ইডেনে সিএবির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রিচাকে ‘বঙ্গভূষণ’ ও চাকরি দিলেন মমতা

Spread the love

ইডেনে সিএবির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রিচাকে ‘বঙ্গভূষণ’ ও চাকরি দিলেন মমতা

সৌরভ দত্ত, কলকাতা :ইডেনে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে বিশ্বজয়ী রিচা ঘোষকে জমকালো সংবর্ধনা দিল সিএবি। সেই সঙ্গে গুচ্ছ উপহার পেলেন বিশ্বজয়ী। চমকপ্রদভাবে রিচাকে বঙ্গভূষণ সম্মানে ভূষিত করল রাজ্য সরকার। সেই সঙ্গে সিএবির তরফে তাঁকে ৩৪ লক্ষ টাকা এবং সোনার ব্যাট ও বল উপহার দেওয়া হয়েছে। এসবের পাশাপাশি রাজ্য পুলিশের ডিএসপি পদে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে।
সোনার মেয়েকে বরণ করার জন্য রীতিমতো চাঁদের হাট হয়ে উঠেছিল ক্রিকেটের নন্দন কানন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, প্রতিমন্ত্রী মনোজ তিওয়ারি, সিএবি সভাপতি তথা প্রাক্তন ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ঝুলন গোস্বামী-সহ একাধিক প্রাক্তন ক্রিকেটার, সিএবির অন্য পদাধিকারীরা।
বিশ্বজয়ী বঙ্গকন্যা রিচার ঝুলিতে উপহারের ভান্ডার।
সিএবির তরফে রিচাকে প্রথমে উত্তরীয় তুলে দেওয়া হয়, তারপর ফুল-মিষ্টি। সোনার মেয়েকে শুভেচ্ছা জানাতে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয় সোনার ব্যাট ও বল। সঙ্গে ৩৪ লক্ষ টাকা উপহার। ফাইনালে রিচার ৩৪ রানের বিধ্বংসী ইনিংস ভারতের জয়ের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সেই ইনিংসকে স্মরণীয় করতেই ৩৪ সংখ্যাটা বাছা হয়েছে। যা তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আসল সারপ্রাইজ রাজ্য সরকারের তরফে রিচাকে রাজ্যের অন্যতম সেরা নাগরিক সম্মান বঙ্গভূষণ তুলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেই সঙ্গে উত্তরীয় ও সোনার চেন। সেই সঙ্গে তাঁকে রাজ্য পুলিশে সাম্মানিক ডিএসপি পদও দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সংবর্ধনার জন্য ফ্রিডম ট্রফির রেপ্লিকা তুলে দিয়েছিলেন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই ট্রফির রেপ্লিকাটিও উপহার স্বরূপ রিচাকে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
রিচা ঘোষের ইডেনের সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে চাঁদের হাট৷ সেখানে নস্টালজিক হয়ে পড়েন সিএবি প্রেসিডেন্ট সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়৷ তিনি এদিন ঝুলনদের সময়ের মহিলা ক্রিকেটের কথা বলেন৷ তিনি বলেন, ‘‘যখন আমি দেশের ক্যাপ্টেন ছিলাম ঝুলন গোস্বামীকে দৌড়াতে দেখতাম ইডেনে। তখনকার মহিলা ক্রিকেট এখনকার মত এত স্থিতিশীল এত অর্থনৈতিক জায়গা থেকে এত ভাল জায়গায় ছিল না৷’’
, ‘‘আজকের ঝুলন সহ যারা খেলত তাঁদের জন্যই আজ ভারতীয় মহিলা ক্রিকেটে এই জায়গায় পৌঁছেছে। জেমিইমা, শেফালি, স্মৃতি, হরমনপ্রীত এঁদের জন্যই আজকে দেশের ক্রিকেট এই জায়গায়। যখন ছেলেদের জন্য এখানে টি-টোয়েন্টি ফর্ম্যাটের টুর্নামেন্ট করার কথা ভাবি খবরের কাগজ বেরিয়েছিল।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সেটা দেখে মুখ্যমন্ত্রী মেসেজ করেন। তিনি বলেন তুমি মহিলাদের টুর্নামেন্ট করতে পার। এটা অনেকেই জানে না তখন রিচা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়নি। ডাবলু পি এল ওই জায়গায় পৌঁছেয়নি।’’
তিনি আরও বলেন, ‘‘সেটা দেখে মুখ্যমন্ত্রী মেসেজ করেন। তিনি বলেন তুমি মহিলাদের টুর্নামেন্ট করতে পার। এটা অনেকেই জানে না তখন রিচা ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়ন হয়নি। ডাবলু পি এল ওই জায়গায় পৌঁছেয়নি।’’

