মোল্লা জসিমউদ্দিন
চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি.বি. রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে আমফান সম্পর্কিত এক জনস্বার্থ মামলার শুনানি ঘটে। সেখানে আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি বিস্তারিত তথ্য সহ রিপোর্ট আকারে হলফনামা পেশে ৭ দিনের সময়সীমা দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে।ইতিমধ্যেই কলকাতা হাইকোর্টের এহেন নির্দেশে রাজ্য সরকারে তৎপরতা দেখা গিয়েছে। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বারাসাতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন – ” আমফানে দুর্নীতির অভিযোগে ৮৭ জন আধিকারিকদের শোকজ করা হয়েছে। তাদের কে আত্মপক্ষ্যের সুযোগ দেওয়া হয়েছে শোকজে। হালিশহর পুর প্রশাসক অংশুমান রায় কে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে “। যদিও অংশুমান বাবু সংবাদমাধ্যম কে জানিয়েছেন – ” ব্যক্তিগত কাজে পুর প্রশাসক পদে থাকতে চাইনি, তবে তৃনমূলে আছি”। ইতিপূর্বেই পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় বিশেষত শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে শাসক দল থেকে অনেকেই পদ হারিয়েছেন আমফান দুর্নীতির অভিযোগে। উল্লেখ্য, বিশ্বব্যাপী মারণ ভাইরাস করোনা সংক্রমণের মধ্যেই পশ্চিমবাংলায় আমফান নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ নেমে আসে।মূলত পূর্ব মেদিনীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলাজুড়ে আমফানের ভয়াবহতা ছিল বেশি। বসতবাড়ি থেকে চাষের জমি। রাস্তাঘাট – বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পূর্ণ বিপর্যয় হয়। কলকাতার মত মহানগর আমফান পরবর্তী দু সপ্তাহ জনজীবন ব্যাহত ছিল। জল থেকে বিদ্যুৎ পরিষেবা সম্পূর্ণ রুপে বন্ধ ছিল। যা কলকাতায় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঘটেনি। এহেন প্রাকৃতিক দুর্যোগে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের পাশে আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করে। ক্ষতিপূরণ পাওয়ার জন্য বিডিও থেকে এসডিও অফিসে হাজার হাজার ক্ষতিগ্রস্ত আবেদন জমা দেয়। বাস্তবিক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্তদের একাংশ সরকারি ক্ষতিপূরণ পায়। সিংহভাগ ক্ষতিগ্রস্তদের বদলে ভুয়ো আবেদনকারীদের আমফানের ক্ষতিপূরণ পায় বলে অভিযোগ। পাকা বাড়িওয়ালা ব্যক্তিরা শাসক দলের স্থানীয় নেতাদের মদতে এইবিধ দুর্নীতি ঘটায় বলে দাবি। যার পরিপেক্ষিতে পূর্ব মেদনীপুরে তৃনমূলের দশক শতক নেতা দলীয়ভাবে শোকজ পেয়ে বহিস্কৃত হয়। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার ক্যানিং ব্লকে আমফানে ক্ষতিগ্রস্ত খায়রুল আলম সেখ নামে এক চাষি কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে জনস্বার্থ মামলাটি দাখিল করেন। মামলাকারীর পক্ষে আইনজীবী নুর ইসলাম সেখ – শমীক বাগচি চলতি সপ্তাহে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি বি রাধাকৃষ্ণনের ডিভিশন বেঞ্চে রাজ্য সরকারের আমফানে দুর্নীতি নিয়ে নানান তথ্য তুলে ধরেন। ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যের পক্ষে এডভোকেট জেনারেলের কাছে আমফান নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করে। আমফানে রাজ্য সরকার কি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। ক্ষতিগ্রস্তরা কতজন ত্রাণ পেয়েছেন? সর্বমোট আবেদনকারী ক্ষতিগ্রস্ত কতজন? এইবিধ তথ্য রিপোর্ট আকারে ৭ দিনের মধ্যেই হলফনামা দাখিলের নির্দেশ জারি করে কলকাতা হাইকোর্ট। পাশাপাশি আমফানে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাবলিক ডোমেইনে প্রকাশ করার আদেশনামা রয়েছে। রাজ্য সরকার এই আমফানে রিপোর্ট পেশে অতিরিক্ত সময় চাইলে তা খারিজ করে দেয় হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে আগামী সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে। কলকাতা হাইকোর্টের এহেন আমফান নিয়ে বিস্তারিত রিপোর্ট তলব করার পরেই রাজ্য প্রশাসনে এসেছে সক্রিয়তা। রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বারাসাতে এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন – ‘ আমফানে দুর্নীতির অভিযোগে ৮৭ জন আধিকারিকদের আত্মপক্ষ সমর্থনে সুযোগ দিয়ে শোকজ করা হয়েছে। এক পুর প্রশাসক কেও দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে ‘। যদিও ওই পুর প্রশাসক ব্যক্তিগত কাজে এই পদে ইস্তফা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে – দিদি কে বলো কর্মসূচির কাটমানি ইস্যু টি ফের আমফান দুর্নীতি উপলক্ষে পুনরায় বাংলার একাংশ জুড়ে সরগরম হতে চলেছে। সম্প্রতি রাজ্যপাল আমফান সহ নানান দুর্যোগে কেন্দ্রীয় আর্থিক অনুদান নিয়ে রিপোর্ট তলব করেছিলেন রাজ্য প্রশাসনের কাছে। যা নিয়ে রাজ্য বনাম রাজভবনের ঠান্ডা লড়াইও দেখা যায়।