আউশগ্রামের জঙ্গলে লালমাটি লুটের রমরমা, বনদপ্তরের অভিযানে ধরা পড়ল ট্রাকটর
আউশগ্রামের জঙ্গলে ফের বেআইনি ভাবে লালমাটি কাটার অভিযোগে উত্তাল হয়ে উঠেছে এলাকা। রবিবার সকালে আউশগ্রামের ভূয়েরা মৌজার জঙ্গলে লালমাটি বোঝাই একটি ট্রাকটর আটক করল বনদপ্তর। তবে চালক ও মাটি কারবারিরা বনকর্মীদের উপস্থিতি টের পেয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
আদুরিয়া বিট অফিসের অধীনে অভিযান চালিয়ে ট্রাকটরটি আটক করা হয়। বিট অফিসার পিনাকি ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা ঘটনাস্থল থেকে লালমাটি ভর্তি ট্রাকটরটি আটক করেছি। নির্দিষ্ট নম্বরের ভিত্তিতে মালিকের বিরুদ্ধে নোটিশ পাঠানো হবে। প্রয়োজন হলে আইনানুগ কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করছেন, দীর্ঘদিন ধরেই আউশগ্রামের বিভিন্ন জঙ্গলে লালমাটি কেটে পাচার করা হচ্ছে। বিশেষ করে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে এই লালমাটির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। মাটির ঘরে লালমাটির প্রলেপ দিলে ঘর ঠান্ডা থাকে, আবার ঘরের সৌন্দর্যও বাড়ে—এই বিশ্বাস থেকেই এই মাটির কদর অনেক বেশি। আর সেই সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে একদল মাটি মাফিয়া।
স্থানীয়দের অভিযোগ, তৃণমূলের এক শ্রেণির প্রভাবশালী নেতা-দাদাদের ছত্রছায়ায় এই কারবার চলছে। অনেক সময় বনদপ্তর ট্রাকটর আটক করলেও মালিকদের বিরুদ্ধে কোনও কড়া ব্যবস্থা না নেওয়ায় ফের নতুন করে মাটি কাটার রমরমা শুরু হয়। ফলে আউশগ্রামের জঙ্গলে ছোটো বড় খাল তৈরি হয়ে গিয়েছে। বর্ষায় সেই গর্তে জল জমে বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা বাসিন্দাদের।
এক স্থানীয় বাসিন্দা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “জঙ্গলের ভিতরে এমনভাবে লালমাটি কাটা হচ্ছে যে বহু জায়গা ভেঙে গর্ত হয়ে গিয়েছে। প্রশাসন দেখেও দেখছে না। শুধু বনদপ্তর মাঝেমধ্যে অভিযান চালায়, কিন্তু তাতেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না।”
এখানেই শেষ নয়, আউশগ্রাম জুড়ে বেআইনি ভাবে মোরাম কেটে পাচারের অভিযোগও উঠেছে। স্থানীয়দের একাংশের দাবি, রাজনৈতিক ছত্রছায়া না থাকলে এত বড় পরিসরে এই বেআইনি কারবার সম্ভব হত না। এক প্রাক্তন নেতার নামও ঘুরছে এই চক্রের পিছনে থাকার অভিযোগে। এখন তিনি দলীয় রাজনীতিতে কিছুটা পিছিয়ে পড়লেও পুরনো প্রভাব কাজে লাগিয়ে মাটির কারবার থেকে সরে আসেননি।
উল্লেখ্য, আগেও একাধিকবার বনদপ্তর মাটি বোঝাই ট্রাকটর আটক করেছে, তবে দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা না নেওয়ায় পাচার রোখা যায়নি।
এই ঘটনার পর বনদপ্তরের সক্রিয়তা বাড়লেও, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় বেআইনি মাটি ও মোরাম কারবার বন্ধ হবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে স্থানীয়রা। এখন দেখার, প্রশাসন সত্যিই কি দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ নেয়, নাকি এও থেকে যাবে একটি দিনের “অভিযান” হিসেবেই।