কয়েকজন অভিযুক্ত গরহাজির হওয়ায় কয়লা পাচার মামলায় চার্জ গঠন পিছিয়ে গেল, ৩ জুলাই শুনানি
মোল্লা জসিমউদ্দিন,
বিগত বিধানসভা – লোকসভা নির্বাচন গুলিতে বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রচারে অন্যতম ইস্যু ছিল কয়লা পাচার কান্ড।সেই কয়লা পাচার মামলায় মঙ্গলবার পশ্চিম বর্ধমান জেলার আসানসোল সিবিআই এজলাসে চার্জ গঠনের নির্ধারিত দিন থাকলেও চার্জ গঠন হলো না। অনুপ মাজি-সহ ৪৩ জন হাজির থাকলেও আসেননি জয়দেব মণ্ডল, বিনয় মিশ্র-সহ ৩ জন। যার জেরে ফের পিছিয়ে গেল কয়লা পাচার মামলার চার্জ গঠন। পরবর্তী শুনানি আগামী ৩ জুলাই।আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতে কয়লা পাচার মামলায় চূড়ান্ত চার্জ গঠন হওয়ার কথা ছিল মঙ্গলবার। কিন্তু নানাবিধ কারণে তা হয়নি। বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী জানিয়েছেন, -‘আগামী ৩ জুলাই চার্জ গঠনের পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়েছে। ওই দিন চার্জশিটে নাম থাকা সব অভিযুক্তকে সশরীরে হাজিরা দিতে হবে’। মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ে তদন্তকারী সিবিআই আধিকারিক উমেশ কুমার সিং সহ অন্যান্য আধিকারিকরা আসানসোল আদালতে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন।কিন্তু এদিন চূড়ান্ত চার্জ গঠন হয়নি। এতদিনে কয়লা পাচারকাণ্ডে দু’টি সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা পড়েছিল। মঙ্গলবার চার্জ গঠনের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে গেল।কয়লা মামলার চার্জশিটে ৪৩ জন অভিযুক্তর নাম রয়েছে বলে জানা গেছে। মঙ্গলবার চার্জশিটে নাম থাকা ৪৩ জন অভিযুক্তদের মধ্যে জয়দেব মন্ডল ও নারায়ন খারকা এদিন উপস্থিত হননি মেডিক্যাল গ্রাউন্ড দেখিয়ে। উপস্থিত ছিলেন না অন্যতম অভিযুক্ত ‘ফেরার’ বিনয় মিশ্রও। তাই মঙ্গলবার আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে চার্জ গঠন হল না। বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ৩ জুলাই ধার্য করেছেন।গত ১৪ মে আসানসোল বিশেষ সিবিআই আদালতে মঙ্গলবার আত্মসমর্পণ করেছিলেন এই মামলার মূল অভিযুক্ত অনুপ মাজি ওরফে লালা। তবে সেদিনই তিনি শর্তসাপেক্ষে জামিন পান। অনেক আগেই দেশের শীর্ষ আদালত সুপ্রিম কোর্ট কয়লা পাচার মামলায় অনুপ মাজি ওরফে লালাকে ‘রক্ষাকবচ’ দিয়েছিল। বলা হয়েছিল, সিবিআই তাকে গ্রেফতার করতে পারবে না। আসানসোলের বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআইকে কয়লা পাচার মামলায় চার্জশিট পেশ করে তদন্ত শেষ করার নির্দেশ দেন। মঙ্গলবারই সেই চূড়ান্ত চার্জশিট গঠনের কথা ছিল।অন্যতম অভিযুক্ত অনুপ মাঝির আইনজীবী জানান, -‘ ২ জন অনুপস্থিত, তার ওপর সিবিআইয়ের তরফে চার্জশিটের যে কপি দেওয়া হয়েছে তা এত অল্প সময়ে পড়া সম্ভব হয়নি। তাই তাঁদের আরও সময় দেওয়া হোক’। সূত্রে জানা গেছে , ২৫,০০০ পাতার চার্জশিট গঠন করেছে সিবিআই। আদালত সেই আর্জি মঞ্জুর করে নির্দেশ দিয়েছে, পরবর্তী শুনানির দিন প্রত্যেককে হাজির হতে হবে। আর কেউ অসুস্থ থাকলে তাঁকে অ্যাম্বুল্যান্সে নিয়ে আসার কথাও বলেছে আসানসোল আদালত।এর আগে কয়লা পাচার মামলায় দু’টি চার্জশিট জমা দিয়েছিল সিবিআই। দু’টি চার্জশিটে মোট ৪৩ জন অভিযুক্তের নাম রয়েছে। মঙ্গলবার নির্ধারিত সময়ে আদালত চত্বরে এসে উপস্থিত হন সিবিআইয়ের তদন্তকারী আধিকারিক উমেশকুমার সিংহ। হাজির হন বেশ কয়েক জন অভিযুক্তের আইনজীবীও। কিন্তু ওই আইনজীবীদের কয়েক জন আদালতে দাবি করেন, কয়লা পাচার মামলায় তদন্ত সংক্রান্ত কোনও নথি হাতে পাননি তাঁরা। তার পরই বিচারক ওই আইনজীবীদের হাতে মঙ্গলবারই নথি তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন।মঙ্গলবার শারীরিক কারণে আদালতে গরহাজির ছিলেন দুই অভিযুক্ত জয়দেব মণ্ডল এবং নারায়ণ নন্দা। নারায়ণের আইনজীবী জানান, -‘তাঁর মক্কেল অসুস্থ। তবে বিশেষ প্রয়োজনে তাঁকে গাড়িতে চাপিয়ে আদালতে নিয়ে আসা সম্ভব’। জয়দেবের বিরুদ্ধে আবার এক ব্যবসায়ীকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। সিআইডির সেই মামলায় এখনও গ্রেফতার হননি তিনি। কলকাতা হাইকোর্টও তাঁকে কোনও ‘রক্ষাকবচ’ দেয়নি। মঙ্গলবার বিশেষ আদালতে এই প্রসঙ্গ উঠলে বিচারক জানান, দু’টি মামলা আলাদা। তাই দু’টি বিষয়কে এক করে দেখা ঠিক হবে না। সিবিআইয়ের আইনজীবী আদালতে এ-ও জানান যে, -‘এই মামলায় আরও কয়েক জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করে তারা আদালতে একটি অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেবে’। কিন্তু এত দিন পর কেন এই চার্জশিট দেওয়ার প্রয়োজন পড়ছে, সিবিআই এত দিন ধরে কী করছিল, এই সব প্রশ্ন তুলে তদন্তকারী সংস্থাটিকে ভর্ৎসনা করেন বিশেষ আদালতের বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী ।২০২০ সালে কয়লা পাচার মামলার তদন্ত শুরু করে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। রাজ্যে রেলের বিভিন্ন সাইডিং এলাকা থেকে কয়লা চুরির ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই প্রথমে আয়কর দফতর, তার পরে সিবিআই কয়লাকাণ্ডের তদন্তে নামে। লালার বাড়ি, অফিসে তল্লাশি, সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত শুরু হয়। লালার সঙ্গী বলে পরিচিত গুরুপদ মাজি-সহ চার জন গ্রেফতার হন। তিন জন জামিন পেলেও গুরুপদ এখনও ইডির মামলায় দিল্লির তিহাড় জেলে বন্দি।