মাধ্যমিক মিলিনিয়াম-২০০০ ব্যাচের পুনর্মিলন

Spread the love

মাধ্যমিক মিলিনিয়াম-২০০০ ব্যাচের পুনর্মিলন

সেখ সামসুদ্দিন, ৭ অক্টোবরঃ ২৫ বছর পর পুরানো স্মৃতি উদ্বেলিত করে তোলে এক ভার্চুয়াল পুনর্মিলন অনুষ্ঠান। এরকমই এক স্মৃতিমেদুর অনুষ্ঠানের কথা জানান ডঃ সুভাষচন্দ্র দত্ত। তিনি বলেন হঠাৎ করে সৌগত ব্যানার্জী ফোন করে জানান আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবসে তারা পশ্চিম বর্ধমানের পানাগরের কাছে কাঁকসা ব্লকের বনকাটির অজয় নদীর তীরে দেউল পার্কে “ডাউন মেমোরি লেন ২০২৫” শিরোনামে অযোধ্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক মিলিনিয়াম-২০০০ ব্যাচের পুনর্মিলন অনুষ্ঠান করা হবে। সৌগত বলে, “৫ অক্টোবর ২০২৫ আন্তর্জাতিক শিক্ষক দিবস দিনটিকে বিশেষভাবে মিলিত হয়ে আমরা পালন করার জন্য
আপনার সঙ্গে দুপুর দুটোর সময় সকলে মিলিত হতে চাই কেননা আপনি আমাদের কাছে প্রিয় শিক্ষক ‘আইকন’। “আমরা সকলে আপনার মত আদর্শ মহান শিক্ষককে নিঃস্বার্থভাবে শ্রদ্ধা সম্মান ও ভালবাসা জানাতে চাই। আপনি অবশ্যই আমাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল মোড বা অনলাইনে ওই সময় আমাদের সঙ্গে থেকে একটু শুভেচ্ছা বার্তা জানাতে অনুরোধ করেন। ড. দত্ত এরকম একটা মিলেনিয়াম প্রস্তাব তথা মিলিনিয়াম অ্যাওয়ার্ড মনে করে সাদরে তাদের কথা দেন l ড. দত্ত বলেন ওই স্কুলে ২০০০ সালের মাধ্যমিকে সবথেকে ভালো রেজাল্ট হয়েছিল প্রচুর ফাস্ট ডিভিশন ওস্টার পেয়েছিল এবং যতদূর মনে পড়ে ৪৯ জন ছাত্র-ছাত্রী সেই সময় ছিল I জীবন বিজ্ঞানে প্রত্যেক ছাত্রই কম করে ৬০% উপর মার্কস পেয়েছিল এবং বেশিরভাগ ছাত্রই লেটার মার্কস পেয়েছিল। ঠিক দুপুর দুটোই সৌগত ভার্চুয়ালি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করার সাথে সাথে দেখতে পাই প্রায় ৪০ জন ছাত্রছাত্রী তাদের মিলেনিয়াম পুনর্মিলনী উৎসবে মিলিত হয়েছে। প্রত্যেকে নমস্কার করে বা হাত নাড়িয়ে দেখা করে ও কথা বলে। তারা জানায় তিনজন ছাত্রছাত্রীকে চিরকালের মতো হারিয়েছে এবং ৬ জন বিভিন্ন কাজে থাকার জন্য এখানে আসতে পারেনি। ভূগোল বিষয়ের পারদর্শী বর্তমান শিক্ষক (ছাত্র) ফাল্গুনী দে গান গাওয়ার পর তার বক্তব্যে সাহিত্যের ভাষায় জানাই:
সেইসব নাবালক কুঁড়ি-জন্মের কথা ফিরে ফিরে আসে পঁচিশ বছর পর। স্বপ্নবীজ পুঁতে দিয়েছিল কেউ কোন এক গোধূলির অবসরে হেমবর্ণ ফুলের নার্গিস বনে। তারপর একদিন নড়বড়ে সাইকেলের প্যাডেলে চনমনে ধুলো-পা উড়ে যায় ডানার সংলাপে। খোয়াইয়ের সোনাঝুরি পথে জামির তলায় বয়ঃসন্ধি জেগে ওঠে গোঁফের রেখাপাত ধরে। খিদের জল-মুড়ি-টিফিন ভাগ হয়ে যায় ধর্মের সীমান্তহীন অনুভবে। অজয়ের তীর ঘেঁষে গ্রামান্তর বিদ্যালয়ে গড়ে ওঠে আলোকনগরী। স্ফুলিঙ্গের আস্পর্ধা নিয়ে এক একটি জোনাকি ছড়িয়ে পড়ে দেশ দেশান্তরে, জন্ম নেয় অলীক আলোকবর্তিকা এক। স্রোতের বিপরীতে ঠিকানাহীন সংগ্রামী জীবনে পথে বিপথে সবাই হারিয়ে যায়, ভাগ্যের দরজায় কড়া নাড়ে। ফিরে আসে আড়াই দশক জীবন জীবিকার যাপন জ্যোৎস্নার সময় ব্যবধানে। কারা ভুলে যায় দিনগত অবক্ষয় যা কিছু, পুনর্মিলনের অঙ্গীকারে? পাশে