‘‘রিচার বয়স ২২ বছর সানার থেকেও ছোট। ছ নম্বরে নেমে যে খেলাটা খেলে সেটা খুব ডিফিকাল্ট জায়গা। এই জায়গায় ব্যাট করতে নেমে খেলাটা খুব কঠিন। রিচা এই টুর্নামেন্টে যে অবদান রেখেছে যখন যে ম্যাচে নেমেছে সেই জায়গায় ও নিজেকে প্রমাণ করেছে। যেটা কোনভাবেই স্মৃতি, হারমনপ্রীত থেকে কম নয়। আমরা চাই রিচা একদিন ঝুলন গোস্বামীর মতো জায়গায় পৌঁছাবে। একদিন যেন আমরা এখানে দাঁড়িয়ে বলতে পারি রিচা ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন।
‘‘রিচার বয়স ২২ বছর সানার থেকেও ছোট। ছ নম্বরে নেমে যে খেলাটা খেলে সেটা খুব ডিফিকাল্ট জায়গা। এই জায়গায় ব্যাট করতে নেমে খেলাটা খুব কঠিন। রিচা এই টুর্নামেন্টে যে অবদান রেখেছে যখন যে ম্যাচে নেমেছে সেই জায়গায় ও নিজেকে প্রমাণ করেছে। যেটা কোনভাবেই স্মৃতি, হারমনপ্রীত থেকে কম নয়। আমরা চাই রিচা একদিন ঝুলন গোস্বামীর মতো জায়গায় পৌঁছাবে। একদিন যেন আমরা এখানে দাঁড়িয়ে বলতে পারি রিচা ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন।”

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, রিচার মতো প্রতিভা পেয়ে বাংলা গর্বিত।ক্রীড়ামন্ত্রী থাকাকালীন বুলা চৌধুরী, সাইনি আব্রাহামকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেন। অলিম্পিকের সময় স্পোর্টস পলিসি করেছিলেন। প্রথম বঙ্গতনয়া হিসেবে রিচার বিশ্বকাপ জয়ে উচ্ছ্বসিত মুখ্যমন্ত্রী। আরও সাফল্যের শিখরে দেখতে চান। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে পড়েন নস্ট্য়ালজিক। বুলা চৌধুরীর অধ্যবসায় এবং সাফল্যের কথা তুলে ধরেন সিএবি-র চাঁদের হাটে। মমতা বলেন, ”বুলা চৌধুরী কমনওয়েলথ গেমসে যাওয়ার আগে অর্জুন পুরস্কারের আব্দার করেছিল। সেই সময়ে আমি বুলাকে বলেছিলাম, তুমি যদি কয়েকমাস প্রেম করা বন্ধ রাখো আর ছ’টা পদক আনতে পারো, তাহলে তোমাকে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হবে। বুলা কিন্তু কথা রেখেছিল। ওকে অর্জুন পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল।”

বিশ্বকাপ মাতানো রিচাকে একনম্বরে দেখতে চান মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ঝুলনরা জীবন পাত করেছে এই দিনটার জন্য। একটুর জন্য পারেনি। রিচারা‌ পেরেছে। ওদের কর্মের ফল এটা। ওকে এই জায়গা তৈরি করে দেওয়ার জন্য শ্যামা দেবীকে অভিনন্দন। রিচা‌ সহ ভারতীয় দলকে শুভেচ্ছা। বাবা-মা, বন্ধু-বান্ধব, কোচের সাহায্য না থাকলে এই জায়গায় পৌঁছতে পারত না। গৌতম দেবের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। শিলিগুড়িতে বড় সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে। রিচার বয়স অল্প। আমি মনে করি সাফল্যের রহস্য প্রকাশ্যে আনতে নেই। অনেকের টেকনিক্যাল পয়েন্ট থাকে। নিজস্বতা থাকে। এবার যে প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়েছে, পরের বার অন্য প্রক্রিয়া হতে পারে। আমি চাই মেয়েরা আরও এগিয়ে যাক। আমরা রিচার থেকে প্রত্যাশা রাখব, কিন্তু ওকে চাপ দেব না। রিচা বিশ্বসেরা হয়েছে। আশা করি ভবিষ্যতে আরও এগিয়ে যাবে। মানসিক শক্তি রাখতে হবে। দুর্গমকে হয় করতে হবে। লড়তে হবে, খেলতে হবে, জিততে হবে।’ সৌরভকে একদিন আইসিসির সভাপতি হিসেবে দেখতে চান মমতা ব্যানার্জি। রিচার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এসে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আইসিসি সভাপতি কার হওয়ার কথা ছিল? সৌরভের থেকে যোগ্য প্রার্থী কে হতে পারে? আমার বিশ্বাস, ও একদিন হবেই হবে। বাংলা বিশ্বজয় করবে।’
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেও কেন্দ্র সরকারকে অনুরোধ করেছিলেন, যাতে সৌরভকে আইসিসিতে পাঠানো হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেবার আইসিসির নির্বাচনে অংশ নেয়নি বিসিসিআই। সৌরভের আর আইসিসির চেয়ারম্যান হওয়া হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আক্ষেপ, ‘বাঙালির শত্রু’দের জন্যই ওই মহার্ঘ্য পদে বসতে পারেননি সৌরভ। তবে তাঁর বিশ্বাস একদিন বিশ্ব ক্রিকেটার হর্তাকর্তা সৌরভ হবেনই।
ইডেনে বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বললেন, “আমাদের বন্ধু আছে, শত্রুও আছে। সৌরভ দুঃখ পাবে। ও ইন্ডিয়ার ক্যাপ্টেন ছিল। আমি বড্ড ঠোঁটকাটা। আই সৌরভের আইসিসি সভাপতি হওয়ার কথা ছিল। সৌরভ ছাড়া অন্য কারও ওই পদে থাকার কথা নয়।” অর্থাৎ নাম না করে তিনি নিশানা করেছেন আইসিসির বর্তমান সভাপতি জয় শাহকেই। বলা ভালো, তাঁর বাবা অমিত শাহকে। তবে মুখ্যমন্ত্রী আশাবাদী, আজ না হলেও আগামী দিনে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ পদে বসবেনই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *