অনিমা মুখোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার

Spread the love

ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামীণ লোকসংস্কৃতি যাত্রাপালা। এবার সেই লুপ্তপ্রায় লোকসংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখতে, যাত্রাপালার প্রসারের জন্য এবং গ্রামের অপেশাদার যাত্রা শিল্পীদের উৎসাহ দিতে মায়ের স্মৃতিতে পুরস্কার চালু করলেন ছেলে। শনিবার ভাতারের দাউড়াডাঙ্গা গ্রামে যাত্রাপালার মঞ্চ থেকে তিন অপেশাদার যাত্রা শিল্পীকে দেওয়া হয় ‘অনিমা মুখোপাধ্যায় স্মৃতি পুরস্কার’। গত বছর ওই গ্রামে মঞ্চস্থ হয় ‘অন্ধ গলির বন্দী পাখি’ যাত্রাপালা। ওই যাত্রায় সেরা তিন অভিনেতা সুমন চট্টোপাধ্যায়, সুমন্ত চট্টোপাধ্যায় এবং রঘুনাথ সরকারের হাতে পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে গ্রামের ধর্মরাজ পুজো উপলক্ষে প্রতি বছর যাত্রানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় দাউড়াডাঙ্গা গ্রামে। এর দু’ তিন মাস আগে থেকে ধর্মরাজ মন্দির চত্বরে চলে মহড়া। মূলত গ্রামের যুবকেরাই অভিনয় করেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা প্রদীপ মুখোপাধ্যায় পেশায় একজন পঞ্চায়েত কর্মী। এছাড়া তিনি গ্রামীণ বিভিন্ন লুপ্ত প্রায় লোক সংস্কৃতি নিয়ে দীর্ঘ দু’দশকের বেশি সময় ধরে নিরলস ভাবে কাজ করছেন। বিভিন্ন পত্র পত্রিকাতে লেখালেখিও করেন। লোক সংস্কৃতি ও আঞ্চলিক ইতিহাস নিয়ে তাঁর অনেক মূল্যবান লেখা রয়েছে। তিনি জানান, “কয়েক দশক আগে পর্যন্ত গ্রামেগঞ্জে নিয়মিত যাত্রাপালার আয়োজন করা হত। গ্রামের চন্ডীমন্ডপে বা আটচালায় যাত্রাপালার আয়োজন হত। তখন গ্রামের মানুষের কাছে সেটাই ছিল অন্যতম বিনোদনের মাধ্যম। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে বসেছে। গ্রামে অপেশাদার শিল্পীর সংখ্যাও দিন দিন কমছে। এরই মধ্যে কিছু মানুষ অনেক প্রতিকূলতা স্বত্বেও শখে সেটা টিকিয়ে রেখেছেন। বর্তমান সরকারের আমলে অনেক জায়গাতেই সেই সংস্কৃতির প্রসারে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমার মা যাত্রা দেখতে খুব ভালো বাসতেন। তিনি যাত্রার পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। তাঁদের উৎসাহিত করতে এই উদ্যোগ”।
জানা গিয়েছে, প্রদীপের বাবা নীরদ বরণ মুখোপাধ্যায় দীর্ঘদিন ধরে যাত্রাপালায় অপেশাদার শিল্পী হিসাবে অভিনয় করেছেন। প্রায় ৪০ বছর ধরে তিনি গ্রামে বিভিন্ন যাত্রাপালায় অভিনয় করেন। নির্দেশনাও দেন। তাঁর অভিনীত যাত্রাগুলির মধ্যে উল্লেখ্যোগ্য হল ‘রাধার নিয়তি’, ‘একটি পয়সা’, ‘গরীব কেন মরে’, ‘অভাগীর কান্না’, ‘এ পৃথিবী টাকার গোলাম’, ‘শেষ পরাজয়’, ‘অভাগিনী মা’।
তার ছেলে প্রদীপ মুখোপাধ্যায় একজন লোকসংস্কৃতি গবেষক। তিনি বলেন, “গ্রামে গ্রামে অপেশাদার শিল্পীদের সংখ্যা দিন দিন কমছে। গত বছর গ্রামে যে যাত্রাপালা অনুষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে যে সমস্ত শিল্পীরা অভিনয় করেছেন, তাদের মধ্যে সেরা তিনজনকে এবছর পুরস্কৃত করা হয়েছে।
অভিনেতা, দাউড়াডাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা সুমন, রঘুনাথেরা জানান, “এই পুরস্কার আমাদের মত যাত্রাশিল্পীদের ভালো অভিনয় করতে আরো অনুপ্রেরণা যোগাবে”।
প্রদীপের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন, ‘আমরা যাত্রা ভালোবাসি’ নামে একটি সংস্থার কর্মকর্তা মৃন্ময় চক্রবর্তী। সামাজিক মাধ্যমেও এই উদ্যোগের প্রশংসায় ভরিয়ে দিয়েছেন নেটিজেনরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *