শিক্ষকতায় চাকরির নিয়োগপত্র পেলেও ‘সহযোদ্ধা’ আন্দোলনকারীদের জন্য খুশি নয় সোমা দাস,
ওয়াসিম বারি ,
এসএসসি নিয়োগে হাজার অভিযোগের মাঝে একটি মানবিকতার নজির রেখেছে রাজ্য।তা হলো কলকাতা হাইকোর্টের অনুরোধে সাড়া দিয়ে ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সোমা দাস কে দ্রুত চাকরির নিয়োগপত্র তুলে দেওয়া। এসএসসিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে বেনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সোমা দাস তার শারীরিক অসুস্থতাকে কখনও শিক্ষক হওয়ার স্বপ্নের মাঝে বাধা হয়ে দাঁড়াতে দেননি, তার মানসিক শক্তি এবং সহযোদ্ধা আন্দোলনকারীদের মত সহবস্থান রাজ্যবাসীর মন কে দাগ কেটে দেয়।নিজেকে যোগ্য প্রার্থী দাবি করে ন্যায্য অধিকারের লড়াইয়ে অনড় তিনি।অবশেষে স্বপ্ন পূরণ সোমা দাসের । ক্যান্সার আক্রান্ত এই চাকরিপ্রার্থীকে সাত দিনের মধ্যে চাকরির ব্যবস্থা করে দেওয়ার নির্দেশিকা পেয়েছিল স্কুল শিক্ষা দপ্তর। এর পরেই অবশেষে তিনি নিয়োগের সুপারিশ পান বলে জানা গেছে। চাকরিপ্রার্থী সোমা ক্যান্সার আক্রান্ত এই খবর গিয়ে পৌঁছায় কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের কাছে । তাঁর এজলাসেই শিক্ষক নিয়োগের প্রায় মামলা চলছে। সম্প্রতি বিচারপতি সোমার কথা জানার পরেই তাকে হাইকোর্টে ডেকে পাঠান নিজের এজলাসে ।সোমা অন্য কোন সরকারি চাকরি করতে ইচ্ছুক কিনা প্রশ্ন করেছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। তব্র সেই উত্তরে সোমা স্পষ্ট জানিয়েছিল , -‘ সে যোগ্যপ্রার্থী, তাই শিক্ষকতাই করতে চায় । চাকরির আন্দোলন থেকে কোনোভাবেই সরে যাবে না সে।এই লড়াই চলবে কারণ তাদের মনে আশা জাগিয়েছেন বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় স্বয়ং ‘। এরপর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় স্কুল শিক্ষা দপ্তরের সচিবকে মানবিক দিক দিয়ে বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ দেন। সোমা দাসকে সহকারী শিক্ষক পদে কোনভাবে নিয়োগ করা যাবে কিনা? এতে দ্রুত সাড়া দেয় রাজ্য। সোমা দাস এর রোগের চিকিত্সা করার জন্য প্রায় ১৫ লক্ষেরও বেশি টাকার প্রয়োজন । তাই তাকে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ করার জন্য বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। অবশেষে বীরভূমের নলহাটি ১ ব্লকের মধুরা হাইস্কুলে বাংলা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হল সোমা দাস কে। তবে সোমা দাস বলেন, – ‘আমি খুশি নই। বিশ্বাস করুন, একেবারে খুশি নই। আমরা যাঁরা বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তায় বসে আন্দোলন করছি, তাঁদের সবাইকে চাকরি দেওয়া হলে খুশি হতাম। আমাদের চাকরি চুরি করে অন্যদের দেওয়া হয়েছে। এই চাকরি তো আমাদের প্রাপ্য ছিল! আমি সত্যি না মিথ্যা বলছি, এসএসসি-র চেয়ারম্যান বলতে পারবেন। তালিকায় আমার নাম আগে থাকা সত্ত্বেও অন্যকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। দিনের পর দিন অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিলাম। আমার পাশে তখন কেউ ছিল না। শান্তি পেয়েছিলাম এই আন্দোলনের মঞ্চে এসে। এঁরা লড়াইয়ের সাথী ছিলেন। আন্দোলনরত সকলের চাকরি হলে খুব খুশি হতাম।’ তবে নিজে চাকরি পেলেও বাকিদের জন্য আন্দোলন চালিয়ে যাবেন বলেও জানিয়েছেন সোমা।উল্লেখ্য বীরভূমের নলহাটির বাসিন্দা সোমা রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত। তা সত্ত্বেও তিনি ২০১৯ সাল থেকে এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছেন। চলতি বছরের গত ১৩ এপ্রিল সোমাদাস কে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিত্ গঙ্গোপাধ্যায় শিক্ষকতার চাকরির বদলে অন্য সরকারি চাকরি গ্রহণের প্রস্তাব দেন। তবে সোমা সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন। পরে বিচারপতি তাঁকে জানান, -‘ ভবিষ্যতে যদি সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার কোনও শূন্যপদ থাকে, তবে সোমাকে তা দেওয়া হবে। এর পরই হাইকোর্টের নির্দেশ মেনে সোমা দাস কে চাকরির নিয়োগপত্র পাঠিয়েছে এসএসসি কর্তৃপক্ষ ।ব্ল্যাড ক্যান্সারে আক্রান্ত সোমা দাসের কাছে এই চাকরি টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার শারীরিক চিকিৎসার খরচের জন্য।