শিক্ষাই ভারতের উন্নত দেশ হওয়ার মূল চাবিকাঠি ২০৪৭-এর মধ্যে: ভিআইটি চ্যান্সেলর ড. জি. বিশ্বনাথন

Spread the love

শিক্ষাই ভারতের উন্নত দেশ হওয়ার মূল চাবিকাঠি ২০৪৭-এর মধ্যে: ভিআইটি চ্যান্সেলর ড. জি. বিশ্বনাথন

দুর্গাপুর: ভেলোর ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ভিআইটি) চ্যান্সেলর ড. জি. বিশ্বনাথন বলেছেন, শিক্ষার উন্নয়নই ২০৪৭ সালের মধ্যে ভারতকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরিত করার মূল ভিত্তি। আজ ভিআইটির ৪০তম সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তিনি এই মন্তব্য করেন।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি আর. মহাদেবন। তিনি শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি সনদ প্রদান করেন। এবারের সমাবর্তনে মোট ৮,৩১০ জন ছাত্র-ছাত্রী স্নাতক, ২,৮০২ জন স্নাতকোত্তর এবং ৪৫১ জন পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন। এছাড়া ২০৩ জন শিক্ষার্থী র‌্যাঙ্কিং-এর জন্য সম্মানিত হন এবং ৬৮ জন কৃতী শিক্ষার্থী স্বর্ণপদক লাভ করেন। তামিলনাড়ু পুলিশ একাডেমির ডিরেক্টর ডি.জি.পি. সন্দীপ রাই রাঠোর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় পিএইচডি ডিগ্রি পান। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়ার সিইও শ্রী শিবকুমার সুন্দরম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এবং বক্তব্য রাখেন।

অনুষ্ঠানে ড. এ.পি.জে. আবদুল কালাম ও জগদীশচন্দ্র বসুর নামে ছাত্রাবাসেরও উদ্বোধন হয়।

সমাবর্তনে উপস্থিত ছিলেন ভিআইটির ভাইস প্রেসিডেন্ট শঙ্কর বিশ্বনাথন, সেকার বিশ্বনাথন, জি.ভি. সেলভম, ট্রাস্টি রমণী বলাসুন্দরম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর সন্দ্যা পেন্টারেড্ডি, অ্যাসিস্ট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট কাধাম্বারি এস. বিশ্বনাথন, ভাইস চ্যান্সেলর ভি.এস. কঞ্চনা ভাস্কারন, অ্যাসোসিয়েট ভাইস চ্যান্সেলর পার্থসারথি মল্লিক এবং রেজিস্ট্রার টি. জয়ভারথি প্রমুখ।

ড. জি. বিশ্বনাথনের বক্তব্য:

ড. বিশ্বনাথন বলেন, বহু বছর ধরেই জিডিপির ৬% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ রাখার দাবি জানানো হচ্ছে, অথচ বর্তমানে মাত্র ৩% ব্যয় হয়। “শিক্ষা খরচের ৭৫% বহন করে রাজ্য সরকার, আর বাকি অংশ কেন্দ্র। তামিলনাড়ু রাজ্য বাজেটের ২১% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করে সারা দেশে শীর্ষস্থানে রয়েছে,” তিনি উল্লেখ করেন।

তিনি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার ৫৫ লাখ কোটি টাকার বাজেটের মধ্যে মাত্র ২.৫% শিক্ষা খাতে বরাদ্দ করেছে। বর্তমানে উচ্চশিক্ষায় ৪.৩ কোটি শিক্ষার্থী রয়েছে। নতুন শিক্ষা নীতি অনুযায়ী ৫০% গ্রস এনরোলমেন্ট রেশিও (GER) অর্জনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৮ কোটিতে উন্নীত করতে হবে। এর জন্য আরও বেশি ক্লাসরুম, পরিকাঠামো ও অর্থ প্রয়োজন।

ড. বিশ্বনাথন বলেন, ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এখনো বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং-এ পিছিয়ে আছে। ভিআইটি শীর্ষ ৫০০-র মধ্যে থাকলেও তিনি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে শীর্ষ ১০০ বা ২০০-তে পৌঁছানোর আহ্বান জানান। তিনি আরও উল্লেখ করেন, ভিআইটি সবসময় পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছে— উত্তর আর্কট জেলার (বর্তমানে চারটি জেলায় বিভক্ত) ১০,০০০ শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছে, যার জনসংখ্যা প্রায় ৭৫ লাখ।

তিনি কালো টাকা, কর ফাঁকি ও দুর্নীতিকে জাতীয় ব্যাধি হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “প্রতি বছর আমরা ৮-৯ লাখ কোটি টাকা কর ফাঁকিতে এবং ৬ লাখ কোটি টাকা দুর্নীতিতে হারাই। সুইস ব্যাংকে ভারতীয় কালো টাকার পরিমাণ অন্যান্য দেশের সম্মিলিত টাকার থেকেও বেশি। ছাত্রসমাজকে এই সমস্যা দূরীকরণে লড়াই করতে হবে।”

তিনি আরও বলেন, “ভারতের মাথাপিছু আয় ২,৯০০ মার্কিন ডলার, আর জাপানের ৩৫,০০০ মার্কিন ডলার। উচ্চশিক্ষার উন্নতি করলেই এই ব্যবধান কমানো সম্ভব। এজন্য কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে।”

বিচারপতি আর. মহাদেবনের বক্তব্য:

বিচারপতি মহাদেবন ভিআইটির আধুনিক প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশাসনিক কার্যক্রমের প্রশংসা করেন। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের নানা উদ্যোগে ভিআইটির সহযোগিতা এবং পিছিয়ে পড়া ও গ্রামীণ সম্প্রদায়ের পাশে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টারও প্রশংসা করেন।

ড. এ.পি.জে. আবদুল কালামের “তিরুক্কুরাল” উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, “নৈতিক মূল্যবোধ ছাড়া সাফল্য প্রকৃত সাফল্য নয়।” তিনি আরও বলেন, গত ২০ বছরে ভারতের অর্থনীতি উন্মুক্ত হয়েছে, বিদেশি বিনিয়োগ বেড়েছে, যদিও চীনের তুলনায় এখনও পিছিয়ে রয়েছে। বিশ্বায়নের ফলে কর্মসংস্থান ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ বেড়েছে।

তিনি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, “বই-ই জ্ঞানের ভাণ্ডার। বিশ্বাস ও শৃঙ্খলাই চরিত্র গঠন করে। ভবিষ্যতের নেতা হিসেবে নিজেদের ভেতরের বিবেককে জাগ্রত করে নৈতিক আদর্শ রক্ষা করতে হবে।”

এদিনের সমাবর্তনে ভিআইটির স্নাতকরা শুধু ডিগ্রি অর্জনই করেননি, তারা দেশের অগ্রগতির জন্য নৈতিক নেতৃত্বে অবদান রাখার শপথও নিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *