বিচারবিভাগ নিয়ে সাংসদ অভিষেকের মন্তব্য, স্বতঃস্ফূর্ত মামলা খারিজ হাইকোর্টে

Spread the love

বিচারবিভাগ নিয়ে সাংসদ অভিষেকের মন্তব্য, স্বতঃস্ফূর্ত মামলা খারিজ কলকাতা হাইকোর্টে,

মোল্লা জসিমউদ্দিন, 

সোমবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্য এর এজলাসে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলার আবেদন খারিজ করে দিল আদালত । বিচার ব্যবস্থার একাংশের বিরুদ্ধে মন্তব্য করে বিতর্কে চলে এসেছিলেন  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। ডায়মন্ডহারবার  সাংসদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে মামলা দায়ের করার অনুমতি চেয়ে পিটিশন দাখিল করেছিলেন দুই আইনজীবী ।প্রসঙ্গত, গত শনিবার পূর্ব মেদিনীপুর জেলার হলদিয়ায় এক রাজনৈতিক  সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে বিচার ব্যবস্থার একাংশকে নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রকাশ্য সভায় জানিয়েছিলেন , –  ‘আমার বলতেও লজ্জা লাগে, বিচার ব্যবস্থায় একজন দু’জন এমন আছেন যাঁরা যোগসাজশে কাজ করছেন তল্পিবাহক হিসেবে। কিছু হলেই সিবিআই দিয়ে দিচ্ছে। মার্ডার কেসে স্টে দিয়ে দিচ্ছে, ভাবতে পারেন! আপনি অভিযুক্তকে নিরাপত্তা দিতে পারেন। কিন্তু মামলায় স্টে দিতে পারেন না।’  বিচার ব্যবস্থাকে নিয়ে অভিষেকের  এই মন্তব্য করা নিয়ে আদালতকে অপমান করা হয়েছে বলে দাবি আইনজীবীদের একাংশের। তৃণমূল সাংসদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়েরের অনুমতি চেয়েছিলেন দুই আইনজীবী। বিষয়টিতে কলকাতা  হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন আইনজীবীরা। তবে দুই আইনজীবীর  এই আবেদনে সাড়া দিল না কলকাতা হাইকোর্ট।ইতিপূর্বে বিচার ব্যবস্থাকে কাঠগড়ায় তুলে তৃণমূল সাংসদের করা মন্তব্যের বিরুদ্ধে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। মুখ্যসচিবকে এব্যাপারে যথোপযুক্ত পদক্ষেপ করারও নির্দেশ দিয়েছেন রাজ্যপাল। গত রবিবার নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কে নিয়ে ধনকড় বলেন,- ‘একজন সাংসদ সব সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন। বিচার ব্যবস্থাকে আক্রমণ করাটা বিপজ্জনক প্রবণতা। মুখ্যসচিবকে পদক্ষেপ করতে বলেছি।’যদিও থেমে নেই  অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। রাজ্যপালের সেই মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই টুইটে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেন অভিষেকও। গত রবিবার  রাতে টুইটে ডায়মন্ডহারবারের তৃণমূল সাংসদ লেখেন,-  ‘আমি সবসময় ক্ষমতাসীনের কাছেও সত্য কথা বলায় বিশ্বাসী। আমি বলেছিলাম যে কিছু ব্যক্তিকে রক্ষা করার জন্য কীভাবে কলকাতা হাইকোর্টের এক শতাংশ কেন্দ্রের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করছে। লোকেরা দেখছে, তাঁরা জানেন কে আসলে চূড়ান্ত সীমা অতিক্রম করছে’।গত শনিবার হলদিয়ার সভা থেকে বিচার ব্যবস্থা নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। যেখানে তিনি জানিয়েছিলেন, – ‘আমার বলতে লজ্জা লাগে বিচারব্যবস্থায় একজন – দুজন  এমন আছেন, যাঁরা সম্পূর্ণ যোগসাজশে তল্পিবাহক হিসাবে কাজ করছেন।১ শতাংশ হবে। কিছু হলেই সিবিআই দিচ্ছে। খুনের মামলায় স্থগিতাদেশ দিচ্ছে। শুনেছেন কোনওদিন?’  এই মন্তব্য ঘিরে  কলকাতা হাইকোর্টের  বিচারপতি সব্যসাচী ভট্টাচার্যের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন দুজন আইনজীবী। স্বতপ্রণোদিত মামলা গ্রহণের আর্জি জানানো হয়েছিল। আদালত অবমাননার অভিযোগ করেছিলেন ওই আইনজীবীরা। তবে শেষপর্যন্ত অভিষেকের  বিরুদ্ধে মামলা খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্ট।অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা খারিজ করে দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। হাইকোর্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,-   ‘অবমাননার মামলা করার দরকার আছে বলে, মনে করছে না আদালত’। বিচারপতিদের ১% বলতে কাকে নির্দেশ করেছেন অভিষেক? এই প্রশ্ন করা হয়েছে আদালতে। বিচারপতি এদিন এজলাসে  প্রশ্ন করেছেন, -‘ বিচারপতিদের ১% বলতে কী বোঝানো হয়েছে? একজন সাংসদ বললেন বলেই ধরে নিতে হবে, তেমন ব্যাপার নয়। কাকে উদ্দেশ্য করে তিনি ১ শতাংশ বলেছেন? তা স্পষ্ট নয়’। আদালতের পক্ষ থেকে আরও জানানো হয়েছে, -‘ কলকাতা হাইকোর্টে ৪১ জন বিচারপতি রয়েছেন। তাই কাকে উদ্দেশ্য করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মন্তব্য করেছেন? তা আগে স্পষ্ট হওয়া দরকার। ১% বলে কোন কিছু হয় না’। এরপরই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা খারিজ করে দেয় কলকাতা হাইকোর্ট। তবে এদিন কলকাতা হাইকোর্টের সব্যসাচী ভট্টাচার্যের এজলাসের পক্ষে   জানানো হয়, -‘ জনপ্রতিনিধিদের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে এধরনের মন্তব্য করা উচিত নয়। মন্তব্য করার আগে চিন্তাভাবনা করা উচিত ছিল’। সোমবার এই মামলা খারিজ করা হলেও আদালতের জনপ্রতিনিধিদের প্রতি পর্যবেক্ষণ টি যথেষ্ট গুরত্বপূর্ণ বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *