আর্তি
সোমা নায়ক (কলকাতা)
হঠাৎ একদিন তোমার মনে পড়বে, কাউকে কথা দিয়েছিলে তুমি,
ফিরতি পথে তাকে একটা পলাশের চারা এনে দেবে।
কথা দিয়েছিলে, কোনো এক বসন্তের দিনে, ওই পলাশের অহংকার তুমি পরিয়ে দেবে ওর গলায়, খুলে দেবে চুলের খোঁপা, ছুঁয়ে দেবে কানের লতি।
ও লজ্জা পেলে তুমি ওর কানের কাছে ঠোঁট নিয়ে বলবে, পাগলি, আমার কাছেও লজ্জা!
মনে পড়বে, কাউকে কথা দিয়েছিলে তুমি,
কোনো এক পাহাড় ঘেঁষা নদীর তীরে
দুজন মিলে একটা চিরস্থায়ী বসতি গড়ে তুলবে।
সকালের রোদ যদি ওর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়
তুমি আড়াল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে ঠায়।
এলোচুলে বিলি কাটতে কাটতে
হঠাৎই গুনগুনিয়ে উঠবে ওরই প্রিয় গান।
ওর রোজকার ঘর গেরস্থালি দেখে,
তুমি তৃপ্ত হবে। মনে মনে বলবে,
এইতো সুখ। এইতো জীবন।
সদ্যস্নাতা রমণীর চুল থেকে ঝরে পড়বে টুপটাপ জল। তুমি চাতকের মতো তাকিয়ে থাকবে কেবল। তোমার উষ্ণ শ্বাস ছুঁয়ে যাবে ওকে । তোমার চোখ, মুখ, শরীরী ভাষা পড়তে পেরে লজ্জা পাবে সে। ছুটে গিয়ে ঘরে খিল দেওয়ার আগেই তুমি ধরে ফেলবে ওকে। তারপর, তারপর কানে কানে বলবে, আমার কাছে এখনো এতো লজ্জা!
তারপর,
তারপর হঠাৎ তোমার বুকটা উঠবে কেঁপে। ছলকে পড়বে হাতে ধরা চায়ের কাপ থেকে তরল উষ্ণতা, তুমি ‘উফ্’ বলে আঁৎকে উঠবে।
‘কি হলো’ বলে চিৎকার করে উঠবে তোমার গৃহিণী। এক ছুটে রান্নাঘর থেকে দৌড়ে এসে বাড়িয়ে দেবে হাত। বলবে, সারাটাদিন কী যে এতো ভাবো তুমি!
তুমি বিড়বিড়িয়ে বলবে,
কথা রাখার কথা ছিল আমার।
একটা পলাশ চারা, একটা পাহাড় ঘেঁষা নদী, কারুর লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়ার মতো কিছু ঘটনা…
একটা কাব্য লিখব আমি… একটা কাব্য লেখার কথা ছিল আমার। আমায় একটা সুযোগ দেবে তুমি? অফিস ফেরত একটা বিকেল দেবে? দেবে গো? দেবে?