ইলেকশন ফাণ্ডের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট  করার অভিযোগ অনুপমের

Spread the love

ইলেকশন ফাণ্ডের টাকা ফিক্সড ডিপোজিট  করার অভিযোগ অনুপমের

          খায়রুল  আনাম

লোকসভা ভোটকে পাখির চোখ করে রবিবার  ২৮ জানুয়ারি আবারও দু’দিনের রাজ্য সফরে আসছেন বিজেপির সর্বভারতীয়  নেতা তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  অমিত শাহ। আর তাঁর সফরের আগেই আগের ঘটনার পুনরাবৃত্তি  ঘটিয়ে  বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদ হারানো অনুপম হাজরা   শুক্রবার  ২৬ জানুয়ারি  রীতিমতো বোলপুরে সাংবাদিক সম্মেলন করে বিজেপির একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে  বিষোদগার  করে জানিয়ে দিলেন যে,  সমস্ত চোর একসঙ্গে আমার বিরুদ্ধে  বলছে। দলের জেলা সভাপতিকে  তিনি ‘অপদার্থ’ বলে উল্লেখ করে বলেন, এভাবেই রসেবশে চলুক ওরা। যে দিন যাবে একেবারেই যাবে।সেইসাথে তিনি  এখন থেকেই  আসন্ন লোকসভা ভোটের আগে বোলপুর কেন্দ্রে বেশি করে সক্রিয় হবেন বলে জানানোর সাথে সাথে বোলপুর লোকসভা কেন্দ্রে প্রার্থী হবেন বলেও জানিয়ে দেন।  কিন্তু বিজেপি কী তাঁকে দলীয় মনোনয়ন দেবে ?  সে ব্যাপারে তিনি তাঁর মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে  এবং প্রশ্ন  তুলে বলেন,  লড়াইয়ের জন্য  দলের দরকার হয় না কি ?   ইচ্ছে হলেই দাঁড়াবো। গণতান্ত্রিক দেশ। আমার ইচ্ছে, আমি ভোটে লড়বো। আমার দলের প্রতীকে  দাঁড়ালে ভালো কথা। এমনি তে গণতান্ত্রিক  দেশে  যে কেউ ভোটে লড়তে পারে। মানুষ চাইলেই হলো। এর আগে অনুপম হাজরা কলকাতার ব্রিগেডে গীতা পাঠের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্র টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দলের এক শ্রেণির নেতা টাকা তুলেছেন বলেও অভিযোগ করেছিলেন। আবার বিজেপি দল যাঁদের ভোটে দাঁড় করায় তাঁদের সম্পর্কে  অনুপম হাজরার মূল্যায়ন হলো,  আমাদের কিছু নেতা  আছেন, যাঁদের ভোটে জেতা লক্ষ্য নয়।  তা’হলে তাঁরা ভোটে দাঁড়ান কেন?  অনুপম হাজরার ব্যাখ্যা হলো, তাঁরা ভোটে দাঁড়ান দলের ইলেকশন ফাণ্ড থেকে যে টাকা আসে, সেটা ব্যাঙ্কে ফিক্সড ডিপোজিট করে দেওয়া। যাতে ভবিষ্যতে  সেই  টাকা থেকে মোটা সুবিধা পাওয়া যায়। এই প্রবৃত্তি তাঁর নেই বলেও তিনি জানিয়েছেন।

