খায়রুল আনাম,
উদ্বিগ্ন বীরভূম জেলা প্রশাসন
সেফ হোমে আড়াইশো শয্যা থাকলেও রোগী মাত্র চৌত্রিশ জন
করোনা সংক্রমিত রোগীদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পরিষেবা দিতে বীরভূম জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর সমস্ত ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জেলায় লাফিয়ে লাফিয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সরকারী হাসপাতালগুলিতে নিকট ভবিষ্যতে রোগীদের স্থান সঙ্কুলান হবে না ধরে নিয়ে, বিভিন্ন বেসরকারী হাসপাতাল, নার্সিংহোম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে জেলা প্রশাসন এবং জেলা স্বাস্থ্য দফতর সেইসব জায়গায় সেফ হোম তৈরী করে চলেছে। একই এলাকার রোগীদের এলাকার সেফ হোমে রাখা সম্ভব না হলে, তাঁদের অন্য এলাকার সেফ হোমে স্থানান্তরিতও করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে জেলা বীরভূমের ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা লাগোয়া ২ টি সেফ হোমে সমস্ত ধরনের পরিকাঠামো থাকা সত্বেও রোগী ভর্তি না হওয়ায় রীতিমতো উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে জেলা প্রশাসন ও জেলা স্বাস্থ্য দফতর। এই ২টি সেফ হোমে ভর্তি হয়েছেন মাত্র ৩৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। অথচ, ওই ২ টি এলাকাতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নেহাৎ কম নয়। ২টি সেফ হোমের একটিতে ১৫০ টি ও অন্যটিতে ১০০টি অর্থাৎ, মোট ২৫০টি শয্যা থাকা সত্বেও রোগী ভর্তি রয়েছেন মাত্র ৩৪ জন। করোনার প্রথম ধাপে মৌমিতা গোদারা বসু জেলাশাসক থাকাকালীন সময়ে পরিত্যক্ত দুবরাজপুরের নিরাময় যক্ষ্মা হাসপাতালকে ঢেলে সাজিয়ে এখানে করোনা আক্রান্তদের জন্য ১৫০ শয্যার সেফ হোম তৈরী করা হয়। এখানে বর্তমানে রয়েছেন মাত্র ২৫ জন। অপর দিকে মুরারই–১ ব্লকের রাজগ্রাম সংলগ্ন আম্ভুয়া গ্রামে সরকারী মডেল স্কুলে যে ১০০ শয্যার সেফ হোম তৈরী করা রয়েছে সেখানে রয়েছেন মাত্র ৯ জন। ঝাড়খণ্ড রাজ্য সীমানা লাগোয়া এই এলাকাটি পাথর শিল্পাঞ্চল হিসেবে চিহ্নিত। এই এলাকার সঙ্গে ঝাড়খণ্ড রাজ্যের মানুষের সরাসরি যোগাযোগ রয়েছে। প্রতিদিন দুই রাজ্যের শ্রমিকরা এখানে আসেন জীবিকার টানে। তাই এই এলাকাটিকে স্বাস্থ্যগত দিক থেকে যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে দেখা হয়। এখানকার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে প্রতিদিন যাঁরা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাতে আসছেন তাঁদের মধ্যে প্রতিদিন গড়ে দশ থেকে কুড়ি জন করোনা আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে। এ জন্য এখানকার করোনা কেন্দ্রে একজন চিকিৎসক, তিনজন নার্স ও চারজন স্বাস্থ্যকর্মী রাখা হয়েছে। এমন কী, বাড়ী থেকে করোনা সংক্রমিত কাউকে এখানে নিয়ে আসার জন্য অ্যাম্বুলেন্সেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। রাখা হয়েছে অক্সিজেন ও পর্যাপ্ত চিকিৎসা সরঞ্জাম। এখানে যাঁরা থাকছেন তাঁদের প্রয়োজনীয় খাদ্য, গরম জল, সকালে–বিকালে গোলমরিচ গুঁঁড়ো দিয়ে চা–এসবও দেওয়া হচ্ছে। এখানকার রোগীদের স্বাস্থ্য রিপোর্টও বাইরের বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু করোনা আক্রান্তরা সেফ হোমে না আসার জন্য চিন্তা বেড়েছে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য দফতরের। দিন আনা, দিন খাওয়া এখানকার করোনা সংক্রমিত মানুষজনেরা জীবিকার তাগিদে সংক্রমিত হওয়া সত্বেও যদি অন্যদের সঙ্গে কাজকর্ম করেন তাহলে তাঁদের সংস্পর্শে আসা অন্যরাও করোনা সংক্রমিত হতে পারেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হচ্ছে। সরকারী নীতিতে করোনা আক্রান্ত কাউকে জোর করে সেফ হোমে আনা বা রাখা যাবে না। তাই জেলা প্রশাসন এবং স্বাস্থ্য দফতর এখন আশা কর্মীদের কাজে লাগিয়ে করোনা সংক্রমিতদের সরকারী সেফ হোমে আনার উপরে জোর দিতে শুরু করেছে ।।