আজও দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে হামিরপুরবাসী

Spread the love

আজও দুর্গাপুজোর ঐতিহ্য বজায় রেখে চলেছে হামিরপুরবাসী

জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী, আউসগ্রাম, পূর্ব বর্ধমান -:

  সরকারিভাবে জমিদার নাহলেও জমিদারদের  মত বিত্তশালী ছিলেন আউসগ্রামের হামিরপুর গ্রামের 'মুখার্জ্জী' পরিবার। তবে তাদের মধ্যে জমিদারসুলভ গাম্ভীর্য ছিলনা, সহজেই সাধারণ মানুষের সঙ্গে তারা মিশতেন। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে তখন রাজ-পরিবার ও জমিদারদের হাত ধরে শুরু হয়েছে দুর্গাপুজো। সাধারণ মানুষের পক্ষে দুর্গাপুজোর মত ব্যয়বহুল পুজোর খরচ বহন করা সম্ভব ছিলনা। ফলে হামিরপুর গ্রামেও হতোনা দুর্গাপুজো। অবশেষে গ্রামের 'মুখার্জ্জী' বাড়ির হাত ধরে আউসগ্রামের হামিরপুর গ্রামে শুরু হয় দুর্গাপুজো। সেদিন মাটির ঘরে এক পাটায় সপরিবারে 'মা' এলেও তাতেই গ্রামবাসীরা  অকাল বসন্তের উৎসবে মেতে ওঠেন। এটা ছিল বাংলার ১২০৯ সালের ঘটনা।

  একটানা দীর্ঘদিন দুর্গাপুজো চলার পর  বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে যায় 'মুখার্জ্জী' বাড়ির আনা গ্রামের দুর্গাপুজো। বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রবীণ - সবাই মনের দুঃখে ভেঙে পড়েন। সেই দুঃখ দূর করার জন্য এগিয়ে আসেন গ্রামের বাসিন্দা দুর্গাপদ বাগ ও শিবপ্রসাদ বাগ। গ্রামের সবার সঙ্গে আলোচনা করে নতুন করে শুরু করেন দুর্গাপুজো। পুজো পরিচালনা করার জন্য গড়ে ওঠে  'হামিরপুর দুর্গাপুজো কমিটি'। মাটির ঘরের পরিবর্তে গড়ে উঠেছে 'মা' এর মন্দির। 'মা' ও অসুর একপাটাতে থাকলেও গত ২৫-৩০ বছর ধরে সন্তানদের জন্য আলাদা পাটা বরাদ্দ হয়েছে। পাওয়া গেছে সরকারি অনুদান। ফলে পুজোর জাঁকজমক ভাব বেশ কিছুটা বেড়েছে। পরিবর্তন শুধু এটুকুই।

 শুরু থেকে এখানে শাক্তমতে পুজো হয়। ফলে ছাগ বলির প্রচলন আছে। নবমীর দিন হয় মচ্ছব। সমগ্র গ্রামবাসীদের পাশাপাশি অন্য গ্রাম থেকে অনেকেই এসে এই মচ্ছবে অংশগ্রহণ করেন। বাকি পুজোর নিয়ম একই। তবে দশমী দিন যেভাবে গ্রামের মেয়ে-বৌরা সিঁদুর খেলায় মেতে ওঠেন সেটা সত্যিই অবর্ণনীয়। 

পুজোর অন্যতম আকর্ষণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে গ্রামের ছেলেমেয়েরা অংশগ্রহণ করে। তারাই সঙ্গীত, নৃত্য, আবৃত্তি ইত্যাদি পরিবেশন করে। জোরকদমে তার প্রস্তুতিও চলছে। জানা যাচ্ছে এবছর একদিন বাউল সঙ্গীতের আসর বসবে এবং একদিন পেশাদার দলের যাত্রা অনুষ্ঠিত হবে।

     তবে পুজো এলেই বড়দের সঙ্গে সঙ্গে ছোটদের ব্যস্ততা চরম বেড়ে যায়। সেইসময় 

পাপড়ি, সুরভী, রুমা, সন্দীপন, দেবদীপ, বাপী, শ্যামল, প্রীতম সহ ওদের সবার ‘ক্ষুদু’ পিসি যেন শ্বাস ফেলার সময় পায়না। তিনিও ওদের সবার সঙ্গে কিশোরী সুলভ আনন্দে মেতে ওঠেন। পুজোর সময় এটাই সবচেয়ে আনন্দের দৃশ্য। তবে ঘট বিসর্জনের সঙ্গে সঙ্গে নেমে আসে একরাশ বিষণ্নতা। আবার একবছরের অপেক্ষা। কথা বলতে বলতে গলা বুঁজে আসে গ্রামের মেয়ে পাপড়ির।

  এইভাবেই দুই শতাধিক বছর ধরে দুর্গাপুজোর আনন্দে মেতে ওঠে হামিরপুরবাসী। পরবর্তী প্রজন্ম এই ঐতিহ্য বজায় রাখবে এটাই সবার আশা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *