সকালে টোটো ও বিকেলে তেলেভাজা – এভাবেই সংসার প্রতিপালন করছেন মঙ্গলকোটের রানা দম্পতি

Spread the love

সকালে টোটো ও বিকেলে তেলেভাজা – এভাবেই সংসার প্রতিপালন করছেন মঙ্গলকোটের রানা দম্পতি

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী

   বৃদ্ধ মা-বাবা ও দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে মঙ্গলকোটের গণপুর গ্রামের রানা দম্পতি নীলকুমার ও নন্দিতার সংসার। এক ছটাক জমি নাই। ফলে অভাব লেগেই আছে। রোজগারের আশায় বৃদ্ধ বয়সে বাবা লক্ষণ আজও অপরের জমিতে ক্ষেত মজুর হিসাবে কাজ করেন। মা একজন সাধারণ আটপৌরে গৃহবধূ। স্বামীর সঙ্গে তিনিও অপরের জমিতে কাজ করতে যান। আর্থিক কারণে নীলকুমার সেভাবে পড়াশোনা করার সুযোগ পাননি। কিন্তু নিজের সন্তানদের পড়াশোনার প্রতি রানা দম্পতির ব্যাপক আগ্রহ। বড়টি চতুর্থ শ্রেণির এবং ছোটটি প্রথম শ্রেণির ছাত্রী। 

   সাধারণ বাড়ির সন্তান হলেও কৃষি মজুর হিসাবে কাজ করার আগ্রহ না থাকলেও ছোট থেকে রান্না করার প্রতি নীলের ব্যাপক আগ্রহ। সুযোগ পেলেই প্রধান রাধুনির সহকারী হিসাবে বিভিন্ন উৎসব বাড়িতে রান্না করতে সে চলে যেত। সেখানে অবশ্য নির্দিষ্ট আয় ছিলনা। নিজের সংসার ও সন্তানদের প্রয়োজনে নীল হোটেলে কাজ করতে শুরু করে। মনের মত রান্না করার সুযোগ না থাকায়  উপার্জন হলেও মন টিকতনা। একসময় সেখানেও কাজ ছেড়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে এবং টোটো কিনে চালাতে শুরু করে।

   টোটো চালিয়ে মোটামুটি সে ভালই আয় করতে শুরু করে। কিন্তু মন পড়ে থাকে সেই রান্নার দিকে। আসলে প্রত্যেক বাঙালির মধ্যে রান্না করার প্রতি একটা জন্মগত প্রতিভা আছে। টোটো চালানোর সময় বারবার সে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। অবশেষে মা ও স্ত্রী সহ বেশ কয়েকজন শুভানুধ্যায়ীর পরামর্শে গ্রামের মধ্যেই বিকালের দিকে সম্পূর্ণ নিরামিষ চপ, ঘুগনি সহ বিভিন্ন তেলেভাজার জিনিস তৈরির দোকান শুরু করে নীল। এই তেলেভাজার প্রতি বাঙালির একটা চিরন্তন আকর্ষণ আছে। তাছাড়া উৎসব বাড়িতে রান্না করতে গিয়ে ভেজিটেবল চপ তৈরি করার অভিজ্ঞতা তার আছে।

   গ্রামের মধ্যে দোকান হলেও ভিড় যথেষ্ট হয়। ভিড় সামলাতে স্ত্রী নন্দিতা স্বামীর পাশে এসে দাঁড়ান। এমনকি মাও থাকেন সন্তানের পাশে। মোটামুটি আয়ও হচ্ছে ভাল। তাদের আশা পুজোর সময় গ্রামে যখন লোকজন আসবে তখন বিক্রি আরও বাড়বে। তবে আজও সকালের দিকে টোটো নিয়ে বেরিয়ে পড়ে নীল। ওটাই তার আয়ের অন্যতম উৎস।

  স্বামীর এই প্রচেষ্টায় খুব খুশি স্ত্রী নন্দিতা। তার বক্তব্য, আমরা গরীব ঘরের সন্তান। স্বামী যদি সৎপথে আয় করেন তাতে তো কোনো অসুবিধা নাই? সন্তানদের তো মানুষ করতে হবে, লেখাপড়া শেখাতে হবে। তাকে বেশ গর্বিত লাগছিল। কথা বলতে বলতে চপ ও পাঁপড় ভাজার দিকে মনোযোগ দেন নন্দিতা। দোকানে তখন ক্রেতার ভিড় যথেষ্ট, সামলাতে তো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *