মোল্লা জসিমউদ্দিন,
ডাবলু আনসারী নামটাই যথেষ্ট মঙ্গলকোটে। রাজ্যে ক্ষমতার পালাবদল ঘটলেও মঙ্গলকোটে আট থেকে আশি সবাই চিনে এই ডাবলু আনসারী কে।একদা মঙ্গলকোটের ‘মুকুটহীন সম্রাট’ হিসাবে পরিচিত ছিলেন এই রাজনৈতিক নেতা।যদিও এই নেতা গত ২০১০ সাল থেকেই এলাকাছাড়া।শাসক দল তৃণমূলের দুচোখের বিষ বলা যায় ডাবলু কে।বছর খানেক আগে মায়ের মৃত্যুতে কবরের মাটি দেওয়ার ‘নসিব’ মিলেনি ডাবলুর।সৌজন্যে পুলিশ রিপোর্ট। কেননা ডাবলু মঙ্গলকোটে এলে অশান্তি হতে পারে বলে রিপোর্ট ছিল পুলিশের। গত বিধানসভা নির্বাচনের পর মঙ্গলকোটের নুতনহাট সংলগ্ন অজয় নদের লোচনদাস সেতুর পাশে মাঠে বিজেপিতে যোগদান করার কথা ছিল তৎকালীন কেন্দ্রীয় নেতা রাহুল সিনহার হাত ধরে।শাসক দলের চোখরাঙানী উপেক্ষা করেও বিশহাজারের বেশি ডাবলু আনসারীর অনুগামী এসেছিল সেই সভায়। দলবদল তখন হয়নি, তবে গাঁজা পাচার মামলায় প্রাপ্তিযোগ ঘটেছিল ডাবলুর।বিগত বাম জমানায় পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার গড়বেতায় যেমন তপন – সুকুর জুটি কে চিনতো রাজ্যবাসী। ঠিক তেমনি পূর্ব বর্ধমান এবং বীরভূমের একাংশ জানতো ডাবলু – বাবলুদের কে।থানার সেসময়কার ওসিরা ‘স্যার’ সম্বোধন করতেন ডাবলু আনসারী কে। এইরুপ শোনা যায় পুলিশের একাংশ মহল থেকে।কেননা মঙ্গলকোটের অজয় নদের বেআইনী বালিঘাটের নিয়ন্ত্রক ছিল এই দুই ভাই। ব্লকের সমস্ত টেন্ডার হত এদের হাত ধরেই। বামেদের সমস্ত সভা সমাবেশের খরচ নাকি এরাই বহন করত সেসময়। পুলিশের বিভিন্ন সাহেবেরও প্রিয়পাত্র ছিলেন এই ডাবলু আনসারী! ভোট লুটের সমস্ত পদ্ধতিতে সিদ্ধহস্ত এই জুটি।তবে গরীব মানুষদের চিকিৎসা থেকে বিয়ের খরচ বহন করে সুনামও অর্জন করে গেছেন ডাবলু আনসারী। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে টানা দশ বছরের বেশি গ্রামছাড়া থাকার পর সম্প্রতি বিজেপির রাজ্য দপ্তরে সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত ধরে বিজেপি পতাকা নেন একদা বাম নেতা ডাবলু আনসারী। বিজেপিতে যোগদানের দুদিনের মধ্যেই আউশগ্রাম থানার পুলিশ ডাবলু আনসারীর ভাই বাবলু আনসারী কে অস্ত্র আইনে গ্রেপ্তার করে থাকে। এলাকাবাসীদের একাংশ জানাচ্ছেন – “এহেন পুলিশি সন্ত্রাস একদা করতেন ডাবলু – বাবলু।তাই হয়তো এটি তারই পরিণতি “। তর্ক বিতর্ক যাই হোক, মঙ্গলকোটে বিজেপি কে জিততে গেলে সংখ্যালঘু প্রার্থী আবশ্যিক। কেননা এই বিধানসভা কেন্দ্রটি এমএসডিপি হিসাবে চিহ্নিত। তাই মুসলিম ভোট পেতে গেলে সংখ্যালঘু প্রার্থী চায়। তাছাড়া এই মঙ্গলকোটের তৃণমূলের পর্যবেক্ষক হলেন অনুব্রত মন্ডল মহাশয়। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন সর্বদা তটস্থ থাকে এখানে বলে শোনা যায়। তাই একদা পুলিশ ও প্রশাসনের মধ্যে যোগসূত্রকারী ডাবলু আনসারী কে প্রার্থী করলে বিজেপির পক্ষে লড়াই জমজমাট হয়ে উঠবার সম্ভাবনা প্রবল।এই কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন ব্লক তৃণমূল সভাপতি অপূর্ব চৌধুরী মহাশয়। যিনি গত ২০১১ সালে প্রবল পরিবর্তনের হাওয়াতেও দলীয় অন্তর্ঘাতে হেরেছিলেন।এবার অর্থাৎ চলতি বিধানসভা নির্বাচনে শাসক দলের অন্তর্ঘাত আরও জোরালো। মঙ্গলকোটে সংযুক্ত মোর্চার তরফে বাম প্রার্থী হয়েছেন প্রাক্তন বিধায়ক শাহাজাহান চৌধুরী মহাশয়। যিনি গত ২০১১ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত বিধায়ক তহবিলে উন্নয়ন করে রাজ্যের সেরা বিধায়কদের মধ্যে ছিলেন। তাই শাসক দলের তৃণমূল প্রার্থী কে রীতিমতো টেক্কা দেওয়ার লড়াইয়ে রয়েছেন সংযুক্ত মোর্চার এই বাম প্রার্থী। তবে একদা দাপুটে বাম নেতা ডাবলু আনসারী কে বিজেপি দলীয় প্রার্থী করলে ‘খেলা’ জমজমাট হওয়ার সম্ভাবনা বহুগুণ বেড়ে যাবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। একাধারে বামেদের ভোটব্যাংকে থাবা, তারউপর শাসক দলের আভ্যন্তরীণ বিবাদ কে পুঁজি করে রাজনৈতিক ময়দান কাঁপাতে পারেন ডাবলু।সর্বপরি সংখ্যালঘু ব্লক হিসাবে পরিচিত মঙ্গলকোটে মুসলিম ভোটে ভালোমতন হানা দিতে পারেন ডাবলু আনসারী। সাম্প্রতিক সময়কালে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের হাত থেকে গেরুয়া পতাকা নেওয়ায় ডাবলুর ভাগ্যে প্রার্থীপদ থাকতেও পারে।যাইহোক, মঙ্গলকোটে সাইফুল মুন্সি, আলাউদ্দিন সেখ এবং হাসমত সেখ খুনের ঘটনায় ডাবলুর ভূমিকা অনেকেই ভুলিনি। তবে বেশিরভাগ অভিযুক্তদের শাসক দল তৃণমূল তাদের মিটিং মিছিলে প্রথম সারিতে রাখায় শাসক দলের চাপা স্রোত বইছে দুর্দান্ত গতিতে।