পথদুর্ঘটনা রোধে ‘রাতদিন’ কাজ করে চলেছেন ভাতারের কামালউদ্দিন
মোল্লা জসিমউদ্দিন, আমিরুল ইসলাম ,
চোখের সামনে পথদুর্ঘটনায় এক ব্যক্তির মৃত্যুর যন্ত্রণা সে দেখেছিল।তাই সেই থেকে রাস্তায় দুর্ঘটনায় প্রাণহানি বাঁচাতে সে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।তাই প্রতিদিন পাকা রাস্তায় পড়ে থাকা কাদা, ইট, বালির স্তুপ দেখলে পেলেই সরিয়ে দেয় এক টোটোচালক।কোন কিছু পাওয়ার আশায় নয়, কিংবা কোন সংবর্ধনা পাওয়ার লোভে নয়।বিবেকের কাছে সে এইভাবেই প্রতিদিন কাজ করে যেতে চায় মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ।পূর্ব বর্ধমান জেলার ভাতারের কালুত্তক এলাকার টোটোচালক সেখ কামালউদ্দিন এখন স্থানীয়দের কাছে গর্বের মানুষ ।পথ দুর্ঘটনা রুখতে ভাতারের এই টোটো চালকের মানবিক উদ্যোগে খুশি পুলিশ থেকে প্রশাসন । পথ দুর্ঘটনা এক পরিচিত শব্দ। প্রতিবছর দুর্ঘটনায় অসংখ্য মানুষের প্রাণ যায়। সরকারিভাবে এই পথদুর্ঘটনা কে রুখতে ‘সেভ ড্রাইভ সেফ লাইফ’ কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। এতেও কিন্তু দুর্ঘটনা রোখা যায় নি কারণ একটাই মানুষ এখনও অসচেতন।সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে ভাতারের কালুত্তক গ্রামের এক টোটো চালক শেখ কামাল উদ্দিন যে পথ দেখাল, তাতে করে এলাকার মানুষ সাধুবাদ জানিয়েছেন শেখ কামাল উদ্দিন কে ।কিছুদিন আগে ভাতারের নর্যা বাসস্টান্ডের কাছে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গিয়েছিলেন বর্ধমান আদালতের এক আইনজীবী।কারণ, রাস্তার উপরে পড়ে থাকে কাদা। যার ফলে স্লিপ কেটে গেয়েছিল এবং তিনি মোটরসাইকেল থেকে পড়ে গিয়েছিলেন বাসের চাকায়। ঘটনাস্থলেই প্রাণ গিয়েছিল ওই আইনজীবীর।এই ঘটনা কালুত্তকের শেখ কামাল উদ্দিন দেখেছিলেন। তখন থেকেই তিনি এক নতুন সংকল্প নিয়েছিলেন যে, রাস্তার ওপর কাদা,ইট, বালির স্তুপ পড়ে থাকলে সময় পেলেই তা আমি সরিয়ে ফেলবে।এই কাদা মূলত মাঠ থেকে আসা ট্রাক্টরের চাকা থেকে পাকা রাস্তায় আসে।পেশায় টোটোচালক ‘দিন আনে দিন খায়’ জীবনে অভ্যস্ত। তবে মনের দিক থেকে তিনি বড় মানুষ।রাস্তায় পড়ে থাকা কাদা তিনি কুড়িয়ে নিয়ে টোটো চাপিয়ে ফাঁকা স্থানে ফেলছেন।সেই ছবি ধরা পড়লো আমাদের ক্যামেরায়। প্রশ্ন করতেই শেখ কামাল উদ্দিন জানান, -‘এই রাস্তায় কাদা থাকার ফলে একটু বৃষ্টি হলেই দারুন পথ দুর্ঘটনা ঘটছে। তাই আমি সময় পেলেই ওই কাদা রাস্তা থেকে সরিয়ে দিচ্ছি। আমাকে কেউ বলে নি। আমি নিজে হতেই এই কাদা সরিয়ে দিচ্ছি ।যদি একটু পথদুর্ঘটনা কম হয়’।মুরাতিপুর গ্রামের বাসিন্দা শেখ মুক্তার জানান, -‘ভাতারের বাদশাহী রাস্তার উপর পড়ে থাকা কাদামাটি কালুত্তকের শেখ কামাল উদ্দিন সরিয়ে দিচ্ছেন ।উনার এই ভাবনাকে আমরা সাধুবাদ জানাই। এরকম লোক আছে বলে পৃথিবী এখনও সুন্দর আছে’।ভাতার থানার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ আধিকারিক প্রণব কুমার ব্যানার্জি জানান -‘আমি বিষয়টা শুনলাম সত্যিই অনেক বড় মনের মানুষ’।সবমিলিয়ে ভাতারের কালুত্তকে গ্রামে টোটো চালক শেখ কামাল উদ্দিন এখন চায়ের দোকানে চর্চার বিষয়।