মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু)
১৯৯৩ সালের একুশে জুলাই নিয়ে তৃণমূলের আবেগ অপরিসীম। ১৯৯৬ সালে এই সম্পর্কিত মামলায় ব্যাংকশাল আদালতে শুনানিতে অংশগ্রহণ করেছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলের যুব কংগ্রেস নেত্রী তথা ‘আইনজীবী’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই উকিলি পোশাক (শামলা) সযত্নে ২৪ বছর আগলে রেখেছেন উক্ত মামলার আইনজীবী অলোক কুমার দাস । উল্লেখ্য, এই আইনজীবিরই ছিল আইনী পোশাক গ্রাউন (শামলা) টি। একুশে জুলাই এর আগে সেই স্মৃতিময় পোশাক ‘উপহার’ হিসাবে দিতে চান এই আইনজীবী।করোনা আবহে এবার একুশে জুলাই জাঁকজমকহীন। ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে লক্ষ লক্ষ দলীয় নেতা – কর্মী – সমর্থকদের একুশে জুলাই বিষয়ক বার্তা দেবেন তৃনমূল সুপ্রিমো। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে ২৪ বছর পূর্বে ‘আইনজীবি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে স্মৃতির সরণীতে ফেরাতে চান কলকাতার ব্যাংকশাল আদালতের বর্ষীয়ান আইনজীবী অলোক কুমার দাস। কেননা একুশে জুলাই মামলায় দীর্ঘদিন ধরে আইনজীবী হিসাবে রয়েছেন তিনি। এখনও ২৫ টা বছর এই মামলায় তিনি যেমন কোন পারিশ্রমিক নেননি। ঠিক তেমনি এই মামলার আদালতে সমস্ত খরচ তিনি বহন করে থাকেন। একসময় যুব কংগ্রেসের নেত্রী তথা বর্তমান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একুশে জুলাই মামলায় ব্যাংকশাল আদালতের ৬ নং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে অলোক বাবুর সাথে অভিযুক্তদের পক্ষে সওয়াল করতে দেখা গেছে আইনজীবী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে। যে গ্রাউন ( শামলা) পোশাকটি আইনজীবী অলোক কুমার দাসের কাছ থেকে সেসময় চেয়ে নিয়ে ছিলেন মমতা। সেই পোশাক টি ব্যাংকশাল আদালতের আইনজীবী উপহারস্বরুপ দিতে চান তৃণমূল নেত্রী কে। উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সালে একুশে জুলাই নির্বাচনে সচিত্র ভোটার কার্ডের দাবিতে, বাম জমানার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর ইস্তফার দাবিতে ধর্মতলা চত্বরে যুব কংগ্রেসের পক্ষে এক প্রতিবাদ মিছিল হয়েছিল। দাবি, পুলিশের গুলিতে ১৩ জন যুব কংগ্রেস কর্মীসমর্থক মারা যান৷ সেসময় কলকাতা পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদারের ভূমিকায় উঠেছিল বিস্তর প্রশ্নচিহ্ন। ঘটনার পরিপেক্ষিতে কলকাতা পুলিশের তরফে হেস্টিংস এবং পার্কস্ট্রিট থানায় মিছিলরত যুব কংগ্রেসের ৪৩ জনের বিরুদ্ধে ফৌজদারী মামলা রুজু করা হয়েছিল৷ ভারতীয় দণ্ডবিধি ১৪৮, ১৪৯, ৩০৭, ৩৩২, ৩৩৩ , ৫২৭, ৪২৭ নং ধারায় মামলা দাখিল হয়ে থাকে। এছাড়া বিস্ফোরকের ৩ এবং ৫ নং ধারা, পাশাপাশি অস্ত্র আইনের ২৫ এবং ২৭ নং ধারা যুক্ত হয়েছিল এই দুটি ফৌজদারি মামলাতে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট, সরকারি কাজে বাধাদান, সরকারি অফিসারদের উপর সশস্ত্র হামলা, প্রাণনাশের চেস্টা, হুমকি প্রভৃতি ধারা গুলি ছিল এই মামলায়। বেশিরভাগ যুব কংগ্রেস কর্মী সমর্থক অভিযুক্তদের নাম এবং ঠিকানাহীন হওয়ায় ১৫ জন কে সনাক্তকরণ ঘটে। এরফলে এই মামলায় এই ১৫ জনই নোটিশ – সমন পান। ব্যাংকশাল আদালতে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে এই মামলা দুটি নথিভুক্ত হয়ে ৬ এবং ১৭ নং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে মামলা স্থানান্তরিত হয়।১৯৯৬ সালে ৯ জুলাই এই মামলার হাজিরার দিনে সোনালী গুহ, প্রফুল্ল গায়েন, অসীম দাস, সুবল মন্ডল, জুলফিকার আলি প্রমুখ অভিযুক্তদের হয়ে তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যাংকশাল আদালতে সওয়াল-জবাব পর্বে অংশগ্রহণ করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আইনী ডিগ্রি থাকায় ব্যাংকশাল আদালতে ৬ নং মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে সেদিন আইনজীবী হিসাবে মিথ্যা মামলার খারিজের পক্ষে সওয়াল চালিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মামলায় অভিযুক্ত যুব কংগ্রেস কর্মীসমর্থকদের পক্ষের আইনজীবী অলোক কুমার দাসের কাছ থেকে আইনী পোশাক শামলা টি নিয়েছিলেন মমতা। সেই পোশাক টি সম্মান জ্ঞাপনে আর কোনদিন ব্যবহার করেননি অলোক বাবু। দীর্ঘ ২৪ টা বছর গ্রাউন (শামলা) টি সযত্নে সংরক্ষণ করে রেখেছেন এই আইনজীবী মহাশয়। একুশে জুলাই মামলায় ৯০ দিনের বদলে প্রায় ৫ বছর পর কলকাতা পুলিশের তরফে চার্জশিট দাখিল হয়। চলতি বছরের এপ্রিল মাসে এই মামলার শুনানি ছিল। তবে করোনা স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখার জন্য শুনানি হয়নি। ইতিমধ্যেই এই দুটি ফৌজদারি মামলা রাজ্যের হয়ে খারিজ করার জন্য আইনমন্ত্রী মলয় ঘটকের সাথে কথা বলেছেন এই মামলার দীর্ঘদিন বিনা পারিশ্রমিকে কাজ করা আইনজীবী অলোক কুমার দাস মহাশয়। আইনজীবী অলোক কুমার দাস বলেন ” সেদিন (১৯৯৬ সালে ৯ জুলাই) মমতাদি আইনজীবী হিসাবে এই মামলার এফআইআর কপিতে ভুলভ্রান্তি ভরা নামের তালিকা এবং অস্তিত্বহীন ঠিকানা নিয়ে সওয়াল চালিয়েছিলেন। পাশাপাশি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি রেখে এই মামলা খারিজের পক্ষে সওয়াল চালান তিনি। এখনও সেই দিন ভুলিনি আমরা “।