ছাত্রছাত্রীদের জন্য খাদ্য সংক্রান্ত সচেতনতামূলক সেমিনার হলো বর্ধমানের বিদ্যালয়ে
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
আদরের শিশু কন্যা সন্তান মায়ের কাছে এসে ভীতসন্ত্রস্ত কণ্ঠে বলছে - মা ওই 'কাকু'টা যখন আমাকে জড়িয়ে ধরে আদর করছিল খুব অস্বস্তি লাগছিল। খুব চেনা ছবি। ভবিষ্যত প্রজন্মের স্বার্থে হবু পাত্র-পাত্রীর রক্তে থ্যালাসেমিয়ার কোনো চিহ্ন আছে কিনা সেটা জানার জন্য বিয়ের আগে ঠিকুজি-কুষ্ঠি দেখার পরিবর্তে রক্ত পরীক্ষা যে জরুরি সেটা অনেকেই জানেনা। কম দৃষ্টিশক্তির জন্য পড়তে বসে শিশু সন্তান বারবার ভুল পড়ছে অভিভাবকরা সেটা বোঝার চেষ্টা করেনা। তাদের ধারণা তার সন্তান পড়াশোনায় অমনোযোগী। অথবা
আদরের আট বছরের সন্তানকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শে রক্ত পরীক্ষা করার পরামর্শ দিলে বাচ্চাটা কোলেস্টেরল, সুগার, থাইরয়েড সহ একাধিক সমস্যায় আক্রান্ত। আরও অনেক আছে। আজকের সমাজে এই ধরনের ঘটনা বারবার সামনে এলেও অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার অভাব দেখা যায়।
বর্তমান সমস্যা জর্জরিত সমাজে পুঁথিগত পাঠদান যে যথেষ্ট নয়, দরকার নিয়মিত কাউন্সেলিং - সেই কথা বারবার বলে চলেছেন বিশেষজ্ঞরা, কিন্তু শোনে কে! সবাই না শুনলেও কেউ কেউ শোনে। যেমন শুনেছে বর্ধমানের রথতলা মনোহর দাস বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক। বিভিন্ন সময়ে নিজ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর সেমিনারের আয়োজন করেন।
বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুডের প্রতি তীব্র আসক্তি দেখা যায়। এগুলো তাদের শরীরে কী পরিমাণ বিষ ঢালছে সেটা সম্পর্কে একইসঙ্গে তারা ও অভিভাবকরা পুরোপুরি অজ্ঞ। ফলস্বরূপ অল্প বয়স থেকেই বিভিন্ন রোগে তারা আক্রান্ত হয়ে পড়ে। পাশাপাশি তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে যায়।
এই বদ-খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের সচেতন করার জন্য তেজগঞ্জ বিদ্যালয়ের সহ-শিক্ষক প্রতনু রক্ষিত এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘সামায়ু’-র সহযোগিতায় গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর বর্ধমানের রথতলা মনোহর দাস বিদ্যানিকেতনে খাদ্য, পুষ্টি ও সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে ছোট্ট একটা আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
আলোচনা সভায় উপস্থিত প্রত্যেক বিশেষজ্ঞ ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুড কীভাবে শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর কুপ্রভাব ফেলছে সেটা নিয়ে সবিস্তারে ব্যাখ্যা করেন এবং এগুলি থেকে দূরে থাকার জন্য ছাত্রছাত্রীদের পরামর্শ দেন। তারা বলেন – এগুলির ‘জিভে জল আনা’-র ক্ষমতা থাকলেও আদৌ পুষ্টিকর নয়। উল্টে শিশুদের মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত করে। তারা শিশুদের পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার জন্য অভিভাবকদের বার্তা দেন।
তেজগঞ্জ স্কুলের সহশিক্ষক প্রতনু রক্ষিত ও ‘সামায়ু’ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে রথতলা মনোহর দাস বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন – আমারও সন্তান আছে। স্বাভাবিক খাদ্যের তুলনায় ফাস্ট ফুড ও জাঙ্ক ফুডের প্রতি তাদের আগ্রহটা যে বেশি সেটা দেখতে পাই। এই ‘বিষ’এর হাত থেকে নিজ নিজ সন্তানের স্বাস্থ্য সুরক্ষিত রাখতে হলে আমাদের সচেতন হতেই হবে। তাইতো এই আলোচনা সভার আয়োজন করেছি। আশাকরি প্রথমেই ছাড়তে না পারলেও ধীরে ধীরে ছেলেমেয়েরা এই ‘বিষ’ থেকে নিজেদের সরিয়ে নেবে। তিনি আরও বলেন – ভবিষ্যতে এই ধরনের আলোচনা সভায় আমরা অভিভাবকদের আমন্ত্রণ করব।