খোকার আশা

Spread the love

খোকার আশা

সঙ্গীতা কর (কলকাতা)

বিকেল গড়িয়ে দিনের শেষে সন্ধ্যে নামছে সবে
তবে তখনও অন্ধকার খুব বেশি হয়নি গাঢ়,
ছেলেটি ধরা গলায় বলছে মাকে ডেকে ডেকে…
‘ওমা একটা কাজু বরফি এনে দিতে কি পারো??’

রান্নাঘরের দাওয়া থেকে আস্তে আওয়াজ আসে
‘দেখিস খোকা আনবো ঠিক কাল সকাল হলে’,
শূন্য হাঁড়িতে ফুটন্ত জল, আর ছুটন্ত মায়ের মন
ভাবতে থাকে সান্ত্বনা কি ছেলেকে শুধু মিথ্যে বলে?

খোকার যে সাধ ভারি খাবে একটা কাজুর বরফি
বোঝে না সে গরিব ঘরে এসব চাওয়া দুঃস্বপ্নের ঘোর,
শপথ করে মা আনবে ঠিক বড়লোক বাবুর বাড়ি গিয়ে
মনে মনে বলে ঈশ্বর তাড়াতাড়ি রাত হয়ে যাক ভোর।

বাবা তার অসময়ে হয়েছে দূর আকাশের তারা
মা বলেছে ‘ওরে খোকা কাঁদিস না তুই মোটে,
দেখিস, তোর এই মা তোকে রাখবে ভালো
যদি কোনভাবেও একটি কাজ আমার জোটে।

ভাঙা ঘরের চালের ফাঁকে উঁকি দিয়ে চন্দ্র মামা হাসে
মায়ের বুকে কাঁপন লাগে খোকার গলার স্বর না শুনে,
জ্বলন্ত উনুনে আগুন রেখে, ছুটে যায় খোকার পাশে,
রুগ্ন খোকা বুঝতে পারে না, মা কাছে নিয়েছে টেনে।

কি জানি কোন রোগে খোকার হয়েছে এমনতর??
শরীর ভেঙে পাঁজরগুলো করছে ভীষণ ওঠানামা
মা কাঁদে ‘শোন ও খোকা, সোনা বাপরে আমার
এমন করে বুকের ওঠা-নামা একটুখানি থামা’..।

দেখিস কাল ভিক্ষে করে হলেও আনবো প্রিয় খাবার
তবে বাবার মতো তুই আমাকে দিয়ে যাস না ফাঁকি।
তুই যে মায়ের বুক জোড়া অমূল্য ধন মানিক রতন
তোর একটা ও সাধ করতে পূরণ রাখবো না রে বাকি।

রাত্রি যত গভীর হয় বেড়ে চলে ভাঙা শরীরের দীর্ঘশ্বাস
কাতর কন্ঠে মা বলে ‘বিধাতা মোছো এ কপালের দুর্দশা,
ধীরে ধীরে ঘুমের দেশে চিরঘুমে ঘুমিয়ে যায় ছোট্ট প্রাণ
একলা ঘরে কাঁদে মা, মিটলো না তার খোকার আশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *