প্রধান বিচারপতির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা ‘বনধ’ মামলার আইনজীবী কে ৫০ হাজারের জরিমানা হাইকোর্টের
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
আদালত কে বিভ্রান্ত করা, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এক্তিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা, কৃত্রিম জনসেবী সেজে জনস্বার্থ মামলা করা প্রভৃতি বিষয়ক গুলি কে সামনে রেখে বুধবার নজিরবিহীন নির্দেশ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ এক আইনজীবী কে ৫০ হাজার টাকার আর্থিক জরিমানা সহ আজীবন জনস্বার্থ মামলা দাখিল করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারি করলো।যা নিয়ে তুমুল আলোড়ন পড়ে গেছে আইনজীবী মহলে। বিজেপির বাংলা বনধের বিরুদ্ধে দায়ের জনস্বার্থ মামলা খারিজ করে দিল কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। একই সঙ্গে সঞ্জয় দাস নামে মামলাকারী আইনজীবী ভবিষ্যতে কোনও জনস্বার্থ মামলা দায়ের করতে পারবেন না বলেও নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে আদালত।বিজেপির ১২ ঘণ্টার বাংলা বনধকে অবৈধ ঘোষণার দাবিতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেন সঞ্জয় দাস নামে এক আইনজীবী। দেশের একাধিক হাইকোর্টের রায় উল্লেখ করে দাবি করা হয়, হঠাৎ করে ডাকা এই বনধ জনস্বার্থের পরিপন্থী। আদালতের তরফে জানানো হয় বুধবার সকালে আদালত বসলেই মামলাটির শুনানি হবে। নিয়ম মেনে বুধবার সকালে জনস্বার্থ মামলাটি ওঠে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের বেঞ্চে। সেখানে মামলাটি খারিজ করে মামলাকারীকে তীব্র ভর্ৎসনা করেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি এদিন এজলাসে জানান, -‘ মামলাকারী বনধকে অবৈধ ঘোষণার দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন যে আইনজীবী তিনি বিচারপতিদের বিচার্য বিষয় পরিবর্তনের আবেদন করে একটি মামলা করেছিলেন। তিনি বিচারপতি অমৃতা সিনহার আদালত থেকে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা সংক্রান্ত মামলাগুলি সরানোর আবেদন করে মিথ্য তথ্য আদালতে পরিবেশন করেছিলেন। সেই আবেদন আদালতের কাজে হস্তক্ষেপের সামিল। তাই আদালত নির্দেশ দিচ্ছে সঞ্জয় দাস কখনও আর কোনও জনস্বার্থ মামলা দায়ের করতে পারবেন না। সঙ্গে আদালতের কাজে হস্তক্ষেপের জন্য তাঁকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে আদালত’।বনধের বিরোধিতায় মামলা খারিজ। মামলা খারিজ করলেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এর আগে বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাস থেকে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার মামলা সরানোর জন্য জনস্বার্থ মামলা করেন এই আইনজীবী।এদিন এই মামলা ঘিরে যথেষ্ট চাপানউতোড় ছিল। মামলাকারীকে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়।আইনজীবীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। শুধু তাই নয়। ভবিষ্যতে এই আদালতে আর কোনও জনস্বার্থ মামলা তিনি দায়ের করতে পারতে পারবেন না। এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেন প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম। এই মামলার মাধ্যমে আদালতকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আইন প্রক্রিয়ার অপব্যবহার করেছেন মামলাকারি আইনজীবী। এই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের। আরও ক্ষোভ বাড়িয়ে বিচারপতি ওই আইনজীবীকে তুলোধনা করেছেন।কীভাবে মামলাকারী আইনজীবী মানুষের জন্য কাজ করেছেন? গরিব মানুষের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন? তার উদাহরণ দিতে পারেননি তিনি। নিজের সম্পর্কে আদালতের কাছে ভুল তথ্য দিয়েছেন ওই আইনজীবী । তা জানিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য কত টাকা দান করেছেন ? প্রশ্ন করেছেন প্রধান বিচারপতি। সেই প্রশ্নেরও কোনও উত্তর দিতে পারেননি মামলাকারি আইনজীবী। মামলাকারি আইনজীবী এই আদালতে কোনও জনস্বার্থ মামলা করতে পারবেন না। এই কড়া নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি। এই মামলাও খারিজ করে দিলেন প্রধান বিচারপতি।এদিন এজলাসে রাজ্যের আইনজীবী ছিলেন। তিনি কিছু বলতে চাইলেও তা শুনতে রাজি হননি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি।সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি মামলার বিচার্য বিষয় নিয়ে বেঞ্চ বদল ঘটিয়েছেন।তাতে তৎকালীন পুলিশি নিস্ক্রিয়তা/সক্রিয়তা বেঞ্চের বিচারপতি অমৃতা সিনহার বিচার্য বিষয় বদল চেয়ে মামলা করেছিলেন ওই আইনজীবী। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি নিজে বিচার্য বিষয় বদল করে থাকেন।