আউসগ্রাম পুলিশের মানবিক মুখের সাক্ষী থাকল এলাকাবাসী
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
রাজনৈতিক দল ও একশ্রেণির স্বঘোষিত সমাজসেবীর সৌজন্যে পুলিশ মানেই ঘুষখোর, মেরুদণ্ডহীন, দলদাস, চটিচাটা। পরবর্তীকালে হয়তো নতুন কোনো শব্দ বন্ধনী বর্ষিত হবে তাদের উপর। শাসক বদলালেও পুলিশ বাহিনীর দিকে ছুড়ে দেওয়া বিশেষণগুলো বদলায় না। অথচ আইনের রক্ষক পুলিশ বাহিনী কখন যে নীরবে সত্যিকারের সমাজসেবক হয়ে উঠেছে সেটা টের পাওয়া যায়নি। সামাজিক জীব হিসাবে সমাজের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব তারা বারবার পালন করে যাচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা বা অন্য সময় তাদের ভূমিকা খুবই প্রশংসনীয়। এবার আউসগ্রাম পুলিশের মানবিক মুখ দেখতে পেল এলাকাবাসী।
কিছুদিন আগে আকস্মিক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান আউসগ্রাম থানার গাড়ির ড্রাইভার বিশ্বনাথ মুর্মু। দীর্ঘ পঁচিশ-ছাব্বিশ বছর ধরে থানার গাড়ি চালাতে গিয়ে নিজের অজান্তেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন থানার সবার প্রিয়, আপনজন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন তিনি। স্বাভাবিকভাবে পাঁচ কন্যা সন্তানকে নিয়ে অকুল পাথারে পড়ে যান সদ্য স্বামীহারা স্ত্রী। স্বামীর শোক ভোলার আগেই কিভাবে সন্তানদের মুখে দু'বেলা দু'মুঠো খাবার তুলে দেবেন, তাদের ভবিষ্যত কি হবে - এইসব ভেবে কার্যত দিশেহারা হয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু তিনি জানতেন না খাকি পোষাকের নীচে মানুষগুলির একটা মানবিক হৃদয় আছে। সেই মানবিক হৃদয় নতুন বছরের প্রাক্কালে তার এবং সন্তানদের জন্য বয়ে নিয়ে এলো এক সুখবর। সদ্য স্বামীহারা স্ত্রী পেলেন আশার আলো, বাঁচার ঠিকানা। সৌজন্যে আউসগ্রাম থানা, গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ি ও ছোড়া পুলিশ ফাঁড়ির আধিকারিকরা এবং ডিএসপি (ডি এণ্ড টি) বীরেন্দ্র কুমার পাঠক ও সর্বোপরি পূর্ব বর্ধমান জেলা পুলিশ সুপার।
গত ১৪ ই এপ্রিল আউসগ্রাম থানায় কাজের জন্য বিশ্বনাথ বাবুর স্ত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হয় একটি নিয়োগ পত্র। শুধু তাই নয় পাঁচ সন্তানের ভবিষ্যত আর্থিক নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেকের জন্য কিছু কিছু পরিমাণ অর্থ ব্যাংকে স্হায়ী আমানত করে দেওয়া হয়। পুলিশ আধিকারিকদের উদারতায় আপ্লুত হয়ে ওঠেন তিনি ।
তখন আউসগ্রাম থানায় উপস্থিত ছিলেন ডিএসপি (ডি এণ্ড টি) বীরেন্দ্র কুমার পাঠক, আউসগ্রাম থানার আইসি আব্দুর রব খান, গুসকরা পুলিশ ফাঁড়ির ওসি নীতু সিং, ছোড়া থানার ওসি পঙ্কজ নস্কর সহ অন্যান্য পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশ কর্মীরা।
সমস্ত পুলিশ আধিকারিকদের কাছে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বিশ্বনাথ বাবুর স্ত্রী বললেন- উনারা না থাকলে ছেলেমেয়েদের পড়শোনা তো দূরের কথা আমার সন্তানদের নিয়ে হয়তো উপোস করে মরতে হতো।
অন্যদিকে বীরেন্দ্র বাবু বললেন - আমাদের পরিবারের সদস্য ছিলেন বিশ্বনাথ বাবু। তার পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পেরে আমরা খুশি। বিশ্বনাথ বাবু ফিরে আসবেন না ঠিকই কিন্তু উনার স্ত্রী ও সন্তানরা আছেন। তাদের জন্য আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব করলাম। আমি গর্বিত আমার বাহিনীর সদস্যদের জন্য। আমাদের আবেদনে সাড়া দেওয়ার জন্য আমরা আমাদের এসপি সাহেবের কাছে কৃতজ্ঞ।