কবিপ্রয়াণ দিবস স্মরণে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি

Spread the love

কবিপ্রয়াণ দিবস স্মরণে রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি

বিশ্ববন্দিত কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৫ তম প্রয়াণদিবসে জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি অন্তর্গত রবীন্দ্রভারতী সোসাইটি যথাযথ মর্যাদা ও ভাবগম্ভীর পরিবেশে সারাদিন ধরে নানা পর্বে কবিগুরুর প্রতি অন্তরের শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সকাল সাতটায় ঠাকুরবাড়ির মূল ভবনের দোতলায় রবীন্দ্রপ্রয়াণ কক্ষে কবির প্রতিকৃতিতে মাল্যদান ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে প্রণাম সহ শ্রদ্ধা জানান সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, সাথে ছিলেন সোসাইটির কর্মকর্তাবৃন্দ সহ সাধারণ সদস্য/সদস্যাগণ। মহর্ষিভবনের বাইরে প্রতিষ্ঠিত মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আবক্ষ মর্মরমূর্তিতে পুষ্পমাল্য দিয়ে প্রণাম জানান সকলে। এরপর নিমতলা মহাশ্মশানে কবিগুরুর স্মৃতিসৌধে সোসাইটির তরফে পুষ্পস্তবক স্থাপন করে শ্রদ্ধা জানান সাধারণ সম্পাদক সহ ডা. জি পি সরকার ও উপস্থিত সদস্যগণ। সদস্যা বুলবুলি ঘোষের পরিচালনায় সমবেত কণ্ঠে তিনটি রবীন্দ্রসংগীত গেয়ে কবিগুরুর উদ্দেশে স্মৃতিতর্পণ করেন সকলে।
বিকাল সাড়ে পাঁচটায় রথীন্দ্রমঞ্চে শুরু হয় কবিপ্রয়াণ ও শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিন স্মরণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই দুই মনীষীর স্মৃতিচারণা ও শ্রদ্ধা নিবেদন। সম্মানীয় অতিথি হিসাবে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সুইডেন দূতাবাসের অনারারি কনসাল মিসেস অনজুমিথ নোবিস্ ও চীন দূতাবাসের ডেপুটি কনসাল কিন্ ইয়ং। বিশেষ অতিথি ছিলেন ড. শ্রাবণী পাল, অধ্যাপক, বাংলা সাহিত্য ও ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় এবং শ্রীমতী লীনা গঙ্গোপাধ্যায়, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালক ও পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন। সোসাইটির তরফে মঞ্চে ছিলেন সহ-সভাপতি বিচারপতি সৌমিত্র পাল ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। রথীন্দ্রমঞ্চে স্থাপিত কবিগুরু এবং শিল্পগুরু অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা ও প্রণাম জানান মঞ্চে উপবিষ্ট ব্যক্তিত্ববর্গ। সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়ের প্রারম্ভিক ভাষণের পর উপস্থিত অতিথিবর্গ একে একে বক্তব্য রাখেন বাংলার এই দুই দিকপাল মনীষীর জীবন ও সুদীর্ঘ কর্মকাণ্ড উল্লেখ করে। সুইডেন দূতাবাসের অনারারি কনসাল তাঁর ভাষণে বার বার উল্লেখ করেন সেই দেশের নোবেল একাডেমি থেকে ঘোষিত কবিগুরুর নামে নোবেল পুরস্কার লাভের সংবাদ এবং তার জন্য গর্ববোধের কথা। “অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর স্মারক বক্তৃতা” প্রদান করেন ড. শ্রাবণী পাল। সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সহ-সভাপতি বিচারপতি সৌমিত্র পাল। সোসাইটির সাহিত্য পত্রিকা ‘কড়ি ও কোমল’ এর ত্রয়োদশবর্ষীয় প্রথম সংখ্যাটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ করা হয় উপস্থিত ব্যক্তিত্ববর্গ ও পত্রিকা পরিচালন পর্ষদ সদস্যদের হাত দিয়ে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পর্বে বাদ্যযন্ত্রশিল্পীদের দ্বারা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রানুষঙ্গে পরিবেশিত হয় রবীন্দ্রসংগীত। একক পরিবেশনায় ছিলেন অসিত পাল (বাঁশি), তনুশ্রী চট্টোপাধ্যায় (এস্রাজ), দেবকুমার পাইন (স্প্যানিশ গীটার), রামগোপাল পাইন (বেহালা), বিনায়ক সেন (মাউথ অর্গান), কল্যাণ মজুমদার (সেতার), যাদবেন্দ্র পাল (স্যাক্সোফোন), সৌরভ মাইতি (হারমোনিয়াম), শ্যামলী ভট্টাচার্য (হাওয়াইয়ান গীটার), শ্রীতমা রায় (এস্রাজ), রকি বসাক (নেপালি সারেঙ্গী ও খমক), দীপ্তনীল ভট্টাচার্য ও রেয়াংশ ঘটক (সরোদ), দেয়াশিনী মুখোপাধ্যায় (হারমোনিকা)। দলগত পরিবেশনায় ছিলেন সুমন্ত দে (দোতারা), তবলা ও কি-বোর্ডে মলয় দাস ও দেবব্রত মুখোপাধ্যায়। বাদ্যযন্ত্রে বিভিন্ন শিল্পীর পরিবেশনায় প্রেক্ষাগৃহে এনে দেয় রবীন্দ্র-সুর-মূর্ছনার পরিবেশ। কবিগুরুর প্রতি অন্তরমথিত শ্রদ্ধায় সকলে অবনতচিত্তে স্মরণ করেন তাঁকে। শেষলগ্নে সমবেত কণ্ঠে ভারতের জাতীয় সংগীত গেয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি হয়। সমগ্র অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সোসাইটির দুই সদস্য বুলা বাগচী ও হিমাদ্রী মুখোপাধ্যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *