মোল্লা জসিমউদ্দিন,
নির্ভীক সাংবাদিকতায় সংবাদমাধ্যমের উপর আক্রমণের ঘটনা নুতন নয়।তবে এবার এক প্রথমসারির বাংলা দৈনিক কাগজের সাংবাদিক এবং সেইসাথে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবীর উপর আক্রমণের ঘটনায় সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ প্রতিবাদ জানালেন। আইনজীবী থেকে সাংবাদিক, চিকিৎসক থেকে মানবাধিকার কর্মী।প্রত্যেকেই প্রেস রিলিজ করে সাংবাদিকের উপর আক্রমণের নিন্দা জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আবেদন রেখেছেন। মঙ্গলবার প্রতিবাদী আইনজীবী ও সাংবাদিকের পাশে দাঁড়ালেন শহরের বিশিষ্টজনেরা। সম্প্রতি ওই প্রতিবাদীর বাড়িতে হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানানোর পাশাপাশি অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানানো হয়েছে। পুলিশি নিষ্ক্রিয়তা নিয়েও সরব হয়েছেন তাঁরা। প্রতিবাদী আইনজীবী-সাংবাদিকের হয়ে সোচ্চার হয়েছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য, অরুনাভ ঘোষ, জয়ন্তনারায়ন চট্টোপাধ্যায়, শীর্ষেন্দু সিংহ রায়, বৈদুর্য্য ঘোষাল, কলকাতা হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রাক্তন সভাপতি ও সম্পাদক উত্তম মজুমদার ও অমলকুমার মুখোপাধ্যায়, বার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী কমিটির সদস্য সৌগত রায়, রাজ্য বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায়, কাউন্সিলের সদস্য ইন্দ্রনীল বসু, আইনের অধ্যাপক সৌমদীপ কুন্ডু, বিশিষ্ট মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রঞ্জন ভট্টাচার্য, ইন্ডিয়ান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েসনের রাজ্য সম্পাদক রাজু বিশ্বাস, পরিবেশবিদ বিশ্বজিৎ মুখোপাধ্যায় ও বিবর্তন ভট্টাচার্য, কুমুদ সাহিত্য মেলা কমিটির সম্পাদক মোল্লা জসিমউদ্দিন সহ প্রমুখ। জানা গিয়েছে, দিন দশেক আগে কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী ও সাংবাদিক মুকুল বিশ্বাসের নদিয়ার চাকদহের বাড়িতে পরপর দু’দিন বোমা মারা হয়। তাঁর বাড়ি, গাড়ি এবং চেম্বার ক্ষতিগ্রস্থ হয়। অভিযোগ মূলত স্থানীয় দুই প্রভাবশালী ব্যক্তি পার্থপ্রতিম দে ওরফে পান বাপি এবং তার ভাই বেনুর বিরুদ্ধে। পুলিশে অভিযোগ জানানো হলেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে দাবি স্থানীয়দের। এর প্রতিবাদে পাঁচ ঘন্টা পুলিশের গাড়ি ঘিরে এবং রাস্তা অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী। চাকদহ থানার আইসি অপসারন চাওয়া হয়। স্থানীয় মাফিয়া পান বাপি এবং তার ভাইয়ের গ্রেপ্তার দাবি করেন বিক্ষোভকারীরা। তারপরও অবশ্য কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি প্রশাসনের তরফে। যদিও অভিযুক্তদের পক্ষে সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। এলাকার বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকুল বিশ্বাস গ্রামের গরীব মানুষদের বিনামূল্য আইনি পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া এলাকার গাছ কাটা এবং জলাভূমি ভরাট নিয়ে একাধিক প্রতিবাদ কর্মসূচি তিনি নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, বছর দুয়েক আগে একটি ব্যাঙ্ক ডাকাতির মামলায় চাকদহ থানার তৎকালীন মেজোবাবু এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের ভাই বেনুকে দুর্নীতি দমন শাখার পুলিস গ্রেপ্তার করেছিল। সেই মামলা লড়েছিলেন এই আক্রান্ত মুকুল বাবু। দাবি, তাকে মামলা থেকে সরানোর জন্য পুলিশ এবং অভিযুক্তদের তরফে বিভিন্ন রকমভাবে চাপ দিতে থাকে। তারপর মুকুলবাবু মামলা থেকে সরে না যাওয়ায় তার চেম্বার এবং গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ । তার নামে মিথ্যে মামলা দিয়ে হেনস্থা করা হয় বলে অভিযোগ । এই সব মিথ্যে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন এলাকার বেশিরভাগ মানুষ।মুকুলবাবু জানিয়েছেন, -” দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কারনেই তাঁকে বারবার টার্গেট করা হচ্ছে। রাজনৈতিক ব্যক্তি, এবং পুলিশের একাংশ একসঙ্গে চক্রান্ত করছে”। বিশিষ্টজনেরা জানিয়েছেন, -“অবিলম্বে বোমা মারার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে হবে। প্রতিবাদী মুকুলবাবুর বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে”। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ এবং অভিযুক্ত পার্থপ্রতিম দে ও তার ভাই। পুলিশ জানিয়েছে, বোমা মারার অভিযোগ হয়েছে। কারা এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।পার্থপ্রতিমবাবুর বক্তব্য, -“আমাদের কেউ বোমা মারার ঘটনায় যুক্ত নন। কারা এই কাজ করেছে বলতে পারব না”।তবে এলাকায় এই ঘটনায় তীব্র চাপা আতঙ্ক এখনও রয়েছে।