদন শুনেছে এবং ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কে আইন অনুযায়ী ঋণ সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে। গত ২০০৭ সালে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আলতামাস কবীরের ডিভিশন বেঞ্চের গাইডলাইন মেনে আইন অনুযায়ী ঋণের গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাংক তার পাওনা নেবে।তাই বলে রিকভারি এজেন্টের জুলুমবাজি বরদাস্ত করবেনা আদালত । চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চে বাগুইআটির বাসিন্দা সুচন্দ্রা শীলের দায়ের করা মামলার শুনানি চলে। সেখানে বিচারপতি জানিয়েছেন আদেশনামায় যে – ‘ ঋণ গ্রহিতার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালাতে পারবেনা ব্যাংক নিযুক্ত রিকভারি এজেন্ট।সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে আইন অনুযায়ী ঋণ নেবে ব্যাংক ‘। উক্ত আদেশনামায় বিচারপতি ব্যাংকের রিকভারি এজেন্ট কে ম্যাসলম্যান হিসাবে উল্লেখ করেছেন। মামলাকারীর আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল ও সঙ্গীতা রায় জানিয়েছেন -” গত ২০১৪ সালে কলকাতার বাগুইহাটির বাসিন্দা প্রসাদ শীল বিধাননগরের ইন্ডিয়ান ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে ত্রিশ লক্ষ টাকা ব্যবসায়িক ঋণ নিয়েছিলেন। ২০১৮ সালে জিএসটি নোটবন্দির কারণে আর্থিক মন্দা দেখা যায়। সেসময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষের রিকভারি এজেন্টের দৌরাত্ম্যে তাদের জীবন ক্রমশ বিষময় হয়ে উঠে। ২০১৯ সালে ১৯ জুলাই রেলপথে আত্মঘাতী হন তিনি।এতেও ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কোন মানবিক অবস্থান দেখা যায়নি।উল্টে আরও অত্যাচার বাড়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের। এইরূপ দাবি আত্মঘাতী প্রসাদ শীলের স্ত্রী সুচন্দ্রা শীলের। গতবছর ১১ নভেম্বর সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন এই মহিলা। তাতে কোন পুলিশি সক্রিয়তা পাওয়া যায়নি।অবশেষে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হন তিনি। চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের রিকভারি এজেন্টের জুলুমবাজি নিয়ে কড়া অবস্থান নেয়। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কে সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন মেনে আইন অনুযায়ী ঋণ নিতে বলে।