আমাদের গ্ৰামের পুজো আমাদের গর্ব , আমাদের আনন্দ,
সুবল সরদার,
আজ মহাষ্টমীর মহালগ্নে মহাধূমধাম । মহানন্দে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে প্রতিমা দর্শন । আলোকসজ্জা,গানের শব্দ সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া অনুভূতির স্মৃতি বিধূরকাতরতা, আনন্দ বেদনার দোলা। আলোর বিছানা বিছানো পথে পথে । অনেক হেঁটেছি আজ প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে। এখন কৈশোরের হাত ধরেছি। কী নরম মিষ্টি তার হাত। আমার স্কুল কড়ামনুরাজ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় সেখানে দুর্গা পূজা হয়। স্কুল দেখলাম। ঠাকুর দেখলাম। ক্লাস রুমে ঢুকে বেঞ্চে কিছুক্ষণ বসেছিলাম। ভাবছিলাম এখানেই সেদিন বসেছিলাম ! ওখানে ডায়াস, চেয়ার,টেবিল, ব্ল্যাকবোর্ড ,ঠিক একই রকম আছে! স্যার বসতেন। ভাবতে ভাবতে হারিয়ে ফেলেছি নিজেকে কৈশোরের আঙ্গিনায়। দেয়ালে হাত বুলালাম। আঃ! কী মিষ্টি গন্ধ! কী আনন্দ! এই আমার স্কুল। অর্জুন গায়ে হাত দিয়ে বলল – কি ভাবছিস? অর্জুন আমার স্কুল লাইফের বন্ধু। তার বাড়ি ওখানে। স্কুলের পিছনে তার একটা মুদিখানা দোকান আছে। স্কুলের দেয়ালে মিডডে মিলের চার্ট দেওয়া আছে। কোন দিনে কি খাওয়া দেওয়া হবে ছাত্র ছাত্রীদের। স্কুলের ভিতরে চারদিক ঝাউগাছের সারি। অরণ্যে দিবসের অরণ্যের ছায়া এখানেও সুপ্রসারিত। বড় মাঠ , পুকুর, যেখানে হংস- হংসি ডানা মেলেছে গোধূলির রঙ মেখে। সেদিন এমন কংক্রিটের অট্রালিকা ছিল না । মাটির দেয়াল,বাঁশের জানালা । আমরা কখনো জানালা ভেঙ্গে পালিয়েছি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে। ধরা পড়েছি। মারও খেয়েছি। এমন মিষ্টি ,মধুর রঙ্গীন ছবি কৈশোর ছাড়া কে আঁকতে পারে ! কৈশোরের হাত ছেড়ে গ্ৰামের পথ ধরেছি । প্যান্ডেল প্যান্ডেল ঘুরছি। হরিশংকর পুর -কড়ামনুরাজ থেকে নোনাতলা। অনেক পুজো হবে। এবার মাইকের দাপট নেই বললে হয়। অবশ্য মগরাহাট থানা থেকে মাইকিং করেছিল যেন কোন পুজো কমিটি মাইক ব্যবহারে শব্দ লিমিট ক্রস না করে । শান্তি, শৃঙ্খলা বজায় রেখে শান্তিতে ঠাকুর দেখা যায়। কলকাতার মতো ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না । এখানে কোন প্রচার নেই,কোন বিজ্ঞাপন নেই,কোন বিতর্কও নেই। সবকিছু নিঃশব্দ,নীরবে,সুচারুভাবে,নিষ্ঠার সঙ্গে পালিত হয়। গ্ৰামের পুজো গ্ৰামের মতো মনোজ্ঞ ও মনোরম। আমাদের পুজো আমাদের গর্ব,আমাদের আনন্দ।
খুব গরম। আকাশ কখনো কখনো আওয়াজ করে ভয় দেখাচ্ছে । রাতের দিকে বৃষ্টি আসতে পারে । দেবী কৃপায় এখন বৃষ্টি দানব দমন। এখনও বৃষ্টির কোন খবর নেই। সুরে, ছন্দে,গানে পুরোহিতের মন্ত্রোচারণে মন্ত্রোমোহিত হয় প্রতিমা দেখে ,প্রণাম করে ফিরে এলাম বাড়িতে।