হুলিয়া জারির পোস্টার সেঁটে  আদালতে হাজিরার নির্দেশ সিবিআইয়ের 

Spread the love

বগটুই গণহত্যার তিন অভিযুক্ত  আজও  ফেরার

হুলিয়া জারির পোস্টার সেঁটে  আদালতে হাজিরার নির্দেশ সিবিআইয়ের 

        খায়রুল  আনাম

হাড়  হিম করা বীরভূমের রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের গণহত্যার ঘটনায় স্তম্ভিত  হয়ে গিয়েছিলো গোটা বিশ্ব। ২০২২ সালের ২১ মার্চ সন্ধ্যায় রামপুরহাটের ১৪ নম্বর জাতীয় সড়কের পাশে বগটুই মোড়ে স্থানীয় বড়শাল গ্রাম পঞ্চায়েতের তৎকালীন উপ-প্রধান বগটুই গ্রামের শেখ ভাদু যখন একটি মোটরবাইকে হেলান দিয়ে মোবাইলে কথা বলছিলেন তখনই মোটরবাইকে কয়েকজন এসে অতর্কিতে বোমা  মেরে ও গুলি করে খুন করে শেখ ভাদুকে।  আর এই খুনের বদলা নিতে ওই রাত্রেই শেখ ভাদুর অনুগামীরা  বগটুই গ্রামে ব্যাপক বোমাবাজি করে আতঙ্কের পরিবেশ তৈরী করে। প্রাণভয়ে অনেকেই গিয়ে আশ্রয় নেয় একটি ঘরে।  আর তারপরই শেখ ভাদুর অনুগামীরা রাত্রেই রামপুরহাটের একটি পেট্রোল  পাম্প থেকে ক্যান ভর্তি করে পেট্রোল  নিয়ে এসে হাজির হয় বগটুই গ্রামে। তারপর যে ঘরে অনেকেই আশ্রয় নিয়েছিলেন সেই ঘরের দরজা বাইরে থেকে শিকল দিয়ে বন্ধ করে দিয়ে পেট্রোল  ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে পুরুষ, মহিলা, শিশু-সহ দশজনকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় বহু বাড়ি। পুলিশ বা দমকল বাহিনী  কেউ সেখানে যায়নি।  হাড় হিম করা এই গণহত্যার কথা ছড়িয়ে পড়তেই ঘটনার বিভৎসতায় স্তম্ভিত হয়ে যায় গোটা বিশ্ব। ঘটনার একদিন পরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে এসে মৃতদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা ও পরিবারের একজন করে সদস্যকে চাকরির ব্যবস্থা করে দেন। যাঁদের ঘর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছিলো, তাঁদেরও  ক্ষতিপূরণ হিসেবে দেওয়া হয় আর্থিক সহায়তা। রাজ্য সরকার সিট গঠন করে তদন্তের নির্দেশ  দিলেও ঘটনার বিষয়টি উপলব্ধি করে কলকাতা হাইকোর্ট  সিবিআই  তদন্তের নির্দেশ দেয়। সিট প্রথমে এই ঘটনায় ৩৩ জনের নামে অভিযোগ দায়ের করলেও পরবর্তীতে আরও ৩ জনের নাম যুক্ত করা হয়।  সিবিআই  রামপুরহাটে অস্থায়ী শিবির করে তদন্ত  শুরু করে। যে তদন্ত এখনও চালাচ্ছে সিবিআই। 

     সিবিআই   বগটুই গণহত্যার তদন্তভার হাতে নেওয়ার ন’মাস পরে ঘটনার মূল অভিযুক্ত শেখ শেখ লালনকে গ্রেফতার করে।  আদালতের নির্দেশে শেখ লালন সিবিআই হেফাজতে থাকাকালীনই বাথরুমের ভিতর থেকে তাঁর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আর এই ঘটনার জেরে পরিস্থিতি এতোটাই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে যে, ময়নাতদন্তের  পরে শেখ লালনের মৃতদেহ সিবিআইয়ের  অস্থায়ী শিবিরের সামনে এনে বিক্ষোভ শুরু হয়। কোনক্রমে সেখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে সিবিআই আধিকারিকরা রামপুরহাট  রেল স্টেশনে গিয়ে আশ্রয়  নেয়।  সেই  সময় থেকে সিবিআই  এই ঘটনায় অভিযুক্ত শেখ রোহন, শেখ  মারফত  ও শেখ খুলিলকে  গ্রেফতার করতে পারেনি। এই ৩ জনের বিরুদ্ধে  ১১ টি অভিযোগে মামলা রয়েছে।   এই তিনজনকেই ৩০  জানুয়ারির মধ্যে রামপুরহাট মহকুমা অতিরিক্ত মুখ্য বিচারকের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়ে  হুলিয়া জারি করে সিবিআই শনিবার  ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বগটুইয়ের বিভিন্ন ছাপানো পোস্টার  সাঁটিয়েছে। এই তিনজন বিভিন্ন সময়ই গ্রামে থাকছিলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে, সিবিআই  হুলিয়া  জারি করে পোস্টার  সাঁটানোর পরে এই তিনজনেরই আর হদিশ পাওয়া যাচ্ছে না ।।

ছবি :  সিবিআইয়ের  পোস্টার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *