মোল্লা জসিমউদ্দিন টিপু,
মারণ ভাইরাস করোনা আবহে দেড় বছর সময়কালে একপ্রকার বেকার বলা যায় রাজ্যের সিংহভাগ আইনজীবী। ষাট হাজারের বেশি নথিভুক্ত আইনজীবী যেমন পেশাগতভাবে বিপন্ন, ঠিক তেমনি মারণ ভাইরাস করোনায় শতাধিক আইনজীবী প্রয়াণে শোকস্তব্ধ। কলকাতা হাইকোর্ট সহ শহরতলীর বিভিন্ন আদালত সেইসাথে জেলা ও মহকুমা আদালতগুলিতে একের পর এক আইনজীবী মারা যাচ্ছেন করোনা পজিটিভ হয়ে।কলকাতা হাইকোর্ট এর কয়েকজন প্রাক্তন বিচারপিতি, প্রাক্তন জেলাজজ সহ সিজেএম পদমর্যাদাপূর্ণ বিচারকও মারা পড়েছেন এই মারণ ভাইরাস করোনা তে।আর নিহত আইনজীবীদের সংখ্যাটা ক্রমশ দীর্ঘ। আলিপুর জজকোর্ট এবং পুলিশকোর্টের শঙ্করশন রায়, ভাস্কর সেন,কৌশিক মুখার্জি, রীতা মন্ডলদের মত আইনজীবীরা যেমন মারা গেছেন। ঠিক তেমনি হাওড়া জেলাকোর্টের মহুয়া সেন,সেখ হায়দার আলী, রথীন চক্রবর্তী প্রমুখ আইনজীবী মারা গেছেন।কলকাতা হাইকোর্টের শুভাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়, ব্যাংকশাল আদালতের তন্ময় কুমার দত্ত,শীতেষ দত্ত চৌধুরী, প্রমুখ মারা গেছেন। জঙ্গীপুর কোর্ট,মুর্শিদাবাদ, তমলুক, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান প্রভৃতি জেলা ও মহকুমা আদালতে গড়ে পাঁচের বেশি আইনজীবী মারা পড়েছেন এই মারণ ভাইরাস করোনাতে। টানা দেড় বছরের বেশি সময়কালে আদালত একপ্রকার ‘অচল’ বলা যায়।যেখানে মক্কেলদের দেখা নাই,সেখানে রোজগার আর কোথায়? তারউপর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আইনজীবী মারা গেলে সেই পরিবারের দুবেলা দুমুঠো ভাত জুটানো অত্যন্ত দুস্কর।তাই আইনজীবীদের বড় অংশ একাধারে যেমন রাজ্য সরকারের কাছে আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছে, ঠিক তেমনি বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের মুখাপেক্ষী তাঁরা।কলকাতা হাইকোর্টের স্বনামধন্য আইনজীবী বৈদুর্য্য ঘোষাল জানিয়েছেন -” কর্ণাটক বার কাউন্সিল যেমন করোনা আক্রান্ত আইনজীবীদের জন্য দশ হাজারের এককালীন সাহায্য এবং হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য পঁচিশ হাজার টাকার সাহায্য ঘোষণা করেছে।ঠিক তেমনি আমাদের রাজ্যের বার কাউন্সিল সেই ভূমিকা গ্রহণ করুক”। বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান শ্যামল ঘটক জানিয়েছেন – ” আমরা কর্ণাটক বার কাউন্সিলের আগেই করোনা আক্রান্ত আইনজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছি।তবে কোন আইনজীবী আক্রান্ত হলে তাঁর করোনা পজিটিভ রিপোর্ট সহ লিখিত আবেদন জানাতে হবে। এছাড়া নিহত আইনজীবীর পরিবারকেও লিখিত আবেদন জানাতে হবে আর্থিক সহযোগিতার জন্য”। বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের পক্ষে আনসার মন্ডল জানিয়েছেন – ” আমরা বিধানগরে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের গেস্ট হাউসে চেয়েছিলাম করোনা আক্রান্ত আইনজীবীদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টার হিসাবে।সেখানে প্রতিবেশীদের আপত্তিতে তা হয়নি।তবে করোনা আক্রান্ত আইনজীবীদের চিকিৎসার জন্য সেন্টার গড়ার কথা হচ্ছে”। জানা গেছে, সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী কল্লোল বসু কে সাথে নিয়ে বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের সদস্য আনসার মন্ডল বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান অশোক দেবের কাছে গিয়েছিলেন সম্মত্তি নিতে।কলকাতা হাইকোর্ট থেকে এক কিমি দূরে অবস্থান করছে এই প্রস্তাবিত কোভিড কেয়ার সেন্টার টি।সেইসাথে করোনা আবহে ‘অভাবী’ আইনজীবীদের ৩ হাজার টাকা গড়ে সর্বমোট ৫ কোটি টাকা সাহায্য করেছিল বার কাউন্সিল বলে জানা গেছে । সেইসাথে কলকাতা হাইকোর্টের বার এসোসিয়েশনের পক্ষে বিত্তশালী আইনজীবীরা চাঁদা তোলে অভাবী আইনজীবীদের পাশে দাঁড়িয়েছিল একসময়। তবে তা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।এই মুহূর্তে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে ষাট হাজারের বেশি নথিভুক্ত আইনজীবী রয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্ট থেকে বিভিন্ন নিম্ন আদালতে তাঁরা পেশাগতভাবে যুক্ত।বিগত দেড় বছরে তাঁরা একপ্রকার কর্মহীন বলা যায় মারণ ভাইরাস করোনার বাড়বাড়ন্তে।কেননা আদালত গুলি ভার্চুয়াল শুনানিতে জোর দিয়েছে করোনার সংক্রমণ এড়াতে। শুধুমাত্র জামিনের আবেদন ছাড়া অন্য কোন শুনানি চলছেনা নিম্ন আদালত গুলিতে।আইনজীবীদের সুত্র মারফত প্রকাশ, তিন হাজারের বেশি আইনজীবী করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন একশোর বেশি আইনজীবী। একেই কর্মহীন তার উপর ব্যয়বহুল করোনার চিকিৎসায় সর্বশান্ত তাঁরা। তাই আইনজীবীদের বড় অংশের দাবি – আক্রান্ত আইনজীবীদের চিকিৎসায় এবং নিহত আইনজীবীদের পরিবারের উপর আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিক রাজ্য সরকার ও বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল।আইনজীবীদের এক সংগঠন আইনজীবিদের আর্থিক সহযোগিতার হাত বাড়াতে বার কাউন্সিল কে আবেদনও করে থাকে।আইনজীবীদের রেজিষ্ট্রেশন থেকে ল কলেজ থেকে যা আর্থিক আয় হয়, তাতে এহেন অতিমারী পরিস্থিতিতে আইনজীবীদের সহযোগিতা করা উচিত বলে অনেকেরই দাবি।অনেকেই বার কাউন্সিল অফ ওয়েস্ট বেঙ্গলের ইমেলে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন বলে জানা গেছে।