রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটির উদ্যোগে রবীন্দ্র-নাটক প্রতিযোগিতা
রাজেন বিশ্বাস,
জোড়াসাঁকো পুণ্যভূমিতে অবস্থিত বাংলার ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রবীন্দ্র ভারতী সোসাইটি গত ৭, ৮ এবং ৯ ই এপ্রিল – এই তিন দিন রবীন্দ্র-নাট্য প্রতিযোগিতার আয়োজন করে থাকে রথীন্দ্রমঞ্চে। সারা বাংলা থেকে মোট আটটি নাট্যসংস্থা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে মঞ্চে উপস্থাপনা করল কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা কবিতা, ছোটগল্প অবলম্বনে নির্মিত আটটি নাট্যরূপ। নাটকগুলি হল – সমস্যাপূরণ, কাবুলীওয়ালা, সম্পত্তি সমর্পণ, মাল্যদান, ভৃত্য, খ্যাতির বিড়ম্বনা, তোতাকাহিনী ও রাজদেউল। শ্রোতৃদর্শক পরিপূর্ণ প্রেক্ষাগৃহে পরিবেশিত ও অভিনয়গুণে সমৃদ্ধ প্রতিটি নাটক দর্শকদের মন জয় করে নেয়। নাটক প্রতিযোগিতা চলাকালীন বিচারকমন্ডলীর ভূমিকা পালন করেন বাংলা নাট্যজগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব ডাঃ বাসুদেব মুখোপাধ্যায়, মুরারী মুখোপাধ্যায় ও শ্রীমতী গগনদীপ। প্রতিযোগিতার শেষদিন (৯ ই এপ্রিল) ফলাফল ষোষণা সহ সফল প্রতিযোগিদের শংসাপত্র, স্মারক ইত্যাদিতে ভূষিত করা হয়, এছাড়াও সকল নাট্যগোষ্ঠীকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্যও শংসাপত্র প্রদান করা হয় সোসাইটির তরফে। এই সন্ধ্যায় বিশিষ্ট অতিথির আসন অলংকৃত করেন বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্র জগতের প্রখ্যাত তারকা পরান বন্দ্যোপাধ্যায়। মঞ্চে উপবিষ্ট বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্বদের সম্বর্ধনা জ্ঞাপনের পর সোসাইটির তরফে প্রারম্ভিক ভাষণ দেন সাধারণ সম্পাদক সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়। তিনি তাঁর ভাষণে এই বিপুল কর্মকাণ্ডের পটভূমিকা এবং তার আয়োজন ও রূপায়নে সোসাইটির অক্লান্ত প্রচেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরেন। এর পর নাটকের বিচারকগণ এবং বিশিষ্ট অতিথি পরান বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের বক্তৃতায় সোসাইটির এই মহতী উদ্যোগ ও প্রয়াসের ভূয়সী প্রশংসা করেন, সমাজের অগ্রগতির ক্ষেত্রে নাটকের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করেন। সেরা প্রযোজনায় প্রথম স্থান লাভ করেন হরিনাভী দৃশ্যকাব্য সমিতি, সম্পত্তি সমর্পণ নাটকের জন্য – সেরা পরিচালকের সম্মান লাভ করেন তাপস অধিকারী, চাপড়া দৃক নাট্যগোষ্ঠীর তোতাকাহিনী নাটকটির জন্য। সেরা অভিনেতার পুরস্কার লাভ করেন অলোক মজুমদার, হরিনাভী দৃশ্যকাব্য সমিতি, সম্পত্তি সমর্পণ নাটকে যজ্ঞনাথ চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। সেরা অভিনেত্রী সম্মানে ভূষিতা হন নীলাঞ্জনা মুখোপাধ্যায়, নিউটাউন নাট্য বিহঙ্গম, মাল্যদান নাটকে পটল চরিত্রে অভিনয়ের জন্য। সেরা শিশুশিল্পীর শিরোপা লাভে প্রত্যুষা হাজরা, হাওড়া সন্ধানী শিল্পীগোষ্ঠী, কাবুলীওয়ালা নাটকে মিনি চরিত্রে অভিনয় দক্ষতার স্বীকৃতি স্বরূপ।নাটকের প্রতিযোগিতা শেষ ও বিচারকমন্ডলীর ফলাফল ঘোষণার সন্ধিক্ষণে সোসাইটির উদ্যোগে বআয়োজিত হয় আর একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান – প্রাক নববর্ষ বরণ। সোসাইটির শিল্পীদের অংশগ্রহণে নৃত্য, সঙ্গীত, কবিতাপাঠ ও ভাষ্য সহযোগে পরিবেশিত হয় – বিভিন্ন ধারায় বাংলা গান ও তার সামাজিক প্রভাব। অংশগ্রহণে ছন্দা দত্ত, হিমাদ্রী মুখার্জী, পার্থজিত সেনগুপ্ত , ললিতা সিনহা ,রূপান্জলি চৌধুরী, দেবাশিষ সেনগুপ্ত ,সুমিতা রায়(নৃত্য) প্রমুখ।সোসাইটির তরফে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সদস্য সত্যকাম বাগচী। সমবেত কণ্ঠে ভারতের জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ার পর অনুষ্ঠান সমাপ্ত হয়।