আইসিসিআরে বিশিষ্টজনদের সাথে নিয়ে আমরা ‘বাউল প্রেমিক'(৪র্থ সংস্করণ) এর বই প্রকাশিত হলো
গোপাল দেবনাথ ,
, গত শনিবার সন্ধেবেলায় সত্যজিৎ রায় অডিটোরিয়াম, আই সি সি আর, কলকাতার প্রেক্ষাগৃহে পার্বতী বাউলের উপস্থাপনায় প্রকাশিত হল শ্রী সনাতন বাউল দাস ঠাকুর লিখিত ‘বাউল প্রেমিক’ গ্রন্থের চতুর্থ সংস্করণ।এই আনন্দযজ্ঞকে স্মরণীয় করতে উপস্থিত ছিলেন বাউল সাধুগুরু, বিশিষ্ট লেখক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী রূপা গাঙ্গুলি, সংগীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র, প্রণতি ঠাকুর, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, অভিনেত্রী রিতা দত্ত চক্রবর্তী, বাংলা ব্যান্ড দোহারের সদস্যরা, মদন দাস বৈরাগ্য, শর্মিলা বসু ঠাকুর, অজন্তা রায় চৌধুরী, প্রচেত গুপ্ত, দামোদর গোঁসাই, বিশ্বনাথ দাস বাউল, মদন গোঁসাই, অজন্তা রায় চৌধুরী, আই সি সি আর এর ডিরেক্টর মীনাক্ষী মিশ্র সহ বিশিষ্টজন।উপস্থিত অতিথিদের বই সম্পর্কিত মতামত প্রকাশ এবং সাধু গুরুদের মহাজনী পদের মধ্য দিয়ে স্মরণ ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করলেন পরম গুরু শ্রী সনাতন বাউল দাস ঠাকুর – এর মহৎ সৃষ্টি ‘বাউল প্রেমিক’ গ্রন্থের।
অনুষ্ঠানের একটি অংশে শ্রী সনাতন বাউল দাস ঠাকুরের জীবন ও শিক্ষা নিয়ে উপস্থাপন করা হলো একটি সংক্ষিপ্ত প্রামাণ্যচিত্র।পার্বতী বাউল এবং অন্য বাউল সাধুগুরুরা তাঁদের মহাজনী পদের মধ্য দিয়ে তুলে ধরলেন এই গ্রন্থের গভীর তত্ত্ব । অনুষ্ঠান শেষে পাঠকদের জন্য ছিল পার্বতী বাউলের স্বাক্ষরিত বই কেনার সুযোগ।
‘বাউল প্রেমিক’ বই নিয়ে পার্বতী বাউল কি বললেন জেনে নিন।
-“বাউল প্রেমিক বইটি শ্রী সনাতন বাউল দাস ঠাকুরের সম্পূর্ণ সাধনজীবনের ফসল। আমি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে চাই যে, এই বইটিই প্রথম— যা আধুনিক শিক্ষিত সমাজের সঙ্গে বাউল সাধনাকে পরিচিত করাতে চেয়েছে, যা একজন বাউলসাধকের নিজের লেখা। ‘বাউল প্রেমিক’ গ্রন্থটি একজন বাউল ও প্রেমিকের মধ্যে কথোপকথন। প্রেমিক প্রশ্ন করেন আর বাউল তাঁর মহাজনী জ্ঞানভাণ্ডারের উপরে ভিত্তি করে পদগুলিকে ব্যাখ্যা করে প্রেমিকের প্রশ্নের সমাধান করেন। এই কথোপকথন চলতে চলতে শেষের দিকে বাউল গভীর সাধনতত্ত্বে প্রবেশ করেন।
সেই কারণেই এই বইটি অন্য কোনো বর্ণনামূলক বইয়ের চেয়ে যথেষ্ট আলাদা। বহু প্রাচীন ও মূল্যবান শাস্ত্র-পুঁথিতেও এমন কথোপকথনের মাধ্যমে বহু গভীর সাধন-রহস্যের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। যেমন— কঠোপনিষদে নচিকেতা-ধর্মরাজের কথোপকথন বা শিব স্বরোদয়াতে শিব-পার্বতীর কথোপকথন। কোথাও যেন বইটি আবার একটি নাটকের ভাবও তৈরি করে। ‘বাউল প্রেমিক’ গ্রন্থটি বাউল সাধকদের একনিষ্ঠ জীবনের সাথে আমাদের পরিচয় ঘটায়। গ্রন্থটি পাঠ করে আমাদের বাউল মার্গ (যোগ ও ভক্তি) সম্বন্ধে অনেক ধারণা পরিষ্কার হয়। বাউল সঙ্গীত ও সাধনা পরস্পরের পরিপূরক— একটিকে বাদ দিয়ে অন্যটি নয়। যত দিন বাউল সাধনা ও সঙ্গীত সম্পৃক্ত থাকবে, তত দিন বাউলের ভাব বজায় থাকবে। সাধনাবিহীন শুধু সঙ্গীত হয় না।
বাউল মার্গে পুরো শিক্ষাটাই শ্রুতিনির্ভর। সেই ধারা অনুসরণ করে গুরু শ্রী সনাতন দাস বাউল এই গ্রন্থে লিখিত রূপে প্রকাশ করেছেন। সেই জন্য এই গ্রন্থটি বাউল সমাজের একটি মূল্যবান আকরগ্রন্থ ও সম্পদ হয়ে থাকবে। এবং আগামীতে যাঁরা বাউল চর্চা ও সাধনা করবেন, অথবা যাঁরা আগ্রহী হবেন, তাঁদের এই গ্রন্থ অবশ্যই পঠনীয়।
পূর্ব প্রকাশিত বাউল প্রেমিক গ্রন্থটিকে এই চতুর্থ সংস্করণে ‘সূত্রপাত’ অংশে রাখা হয়েছে এবং অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি ‘অন্তিম চরণ’ অংশে রাখা হয়েছে। তৃতীয় সংস্করণে বাউল ও প্রেমিকের মধ্যে যে বার্তালাপের সূত্র খণ্ডিত ছিল এই সংস্করণে তাদের কথোপকথন একই সূত্রে একটি নদীর প্রবাহের মতো নিরন্তন ভাবে বাহিত হলো। জাপানের অধ্যাপক শ্রী মাসাইউকি ওনিশি ও কলকাতা নিবাসী অধ্যাপক শ্রী দুর্গা দত্ত তাঁদের নেওয়া সাক্ষাৎকারটি নির্দ্বিধায় প্রকাশ করতে দেওয়ায়, যাঁরা বাবাকে দেখেননি তাঁরা কথা/শব্দের মাধ্যমে বাবাকে স্পর্শ করতে পারবেন বলে আশা রাখি। এ ছাড়াও এই গ্রন্থে সংযোজিত হল বাবার স্বরচিত সঙ্গীত ও বেশ কিছু ছবি। বাবার গাওয়া কিছু অডিও ট্র্যাকও এই বইতে সংযোজন করা হল।
আত্মতত্ত্বে সমৃদ্ধ এই বই আপনাদের অন্তরকে বিকশিত করুক। বিশ্বে বিরাজমান অনুরাগী পাঠকদের উপর মহাত্মা-সাধক-গুরু শ্রীশ্রী সনাতনদাস বাউলের আশীর্বাদ ও কৃপা বর্ষিত হোক— এই প্রার্থনা ও সংকল্প নিয়ে আমি এই দিব্য পুস্তকখানি আমার গুরুর চরণে অর্পণ করলাম”। ।
![](https://banglarkhoborakhobor.com/wp-content/uploads/2023/06/IMG-20230612-WA0047.jpg)