অপেক্ষা করছে ভয়ংকর পরিণতি!!!

Spread the love

অপেক্ষা করছে ভয়ংকর পরিণতি!!!

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

কথায় আছে 'আধা মাঘে কম্বল কাঁধে', অর্থাৎ মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই ধীরে ধীরে শীতের প্রকোপ কমতে থাকে। মানুষও শীতের পোষাক তুলে দিয়ে বসন্তের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু এবার যে হারে মাঘ মাসের মাঝামাঝি সময় থেকেই তাপমাত্রা বাড়ছে তাতে গ্রীষ্মের অনুভূতি পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ হয়তো বলতে ভুলে যাবে- 'বাতাসে বহিছে প্রেম, নয়নে লাগিলো নেশা, কারা যে ডাকিলো পিছে, বসন্ত এসে গেছে'। এখন থেকেই সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩১° সে: এ পৌঁছে গেছে। আবহাওয়া দপ্তরের ইঙ্গিত আগামী পাঁচদিন তাপমাত্রা বাড়বে। মে মাসে তাপমাত্রা কোথায় পৌঁছাবে সেটা ভেবে পরিবেশবিদরা আতঙ্কিত।

    মাত্র গত বছরের ঘটনা। সকাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই দুপুরের অনুভূতি নিয়ে হাজির সকালের তাপমাত্রা। ৪০°সে. এর হাত ধরে যাত্রা শুরু করে ধীরে ধীরে সেটা ৫০°সে. এর দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছিল। কোন জেলা প্রথম হতে পারে সেটা নিয়ে  চলছিল নীরব লড়াই। ওদিকে হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর খবর আসছিল। রাজ্যের উদ্বিগ্ন চিকিৎসককুল বারবার সতর্কবাণী শুনিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির গ্রীষ্মকালীন ছুটি এগিয়ে আনা হয়। ফাঁকা রাস্তাঘাট দেখে মনে হচ্ছিল হয় নতুন করে লকডাউন শুরু হয়েছে অথবা কার্ফু জারি হয়েছে! এবার হয়তো তার থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে।

    ভবিষ্যতে কী হতে পারে সেটা আঁচ করে  পরিবেশবিদরা বারবার বৃক্ষচ্ছেদনের পরিবর্তে বৃক্ষরোপণের পরামর্শ দিয়ে গেছে। বৃক্ষরোপণের প্রতিজ্ঞা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হলেও পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃক্ষ যে রোপণ করা হয়নি সেটা আজ বোঝা যাচ্ছে। শুধুই প্রচারের আলোতে আসার একটা নির্লজ্জ প্রচেষ্টা ছিল। যদিও প্রকৃত পরিবেশ প্রেমীরা আজও নীরবে তাদের কাজ করে যাচ্ছে।

 আসলে মনোমত ইস্যু পেলেই আমরা হুজুগে মেতে উঠি। ভেড়ার পালের মত গড্ডলিকা প্রবাহে গা ভাসিয়ে দিই। পরে উত্তেজনা কেটে গেলে সেটা নিয়ে ভাবিনা। 'এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য' করার পরিবর্তে সেটা কীভাবে আরও দূষিত করে তোলা যায় তারজন্য নতুন ভাবনায় মেতে উঠি। গাছ কেটে এসি কিনলেও পরিবর্তে গাছ লাগাই না। বিশ্ব পরিবেশ দিবসে সেজেগুজে মঞ্চে উঠে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা গলার শিরা ফুলিয়ে ভাষণ দিতে ভুল না করলেও পরিবেশ দূষণের মত ছোটখাটো(!) বিষয় নিয়ে ওদের ভাববার সময় থাকেনা। তাইতো বাজেট প্রস্তাবে ওটা উপেক্ষিত থেকে যায়। আইনের পরিবর্তন করে কর্পোরেট সেক্টরের হাতে অরণ্য তুলে দিলেও নতুন অরণ্য সৃষ্টির প্রতি আগ্রহ দেখা যায়না।  একদিন যে সড়কগুলোর দু'পাশে বৃক্ষ দেখা যেত আজ সেখানে মরুভূমির শূন্যতা বিরাজ করছে।

এইভাবেই বছরের পর বছর চলে আসছে। আবার যখন উত্তপ্ত হবে পরিবেশ তখন নতুন করে হাহুতাশ শুরু হবে। কিন্তু সাধের পৃথিবী ধীরে ধীরে ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *