মহান সুফি সাধক হযরত সৈয়দ শাহ রশীদ আলী আলকাদেরী-র বার্ষিক উরস পালিত হয় মেদিনীপুরে–
কাজী আমিরুল ইসলাম — ‘বড় হুযুর পাক’ – নামে খ্যাত মহান সুফি সাধক হযরত সৈয়দ শাহ রশীদ আলী আল-কাদেরী আল-বাগদাদী(আঃ)এর চতুর্থ বার্ষিক উরস পালিত হচ্ছে আজ ১৬ই আগস্ট শনিবার দিবাগত রাতে মেদিনীপুর শহরের জোড়া মসজিদে, তৎ-সংলগ্ন মাযার শরীফে ও পার্শ্ববর্তী দায়রা পাকে।
তিনি হযরত মুহাম্মাদ(সঃ)এর সরাসরি ৩৫ তম এবং সেইসঙ্গে সুফি কাদেরিয়া তরিকার প্রতিষ্ঠাতা ‘বড় পীর সাহেব’ হযরত আব্দুল কাদির জিলানী(আঃ)এর ২২ তম বংশধর।
২০২১ সালের ১৬ ই আগস্ট, বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩০শে শ্রাবণ ১৪২৮, ইসলামিক ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৬ ই মুহাররম তাঁর ‘বেসালে হক'(দেহান্তর) হয়েছিল কলকাতার ৪ নং হাজী মুহাম্মদ মহসিন স্কোয়ারের দরবার পাকে। তাঁর মাযার শরীফ নির্মিত হয়েছে মেদিনীপুরে জোড়া মসজিদে তাঁদের পারিবারিক মাযার শরীফ প্রাঙ্গণে।
তাঁর বর্তমান স্থলাভিষিক্ত উত্তরাধিকারী সাজ্জাদানশীন হুযুর পাক হযরত সৈয়দ শাহ ইয়াসূব আলী আল-কাদেরী আল-বাগদাদী মাদ্দাযিল্লুহুল আলী -র পরিচালনায় এই উরস পালিত হচ্ছে।
‘বড় হুযুর পাক’ এর ভক্ত ও শিষ্য সারা বিশ্বেই রয়েছেন। তাঁর প্রপিতামহ ‘মওলা পাক’, প্রতি বছর ৪ ই ফাল্গুন যাঁর উরস এই জোড়া মসজিদেই পালিত হয়।
আজ থেকে প্রায় আড়াইশো বছর আগে (১৭৬৬) তাঁর পূর্ব পুরুষ বাগদাদ শরীফ থেকে ভারতে তশরিফ আনেন এবং এখানে কাদেরিয়া তরিকার প্রসার ঘটে।
তাঁর আব্বাজান ‘সানী মওলা পাক’ নামে খ্যাত হযরত সৈয়দ শাহ মুস্তারশিদ আলী আলকাদেরী(আঃ) ছিলেন যমানার শ্রেষ্ঠ আলেম। ১৯৭৮ সালে তাঁর আব্বাজানের বেসালে হক হলে ‘বড় হুযুর পাক’ তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন এবং দীর্ঘ ৪৩ বছর ধরে এই সিলসিলা-র সর্বময় দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব পালন করেন। কঠোর আত্মসংযম ও কৃচ্ছসাধনায় তিনি সমগ্র জীবন অতিবাহিত করেন। দুনিয়ায় থেকেও তিনি দুনিয়ার প্রতি সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ আলেম হয়েও তিনি অত্যন্ত সাধারণ জীবন যাপন করতেন ও নিজেকে সমস্ত রকমের প্রচার থেকে দূরে রাখতে পছন্দ করতেন। জাতি-ধর্ম- বর্ণ নির্বিশেষে ভক্তবৃন্দ ও বিপদ গ্রস্ত মানুষ তাঁর দরবারে ছুটে আসতেন। কাদেরিয়া তরিকার মহান ঐতিহ্য অনুসারে তাঁর দরবারে উচ্চ-নীচ, ধনী -দরিদ্র কোন ভেদাভেদ ছিলনা।
এই উপলক্ষ্যে বাদ মাগরিব মিলাদ মাহফিল ও তারপর সারারাত ধরে ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।
পশ্চিম বঙ্গের প্রায় সমস্ত জেলা থেকে এবং ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা এসেছেন ‘বড় হুযুর পাক’ ও তাঁর পূর্ব পুরুষদের মাযার পাকে জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে মানুষ লাইন দিয়ে হাযির হন ও দোওয়া প্রার্থনা করেন। পার্শ্ববর্তী দায়রা পাকেও সাজ্জাদানশীন হুযুর পাকের যিয়ারতের জন্য মানুষের লম্বা লাইন দেখা যায়।
মেদিনীপুর ছাড়াও কলকাতার ২২ নম্বর খানকাহ শরীফ লেনের মদজিদে, বর্ধমান জেলার মঙ্গলকোটে, বিহারের পূর্ণিয়া জেলার হযরত রওশনগঞ্জে এবং সিলসিলা এ কাদেরিয়া রায্যাকিয়া মুস্তারশিদিয়া-র সমস্ত খানকাশরীফ ও মসজিদে এই উরস পাক যথাযথ মর্যাদায় পালিত হচ্ছে।