একাই রথ টানল শিশু স্পন্দন,
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
রথের দিন পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ মেতে উঠেছে রথযাত্রা উৎসবে। কোথাও আছে ঐতিহ্যবাহী বিশাল রথ। কোথাও ক্লাব বা গ্রাম থেকে মিলিত ভাবে বাজনা সহকারে বের হচ্ছে রথের শোভাযাত্রা। প্রতিটি শোভাযাত্রার যাত্রাপথে ভক্তরা রথ নিয়ে আসার আগেই মানুষের ভিড় উপচে পড়ছে। রথের দড়িতে টান দেওয়ার জন্য মানুষের আকুলতা চোখে পড়ার মত। কখনো সেখানে রাজনীতির অথবা অন্য জগতের সেলিব্রিটিদের দ্যাখা যায়। তাদের দেখার জন্যও সাধারণ মানুষের আগ্রহ চরমে ওঠে।
কিন্তু কলকাতার মুকুন্দপুরের শতাব্দী পার্কের মা-বাবার একমাত্র সন্তান ছয় বছরের স্পন্দনের রথের শোভাযাত্রায় নাই কোনো বাজনা, নাই কোনো ভিড়। বাহ্যিক জৌলুস না থাকলেও সেদিকে তার কোনো ভ্রূক্ষেপ নাই। আপনমনে ছোট্ট স্পন্দন এলাকাবাসীর মনে বিষ্ময়ের স্পন্দন সৃষ্টি করে রথের দড়ি টানতে টানতে এগিয়ে চলেছে পাড়ায়।
স্পন্দনের মা-বাবা অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত। পেশাগত কারণের জন্য তাদের সেভাবে কাছে পায়না স্পন্দন। স্বাভাবিক ভাবেই দাদাই (দাদু) অমূল্যচন্দ্র সরকারকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তার জগত। সেখানে প্রবেশের অধিকার নাই কারও। অনভ্যস্ত হাতে দাদু-নাতি মিলে তৈরি করে ফেলে ছোটখাটো একটা রথ। আপাত দৃষ্টিতে বিবর্ণ লাগলেও সেই রথ নিয়েই মনের আনন্দে কার্যত সকালবেলায় পাড়ায় বেরিয়ে পড়ে 'একালের যিশু' শিশু স্পন্দন। হাজার রথের ভিড়েও এই রথ হারিয়ে যায় না।
অমূল্য বাবু বললেন - পেশাগত কারণে আমার ছেলে বা বৌমা আমার নাতিকে সেভাবে সময় দিতে পারেনা। ফলে আমাদের দু'জনের মধ্যে গড়ে উঠেছে নিজস্ব জগত। নাতির আব্দারে দু'জনে মিলে তৈরি করলাম রথ। ভাল-খারাপ যাইহোক না কেন আমার নাতি আনন্দ পেয়েছে এটাই বিশাল। শিশুসুলভ আনন্দে মানুষটির চোখের কোণ চিকচিক করে ওঠে।