সরিয়ে রাখে সব ব্যাক্তিগত চাওয়া পাওয়া যৌথ খামারের ফসল উৎসবে? কারা আজও মাষ্টারমশাইয়ের বেতের সামনে হাসিমুখে বাড়িয়ে দেয় হাত আরো এক আশীর্বাদের স্পর্শ মেখে নিতে? প্রকাশ চৌধুরী খুব সুন্দর গান সকলকে মাতিয়ে রাখে আর ছাত্র জীবনে ক্লাসে বেঞ্চ বাজানোর কথা সকলকে মনে করিয়ে দেয়। তার গান গাওয়ার পর সুদীপ্ত দত্তও অভিমত প্রকাশ করে। ২৫ বছর আগে শেষ দেখা হয়েছিলো অনেকের সাথে। হাতে গোনা কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ ছিলো এখনও। কে কোথায় আছে, কেমন আছে কিছুই জানতাম না। ২০০০ সালে মাধ্যমিক পাশের পর যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন। এখন সবাই নিজের নিজের সংসারের দ্বায়িত্ব পালনে ব্যস্ত। বন্ধু সোমনাথের উদ্দ্যোগে ২৫ বছর পর আজ পুনরায় মিলিত হলাম প্রায় সকলেই। আজ যেনো সবাই আমরা অযোধ্যা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর ছাত্র হয়ে গেলাম। সারাটা দিন কাটালাম হৈ হুল্লোর করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। স্কুলে যেমন মাতিয়ে রাখতো তথাগত, সৌগত, বাবু, মামা আজও তার অন্যথা হলো না। মুক্ত সেই একই রকম ভাবে রক্ষনশীল ভূমিকায়। পদ্মাবতী এখনও গান গায়। বুল্টির সেই গার্ডিয়ানশিপ আজও আমাকে বাচ্চা ভাবতে বাধ্য করে।
এতো পূর্ণতার মধ্যেও কিছু শূন্যতা থেকেই গেলো।এই কয়েকবছরে আমরা আমাদের তিনজন বন্ধু বান্ধবীকে হারিয়েছি। আজ এই মিলনী অনুষ্ঠান না হলে, হয়তো কোনোদিন জানতেই পারতাম না। আনন্দ এবং বেদনায় মিশ্রিত আজকের মিলনি অনুষ্ঠান। পদ্মাবতী গায়েন মন্ডল রবীন্দ্র সংগীত গাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার মনেপড়ে যায় যে সপ্তম শ্রেণীতে পদ্মাবতী কর্মশিক্ষায় ধানের মড়াই দিয়েছিল যা আজও স্মৃতি হিসাবে রাখা আছে শোকেসে I সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীর কথা বেশি করে মনে পড়ে যারা খেলার টিমে অংশগ্রহণ করে জিতিয়েছিল অথবা বিভিন্ন কম্পিটিশনের গান গেয়ে বা বিতর্ক করে অথবা প্রবন্ধ লিখে স্থান অধিকার করেছিল অথবা বিভিন্ন পরিবেশ বান্ধব অ্যাক্টিভিটি অঙ্কুর ইকো ক্লাবের মাধ্যমে আমার হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছিল। এই মিলেনিয়াম ব্যাচ প্রত্যেকেই মানব সম্পদ উন্নয়নে বা হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্টে একেক জন আইকন, প্রতিষ্ঠিত এবং নিজস্ব মহিমায় উজ্জল হয়ে এলাকা ও সমাজ গঠনের কাজে নিয়োজিত I আজ আমার গর্ব অনুভব হয় এইরকম ছাত্র-ছাত্রী যেন প্রতিটি স্কুলে তাদের পুনর্মিলনী উৎসব করে নূতন জাতীয় এডুকেশন পলিসি ২০২০ এবং রাজ্য এডুকেশন পলিসি ২০২৩ আরো উন্নত করে। ড. দত্ত তাদেরকে শুভবিজয়ার শুভেচ্ছা ও দীর্ঘায়ু সুস্থতা কামনা করে পরিবেশবান্ধব মানবিক আদর্শ দেশ গঠনের কথা বলেন। তাহলে ছাত্র-ছাত্রীরা স্বদেশকে নেতৃত্ব দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক জায়গায় নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে ও শাসন করতে পারবে বলে জাতীয় শিক্ষক ড. দত্ত মনে করেন I

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *