এনইউজেএস-এ হাইব্রিড ক্রিমিনোলজি মাস্টার্স চালু
কলকাতা: দেশের অন্যতম প্রধান ন্যাশনাল ল’ ইউনিভার্সিটি, দ্য ওয়েস্ট বেঙ্গল ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব জুড়িডিক্যাল সায়েন্সেস (এনইউজেএস) ‘ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড ক্রিমিনাল জাস্টিস সায়েন্স বিষয়ে দুই বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স চালু করল।
এই পাঠ্যক্রমটির উদ্বোধন করেন কলকাতা হাই কোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ, বিচারপতি অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বিচারপতি সুগত মজুমদার। উপস্থিত ছিলেন এনইউজেএস-এর উপাচার্য ড. নির্মলকান্তি চক্রবর্তী, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের ডিআইজি (সাইবার ক্রাইম) শ্রী সঞ্জয় সিং (আইপিএস) এবং প্রবেশন অফিসার শ্রী মনোজ কুমার রায়।
হাইব্রিড পদ্ধতিতে চালু হওয়া এই কোর্সে থাকবে এম.এ. ও এম.এসসি.– দুই ডিগ্রিরই সুযোগ। শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি কর্মজীবী পেশাদারদের কাছেও এটি সহজলভ্য হয়ে উঠবে।
পাঠ্যক্রমটি তৈরি হয়েছে জাতীয় শিক্ষা নীতি (এনইপি) ২০২০ এবং ইউজিসি-র নতুন নির্দেশিকা অনুসারে। এম.এ.-এর শিক্ষার্থীদের জন্য থাকছে তিনটি বিশেষ ফরেনসিক পেপার, আর এম.এসসি.-এর জন্য পাঁচটি ফরেনসিক পেপার। পূর্ণাঙ্গ পাঠক্রমটিতে আইনগত, সামাজিক ও বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গির সমন্বয়ে দেখা যাবে।
ড. নির্মলকান্তি চক্রবর্তী, উপাচার্য, এনইউজেএস বলেন—
“ডিজিটাল ও প্রযুক্তিনির্ভর যুগে অপরাধ ও বিচার ব্যবস্থার নয়া রূপ তৈরি হয়েছে। আমাদের কোর্সের লক্ষ্য এক নতুন প্রজন্ম তৈরি করা, যারা আইন, অপরাধবিদ্যা, ফরেনসিক সায়েন্স ও ভিকটিমোলজির তাত্ত্বিক জ্ঞান ও ব্যবহারিক দক্ষতায় সমৃদ্ধ হবে। এর ফলে তারা অপরাধ বিচার প্রশাসন, ফরেনসিক পরিষেবা, সংশোধনাগার, পুলিশি কাজ এবং নীতি গবেষণার মতো ক্ষেত্রেও সাফল্যের সঙ্গে কাজ করতে পারবে।”
পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত থাকছে ভিকটিমোলজি, সাইবারক্রাইম ও ফরেনসিক প্রযুক্তি, ক্রিমিনাল প্রোফাইলিং, কারাগার পরিচালনা, পুনর্বাসন, ফরেনসিক অ্যানথ্রোপলজি এবং অপরাধের পূর্বাভাসমূলক বিশ্লেষণ। পাশাপাশি থাকবে কেস স্টাডি, ক্ষেত্রসমীক্ষা, বিশেষজ্ঞ বক্তৃতা ও যৌথ প্রকল্প।
বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতকরা ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবেন। আইন, সমাজবিজ্ঞান ও কলা বিভাগের শিক্ষার্থীরা এম.এ.-তে ভর্তির সুযোগ পাবেন, আর বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা এম.এসসি.-তে ভর্তি হতে পারবেন। ন্যূনতম ৫০ শতাংশ নম্বরসহ ইউজিসি অনুমোদিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি থাকতে হবে।সম্পূর্ণ ফলাফল হাতে না পাওয়া শিক্ষার্থীরাও ভর্তির আবেদন করতে পারবেন।
কোর্সটি পরিচালনা করবেন দেশের ও বিদেশের নামী প্রতিষ্ঠান থেকে আসা অধ্যাপক ও অতিথি শিক্ষকরা, সঙ্গে থাকবেন ফরেনসিক, পুলিশ, মনোবিজ্ঞান ও ভিকটিম অ্যাডভোকেসির পেশাদাররা। নিয়মিত ক্লাস নেবেন বিচার ব্যবস্থা-সংক্রান্ত অভিজ্ঞ কর্মকর্তা ও শিক্ষকরাও।
১৯৯৯ সালের এনইউজেএস অ্যাক্ট অনুযায়ী প্রতিষ্ঠিত এই বিশ্ববিদ্যালয় ইতিমধ্যেই দেশের শীর্ষ ল’ ইউনিভার্সিটিগুলির মধ্যে স্থান করে নিয়েছে। ২০২৩ সালে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউশনাল র্যাঙ্কিং ফ্রেমওয়ার্ক (এনআইআরএফ)-এর আইন বিভাগে বিশ্ববিদ্যালয়টির স্থান ছিল চতুর্থ। সম্প্রতি এনএএসি থেকে এ+ মান অর্জন করেছে।
হাইব্রিড ফরম্যাটের প্রসঙ্গ টেনে উপাচার্য বলেন—
“এটি কর্মজীবী পেশাদারদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয়। এই কোর্স কেবল তাদের কর্মজীবনকেই এগিয়ে নিয়ে যাবে না, সমাজের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও বিচার ব্যবস্থার জন্য দক্ষ বিশেষজ্ঞ তৈরির জরুরি প্রয়োজন মেটাতেও সাহায্য করবে।”
ভারতীয় ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। শ্রেণিকক্ষগুলি প্রথাগত ও ডিজিটাল সুবিধার সমন্বয়ে তৈরী হওয়ায় আশা করা যায়, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগ্রহণের অভিজ্ঞতা অনন্য হবে।
সবশেষে বলা যায়, এনইউজেএস ক্রিমিনোলজি ও ক্রিমিনাল জাস্টিস কোর্সটি শিক্ষার ক্ষেত্রে এই দেশে এক নতুন মানদণ্ড গড়ার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হয়েছে।