আলোর বাজি

Spread the love

আলোর বাজি

শিবানী চ্যাটার্জ্জী (উত্তরপাড়া, হুগলী)

   তিতলি আর তিতাসের লেগেই থাকে সকাল থেকে হাতাহাতি আর মারামারি। মা একেবারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন। দুটো যেন সাপে নেউলে।দুর্গাপূজো , লক্ষ্মীপূজো পেরিয়ে কালীপূজোয় চারিদিকে হৈচৈ কান্ড। বাজি নিয়ে ভাইবোনের রীতিমতো যুদ্ধ চলছে সারাদিন। বাবা এক ব্যাগ বাজি নিয়ে এসেছেন অফিস ফেরত। মায়ের চিৎকার শুরু। তোমাকে বলেছি এবছর বাজি আনবে না একদম। গতবছর পাড়ার ঘন্টুর হাতের অবস্থা কি হয়েছিল তোমার মনে নেই?  

    ওমনি দুই ভাইবোন জোঁট বেঁধে বাবার দলে। বাবা তুমি ঠিক করেছো বাজি এনে। মায়ের তখন তারস্বরে চিৎকার। এতক্ষণ বলা হচ্ছিল বাবা কি বাজি আনবে মা এই বছর? যেই দেখেছে বাজি এসে গেছে অমনি মায়ের কথা কে শোনে। 

      এতক্ষণ চলছিল দুজনে কে বেশি বাজি ফাটাবে সেই হুল্লোড়। এখন ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানে না। চুপ একদম। যা বাজি এসেছে দুজনে সমান ভাগ হবে। ওমনি তিতাস বলে ওঠে, মা আমি বড়ো আমি বেশি বাজি নেব। মায়ের প্রশ্ন কেন? প্রয়োজনে বোন তিতলিকে তুমি বেশি বাজি দেবে। ও ছোট। তুমি যে বড়ো দাদা সেটা তোমার ওকে বুঝিয়ে দিতে হবে। ছোট ছোট চিন্তা ভাবনাগুলো মাথায় এখন থেকে রাখতে হবে। নিজের কথা শুধু ভাববে না কখনো। আমি কিন্তু সমান কথাটা এই জন্য বলেছি। তোমার রাগ হবার কথা নয়। 

   তিতলি তখন মুচকি হেসে বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বাবা নিরুত্তর। এখন মায়ের শাসনের পিরিয়ড চলছে। এই ক্লাসে ঢোকা যাবেই না। বাবা বেশ ব্যাঙ্গোক্তির সুরেই বলে বসলেন। মা রাগে গজগজ করতে করতে রান্নাঘরে চলে গেলেন। সমাধান করবে মা, কথাও শুনবে মা। কি আর বলি!! মায়ের দীর্ঘশ্বাস পড়ল।

এদিকে বাজিগুলো এখনো ব্যাগের ভিতরেই রয়ে গেছে। বার করবে কে? মাকে বলার সাহস নেই। দুই ভাইবোন সুইসুট করে পড়তে বসে গেল।  উপায় কিছু না দেখে। 

   বাবা এতক্ষণ পর এককাপ চা হবে? মাকে যেই না বলা ওমনি তিতাস মা জল খাবো। তিতলি ওপাশ থেকে মা আমিও জল খাব। মা অস্থির হয়ে বলে বসল, তোরা একসাথে সবাই তৃষ্ণার্ত কিভাবে? নাকি একসাথে কোন ফন্দী এটেঁছিস। তখন তিতলি আর তিতাস দুজনের মুখোমুখি তাকিয়ে। মা আজ কেন এত রেগে আছে বলতো? চল মায়ের রাগ ভাঙাই। 

    কখন বাজিগুলো দেখব বলতো? মা কিছুই বলছে না। বাবাও ব্যাগ থেকে বার করছে না। তিতাস বলছে,চকলেট ব্যোম কিন্তু আমি ফাটাবো তিতলি বলে ওঠে ,রকেটটা আমার। দুজনের সেই আবার ঝগড়া মায়ের কানে পৌঁছে গেছে। এক কাপ চা বাবাকে দিয়ে এক বোতল জল নিয়ে এসে মা বলল এবার তোদের পিঠ দুটো আমি ফাটাবো। কেন মা ? আমরা কি করেছি? তোরা কিছু করিস নি। ঐ যে তোদের বাবা!! বাবা কি করল? বলেছিলাম এবছর বাজি আনবে না। সোহাগ করে এক ব্যাগ বাজি নিয়ে হাজির। এবার কিছু হলে কে সামলাবে শুনি? নিজে তো পাড়ার পুজো নিয়ে সারাদিন ব্যস্ত। যত ঝামেলা মায়ের। ওদিক থেকে গরম চায়ে চুমুক দিয়ে বাবা একমুখ হেসে  বলে উঠল, "যত দোষ নন্দ ঘোষ।" যেই নাকি পরিবেশ একটু নরম দুইজন মিলে মায়ের গলা জড়িয়ে দুইগালে হামি খেতে খেতে মা প্লিজ, বাজির ব্যাগটা খোলো। মা তখন গরম থেকে একটু নরম হয়েছে। বাজির ব্যাগখানা খুলে দেখাতেই ছেলের মন খারাপ, বাবা যে বাজি এনেছে কোনটার শব্দ নেই , শুধুই আলোর রোশনাই।

    ওদিক থেকে বাবার গলায়, শব্দবাজি নিষিদ্ধ আমি জানি। মায়ের মুখে  মুচকি হাসি। যাক আমি নিশ্চিন্ত হলাম। ওদিকে দুই ভাইবোন দুজনের মুখের দিকে তাকিয়ে, কি করবি আর বল!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *