সরকার তুমি কার?
জ্যোতি প্রকাশ মুখার্জ্জী
খবরে প্রকাশ - ১০০ দিনের কাজ নেমে আসবে ১৭ দিনে, প্রায় ১৫ কোটি কর্মহারা হবে (সূত্র - বর্তমান, ৩ রা এপ্রিল) ইত্যাদি। সিএমআইই রিপোর্টে নাকি বলা হয়েছে দেশের বেকারত্বের হার বেড়ে হয়েছ ৭.৮ শতাংশ- ৩ মাসে সর্বোচ্চ। চাকরি হারিয়েছে ২২ লক্ষ।
একশ দিনের কাজের বিষয়টি সামনে আসতেই সমাজ মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য ভেসে আসতে শুরু করেছে। অনেকের বক্তব্য - ঠিক হয়েছে। বহু টাকা নয়ছয় হয়েছে। যেহেতু সিদ্ধান্তটা কেন্দ্র সরকারের তাই নিশ্চিতভাবেই বলা যায় মন্তব্যগুলোর মূল লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
১০০ দিনের কাজ নিয়ে এই রাজ্যে দুর্নীতি হয়েছে সেটা কখনোই অস্বীকার করা যাবেনা। বাম আমলে দ্যাখা গ্যাছে এক শ্রেণির বাম নেতা কোনো কাজ না করেই টাকা পেয়েছে। এমনকি উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা হয়েছে। তৃণমূল আমলে সেটারই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। শোনা যায় ১০০ দিনের কাজের জন্য জনৈক অঞ্চল সভাপতি নাকি জেসিবি দিয়ে মাটি কেটেছে এবং উপভোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে। যদিও গত দেড় বছর ধরে কেউ এই খাতে একটা টাকাও পায়নি, উল্টে পকেট থেকে টাকা গ্যাছে। এটা অবশ্যই দুর্নীতি। এসব নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার। দরকার হলে কেন্দ্র সরকার নিজে কাজের তদারকি করুক। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠতেই পারে – রাজ্য সরকারকে রেখে লাভ কি? নেতারা দুর্নীতি করবে, ফলভোগ করতে হবে সাধারণ মানুষকে – সত্য সেলুকাস কি বিচিত্র এই দেশ!
কিন্তু প্রশ্ন হলো শুধু যদি পশ্চিমবঙ্গে দুর্নীতি হয় তাহলে কেন সমগ্র দেশের গরীব মানুষকে তার ফল ভোগ করতে হবে? এই মুহূর্তে দেশের অধিকাংশ রাজ্যে বিজেপি সরাসরি অথবা যৌথভাবে ক্ষমতায় আছে। তাহলে নিশ্চয়ই বিজেপি শাসিত ও অন্যান্য রাজ্যগুলোও এই দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত আছে। কেন্দ্র সরকারের এই সিদ্ধান্তের জন্য প্রতিবাদ হওয়া উচিত।
গ্রামীণ মানুষের রোজগারের জন্য প্রথম ইউপিএ সরকার প্রবর্তিত '১০০ দিনের কাজ' প্রকল্পটি যথেষ্ট জনপ্রিয় ছিল। অস্বীকার করার উপায় নাই গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নতির ক্ষেত্রে প্রকল্পটি বেশ প্রভাব ফেলেছে। ১০০ দিনের কাজের টাকা না পাওয়ায় গত বছর পুজোর বাজার কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল সেটা বস্ত্র ব্যবসায়ীদের কাছে খোঁজ করলেই জানা যাবে। গত প্রায় দশ বছর ধরে বিজেপি পরিচালিত কেন্দ্র সরকার গ্রামীণ মানুষের আয়ের বিকল্প ব্যবস্থা না করে প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়ার কারণ কি? হতে পারে ভারতবাসীর মন থেকে কংগ্রেসের নাম মুছে দেওয়ার আত্মঘাতী বা মরিয়া প্রচেষ্টা?
এর আগে র্যাশন কার্ড, আধার কার্ড, প্যান কার্ডের সঙ্গে মোবাইল নাম্বার লিঙ্ক করাটা বাধ্যতামূলক করা হয়। এরফলে প্রয়োজন না থাকলেও একজন গরীব মানুষ 'সিম' রিচার্জ করতে বাধ্য হচ্ছে। ঘুরপথে বিভিন্ন বেসরকারি মোবাইল সার্ভিস প্রোভাইডারদের প্রতিমাসে আয়ের পথ প্রশস্ত করে দেওয়া হচ্ছে। এখন আবার এক হাজার টাকার বিনিময়ে আধার কার্ডের সঙ্গে প্যান কার্ডের লিঙ্ক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কেন? প্যান কার্ড করতে গ্যালে ফোন নাম্বার লাগে। ফোন নাম্বারের সঙ্গে আধার কার্ডের লিঙ্ক তো আগেই হয়ে আছে। তারপরও কেন? সুদখোর মহাজনরাও মনে হয় এইভাবে টাকা আদায় করেনা।
অদ্ভুতভাবে নীরব রাজনৈতিক দলগুলো। কোনো প্রতিবাদ নাই। তাহলে কি ধরে নিতে হবে মুখেই সব গরীব দরদী পিছনে অন্য কোনো গল্প আছে? আসলে কয়েক দিন আগে দেখছিলাম কেন্দ্র সরকার নাকি বিপুল পরিমাণ ঋণ নিচ্ছে। শূন্য কোষাগার পূর্ণ করার জন্যেই কি এইভাবে টাকা নেওয়ার গল্প! হতেও পারে!