   রাজনীতির ময়দানে  পূর্ব  কোনও পরিচিতি না থাকা সত্বেও তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য  নেতৃত্ব জেলা তৃণমূল কংগ্রেসকে অন্ধকারে রেখে  ২০১৪ সালে বিশ্বভারতীর অধ্যাপক অনুপম হাজরাকে বোলপুর কেন্দ্রে  দলীয় মনোনয়ন দেয় এবং তিনি জয়ী হয়ে  সাংসদও হন।  কিন্তু দলের জেলা নেতৃত্ব, বলা ভালো দলের তৎকালীন জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের সঙ্গে তাঁর তেমন কোনও রসায়নও তৈরী হয়নি।  লোকসভার পরবর্তী ভোটে তিনি যে দলীয় মনোনয়ন পাবেন  না,  তা তাঁর কাছে স্পষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল কংগ্রেস ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেন। বিজেপি অনুপম হাজরাকে কলকাতার যাদবপুর লোকসভা  আসনে প্রার্থীও করে। কিন্তু তিনি ওই কেন্দ্রের তৃণমূল কংগ্রেসের তারকা প্রার্থী মিমি চক্রবর্তীর  কাছে পরাজিত হন। ওই কেন্দ্রে সিপিএম প্রার্থী ছিলেন কলকাতা কর্পোরেশনের প্রাক্তন মেয়র আইনজীবী  বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। অনুপম হাজরা ভোটে পরাজিত হলেও বিজেপি তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদে বসায়।  কিন্তু তিনি দলের রাজ্য সভাপতি  ড. সুকান্ত মজুমদার থেকে শুরু করে  দলের বীরভূম জেলা সাংগঠনিক সভাপতি-সহ  অনেকের বিরুদ্ধেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করে এবং শান্তিনিকেতনে তৃণমূল কংগ্রেসের একটি মঞ্চের কাছেও পৌঁছে  যান। যাতে দল চরম অস্বস্তিতে  পড়ায় বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য  জানিয়েই দেন যে, অনুপম হাজরা তৃণমূল কংগ্রেসে যেতে চাইলে যেতেই পারেন।  আবার অনুপম হাজরা বিজেপির রাজ্য সভাপতি  ড. সুকান্ত মজুমদার সম্পর্কে  বিষোদগার  করে বলেন যে,  দলের রাজ্য  সভাপতি ড. সুকান্ত মজুমদারের সঙ্গে দলের কোনও কর্মীই নেই।  তাঁর সঙ্গে ২০ জন লোক থাকলে ১৮ জনই নিরাপত্তারক্ষী।  এমন কী,  দলীয় নেতা  শুভেন্দু অধিকারী সাঁইথিয়া শহরে পদযাত্রায় এলে তাঁর যাত্রাপথের বিভিন্ন দেওয়ালে দলের  বীরভূম সাংগঠনিক জেলা  সভাপতি ধ্রুব সাহার বিরুদ্ধে  ‘পৌরসভা ভোটে বীরভূমে তৃণমূলের কাছে টাকা  খেয়ে বিজেপিকে  হারানোর কাণ্ডারি ধ্রুব সাহা দূর হটো’ বলে যে সব পোস্টার পড়ে তার নেপথ্যে অনুপম হাজরার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।  এমন কী, অনুপম হাজরা এমনও মন্তব্য করেন যে, লোকসভা ভোটে  বিজেপি  ২৭ টি আসনেই আটকে যাবে।  অনুপম হাজরাকে  ‘দল থেকে তাড়াবার’ দাবি জানিয়ে শান্তিনিকেতনে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অনুব্রত মণ্ডলের ঘনিষ্ঠ   ছবি-সহ  ‘সেটিংবাজ  অনুপমকে অবিলম্বে বিজেপি থেকে  বহিষ্কার করা হোক ও অকালকুষ্মাণ্ড  অনুপম  হঠাও, বিজেপি বাঁচাও’ বলে ছাপা পোস্টারও পড়ে।  অনুপম হাজরাকে দেওয়া ওয়াই  ক্যাটেগরির নিরাপত্তা তুলে নিয়ে তাঁকে দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকের পদ থেকেও সরিয়ে দিয়ে বিজেপি   দলীয় স্তরে তাঁকে  এক্কেবারে  ‘অপ্রাসঙ্গিক’ করে দেয়।  এর আগে বিগত বছরের ২৬ ডিসেম্বর বিজেপির সর্বভারতীয়  সভাপতি জগৎপ্রসাদ  নাড্ডা এবং কেন্দ্রীয়  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী  অমিত শাহ যখন কলকাতায় আসেন তখন অনুপম হাজরা শান্তিনিকেতনের বাড়িতে থাকলেও তাঁকে কলকাতার সভাতে আমন্ত্রণই জানানো হয়নি।  পদ্মের পদ হারিয়ে তিনি  ‘হিমালয়ে চলে যাবেন’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন।  এখন পুনরায় রবিবার  ২৮ জানুয়ারি অমিত শাহ  যখন দু’দিনের জন্য রাজ্য সফরে আসছেন  তখন সেখানেও ডাক পাননি অনুপম হাজরা।  তাই তিনি দলীয় মনোনয়ন না পেলেও লোকসভা ভোটে লড়ার কথা বলছেন।  মনে করা হচ্ছে যে, বিজেপি নেতৃত্ব তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার  করে দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের দিকে ঠেলে দেওয়ার আত্মঘাতী  খেলা খেলবে না।  তুমি যেতে চাইলে নিজের পথ নিজেই খুঁজে  নাও।  আবার এটাও মনে করা হচ্ছে যে,  তৃণমূল কংগ্রেস তাদের বোলপুরের বর্তমান সাংসদ অসিত মালকে পুনরায় দলীয় মনোনয়ন দিতে চলেছে বলেই তাঁকে দলনেত্রী কলকাতার কালীঘাটের বৈঠকে অসিত মালকে দলের জেলা কোর কমিটি থেকে সরিয়ে দিয়ে তাঁর মনোনয়ন পাওয়ার দিকেই ইঙ্গিত  করেছেন।  সে ক্ষেত্রে অনুপম হাজরা বিজেপি ত্যাগ করে তৃণমূল কংগ্রেসে গেলে লোকসভা ভোটে মনোনয়ন পাওয়াটার  ‘দর-কষাকষি’  করার কোনও সুযোগই পাবেন না। তাই তাঁকে এখন একাই লড়বেন  বলে  ‘রিজার্ভ  বেঞ্চে’ বসে থাকতে  হচ্ছে যে কারও ডাক পাওয়ার আশায়-আশায়।।

ছবি : অনুপম হাজরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *