মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চে এক সরকারি আইনজীবীর দায়ের করা পুলিশি নিস্ক্রিয়তা বিষয়ক মামলার শুনানি চলে।সেখানে পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার পুলিশ বিভিন্ন রিপোর্ট দেখিয়ে উক্ত মামলার সক্রিয়তা বোঝায়।এহেন পুলিশ রিপোর্টে সন্তুষ্ট হাইকোর্ট। তবে মামলাকারী ওই সরকারি আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার আপিল পিটিশনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। মন্তেশ্বর থানার পুলিশ কলকাতা হাইকোর্ট কে লিখিতভাবে জানিয়েছে -‘ বিভিন্ন অভিযোগের ক্ষেত্রে অভিযোগ অনুযায়ী গোপন জবানবন্দি রেকর্ড করেছে।ঠিক তেমনি পরবর্তীতে কোন অভিযোগ এলে তা যথাযথ তদন্ত করবে পুলিশ’। উল্লেখ্য, পুলিশি নিস্ক্রিয়তা প্রায়শই অভিযোগ উঠে। কখনো বিরোধী দলের কর্মীসমর্থক,আবার কখনো বা আমজনতার তরফে। তবে এবার অভিযোগকারী ছিলেন একজন খোদ সরকারি আইনজীবী,অভিযোগকারীর বাবাও একজন সিনিয়র সরকারি আইনজীবী !গতমাসে কলকাতা হাইকোর্টে পুলিশি নিস্ক্রিয়তা নিয়ে রিট পিটিশন দাখিল করেছিলেন পূর্ব বর্ধমান জেলার কালনা মহকুমা আদালতের সরকারি আইনজীবী পার্থসারথি কর মহাশয়। কলকাতা হাইকোর্টে মামলাকারীর আইনজীবী হিসাবে রয়েছেন বিশিষ্ট আইনজীবী বৈদূর্য ঘোষাল। কি এমন ঘটনা যে, কলকাতা হাইকোর্টে সুবিচারের আশায় দারস্থ হয়েছিলেন মহকুমা আদালতের একজন সরকারি আইনজীবী? সংশ্লিষ্ট থানা, ব্লক প্রশাসন থেকে জেলা পুলিশ প্রশাসন কে বারবার লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোন সুরাহা মেলেনি বলে অভিযোগ উঠে। এমনকি নিম্ন আদালতে জমিতে স্থগিতাদেশ থাকা সত্বেও পুলিশ অজ্ঞাত কারনে নীরব। যদিও পুলিশের তরফে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এবং জানানো হয়েছে যে, দুপক্ষেরই অভিযোগগ্রহণ করা হয়েছে। তবে অভিযোগ গ্রহণ করেই দায় সেরেছে মন্তেশ্বর থানার পুলিশ। কলকাতা হাইকোর্টে দাখিল হওয়া রিট পিটিশনে অভিযোগকারী আইনজীবী আবেদন রেখেছিলেন – ‘বেদখল পৈতৃক ভিটাতে ঢুকবার আইনী অধিকার, পাশাপাশি পরিবারের সুনিশ্চিত নিরাপত্তা প্রদান ‘। উল্লেখ্য, এই ঘরোয়া বিবাদে দেওয়ানি এবং ফৌজদারি মামলা ঘটেছে কুড়ির বেশি। জানা গেছে, কালনা মহকুমার মন্তেশ্বর থানার অধীনে বড়ণডালা গ্রামে পৈতৃক ভিটা আইনজীবী পার্থসারথি করের।তাঁর বাবার বড়দার( জ্যাঠার) সৌজন্যে অতিরিক্ত বিশ্বাসের ফলস্বরূপ দাদুর বিশাল সম্পত্তির বেশিরভাগই বেহাত হয়ে যায় বলে অভিযোগ।গত বছরের গত জুলাই মাসে ওই আইনজীবীর পরিবারের দেখভাল করা এক মাসী কে পৈতৃক ভিটা থেকে তাড়িয়ে দেয় অভিযুক্ত জ্যাঠার লোকজন।প্রায় পাঁচ মাস এই পরিস্থিতি চলে। পারিবারিক ভাবে পাওয়া জমিতে ধান কাটতে গেলে মাঠেই হুমকির মধ্যে পড়তে হয়। যদিও সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে অভিযুক্ত পরিবারের তরফে। ২০১৮ সালে জমিগুলির রেকর্ড স্টাটাস দেখতে গিয়ে এই জমি জালিয়াতি সামনে আসে বলে ওই আইনজীবীর দাবি। এই আইনজীবীর পরিবার ত্রিশ বছরের কাছাকাছি কর্মসুত্রে কালনা শহরে বসবাস শুরু করে থাকে। তাতে পৈতৃক ভিটাতে একপ্রকার না থাকাতে এই বিপত্তি ঘটেছে বলে স্থানীয় সুত্রে প্রকাশ। এরপরই কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের সিঙ্গেল বেঞ্চে পূর্ব বর্ধমান জেলার মন্তেশ্বর থানার পুলিশ এই পিটিশনের ভিক্তিতে বিভিন্ন পুলিশি রিপোর্ট জমা দেয়।চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টে এই মামলার শুনানিতে পুলিশ রিপোর্ট দেখে সন্তুষ্ট হয় আদালত। পুলিশের তরফে মন্তেশ্বর থানায় দায়ের করা মামলা গুলির অগ্রগতি সহ আগামীতে মামলাকারী কোন অভিযোগ জানালে তা যথাযথ তদন্ত করবার আশ্বাসও দেয়।এখন দেখার ওই সরকারি আইনজীবী কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গেল বেঞ্চের নির্দেশ কে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ডিভিশন বেঞ্চে আপিল করেন কিনা?