জিডি মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান শেখ নুরুল হক বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছেন
ফারুক আহমেদ
এ বঙ্গের প্রথম বাঙালি মুসলিম আই.এ.এস. শেখ নুরুল হক। অবসর গ্রহণের পর আরও বৃহত্তর কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছেন তিনি। পতাকা শিল্পগোষ্ঠীর কর্ণধার, বিশিষ্ট বাঙালি শিল্পপতি মোস্তাক হোসেন প্রতিষ্ঠিত জিডি মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান হিসাবে গুরুদায়িত্ব সামলাচ্ছেন বেশ কয়েক বছর ধরে। তাঁর সুদক্ষ পরিচালনায় জিডি-র অধীন মিশন স্কুলগুলি এগিয়ে চলেছে তরতর করে। সেই মানুষটিই এবার একান্ত আলাপচারিতায় ধরা দিলেন পাঠক দরবারে। তাঁর এই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি নিলেন কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের গবেষক ও ‘উদার আকাশ’ প্রকাশন ও পত্রিকার সম্পাদক ফারুক আহমেদ। সেই স্মরণীয় মুহূর্তে উপস্থিত ছিলেন কাজী গোলাম গাউস সিদ্দিকী, ড.
মইদুল ইসলাম, কুতুব আহমেদ ও মনিরা খাতুন। আধুনিক বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করছেন বাঙালির গর্ব শেখ নুরুল হক।
ফারুক আহমেদ: প্রথমে জানতে চাইব আপনার স্কুল সম্পর্কে। ছোটবেলাটা আপনার কেমন কেটেছে, কীভাবে কেটেছে, আই.এ.এস. হওয়ার স্বপ্ন কীভাবে পূরণ হল ইত্যাদি…।
শেখ নুরুল হক: ছোটবেলায় আমার স্বপ্ন ছিল ফিজিক্সের অধ্যাপক হওয়া। এই সাবজেক্টটা আমার খুব ভালো লাগত। অবিভক্ত পূর্ব মেদিনীপুর জেলার এক অখ্যাত গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আমার প্রাথমিকের পড়াশোনা। তবে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমান পূর্ব মেদিনীপুর জেলার প্রতাপপুরের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ে আমি পড়েছিলাম। কিন্তু নবম এবং দশম শ্রেণির পাঠ শেষ করি অন্য একটি স্কুলে। ছাদহীন টিনের চালা এবং আগাছার জঙ্গলে ঘেরা ছিল আমাদের এই স্কুল। মেচোগ্রামের কাছে গোপালনগর বিহারীলাল বিদ্যাপীঠ নামের এই স্কুল আমার স্মৃতিতে-সত্তায় আজও জড়িয়ে আছে গভীরভাবে। তবে আমি আমার বড়দার ইচ্ছাতেই আই.এ.এস. হই। আমার বড়দা লেবার ডিপার্টমেন্টে চাকরি করতেন।
ফারুক আহমেদ: এগারো ক্লাস পাশ করেই তো কলকাতা যাত্রা?
শেখ নুরুল হক: হ্যাঁ, ফিজিক্সে অনার্স নিয়ে মৌলানা আজাদ কলেজে ভর্তি হই। থাকতাম বেকার হস্টেলের ২৪ নম্বর ঘরে। যে ঘরে বঙ্গবন্ধু মুজিবুর রহমানও ছিলেন একসময়। যদিও এই ঘরটাতে এখন ‘বঙ্গবন্ধু মিউজিয়াম’ তৈরি হয়েছে।
ফারুক আহমেদ: বঙ্গবন্ধুকে কি কখনও দেখার সুযোগ হয়েছিল?
শেখ নুরুল হক: না। সেই সুযোগ কখনও পাইনি।
ফারুক আহমেদ: আপনার পারিবারিক জীবনটা কেমন ছিল? মানে ছোটবেলাটা বা পরিবারের আর্থিক অবস্থা সম্পর্কে কিছু বলুন।
শেখ নুরুল হক: ছোটবেলায় খুব দুর্দশার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাদের। আর্থিক অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিল যে কোনও কোনও দিন রাতে উপোস থেকেই কাটিয়ে দিতে হত। আমার বাবা ছিলেন ফেরিওয়ালা। কাপড়ের ফেরি করতেন তিনি। বড়দা প্রথমে শিবপুরে বেসরকারি অফিসে অল্প বেতনে চাকরি করতেন। তাঁর খরচেই সেজদা সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে পড়েছেন। আমি যখন ক্লাস সিক্সে উঠি তখন আমার মেজদা পাবলিক সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষা দিয়ে হরিণঘাটা দুগ্ধ প্রকল্পে কেরানির চাকরি পান। এইসময় থেকে আমাদের পরিবারে কিছুটা সচ্ছলতা আসতে শুরু করে।
ফারুক আহমেদ: এরপর নিশ্চয় আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি।
শেখ নুরুল হক: তেমনভাবে হয়নি হয়তো। তবে মেজদা দুগ্ধ প্রকল্পের চাকরি ছেড়ে গোপালনগরের হাই স্কুলে স্কুল শিক্ষকের চাকরি নেন। আর তারপর আমিও দাদার ইচ্ছেতে এই স্কুলে ভর্তি হয়ে যাই নবম শ্রেণিতে।
ফারুক আহমেদ: বাড়ি থেকে স্কুল নিশ্চয়ই কাছেই ছিল?
শেখ নুরুল হক: একেবারেই না। আমাকে টানা একবছর সাইকেলে চেপে ১২ কিমি পথ ভেঙে স্কুল যেতে হত। ফিরতেও হত ওই ১২ কিমি পথ। অর্থাৎ টানা ১ বছর ধরে ২৪ কিমি পথ যাতায়ত করতে হত আমাকে। পরের বছর যখন দশম শ্রেণিতে উঠি তখন পাঁশকুড়া রেল স্টেশনের কাছে মাসে ২৫ টাকা খরচে আমার জন্য একটা ঘর ভাড়া নেওয়া হয়। তখনও ইলেকট্রিক ট্রেন চালু হয়নি। স্টিম ইঞ্জিনের সাহায্যে রেল চলত। তবে পাঁশকুড়া থেকেও স্কুল ৮ কিমি দূরে ছিল। ফলে কষ্ট যে খুব একটা লাঘব হল তা নয়।
ফারুক আহমেদ: এগারো ক্লাসেও কি একই সমস্যায় পড়তে হয়েছিল?
শেখ নুরুল হক: না, এগারো ক্লাসে ওঠার কিছুদিন পর স্কুলের প্রধান শিক্ষক দাদাকে বললেন, ‘নুরুলকে আর কষ্ট দেওয়া যাবে না। সামনে ফাইনাল পরীক্ষা ও এখন থেকে হোস্টেলে থাকুক।’ স্যারের কথামতো পরের ছয় মাস আমি হোস্টেলে থেকে পড়াশোনা করি।
ফারুক আহমেদ: পরীক্ষায় নিশ্চয়ই এই হোস্টেল-বাসের প্রভাব পড়েছিল?
প্রশ্ন শেখ নুরুল হক: অসম্ভব ভালো রেজাল্ট হয়েছিল। বোর্ড পরীক্ষায় এক থেকে একশোর মধ্যে আমার র্যা ঙ্ক হয়েছিল। সেই আনন্দে হেডস্যার পুরো একটা দিন স্কুল ছুটি দিয়েছিলেন।
ফারুক আহমেদ: এরপর সরাসরি মৌলানা আজাদ কলেজে প্রবেশ…।
শেখ নুরুল হক: হ্যাঁ, তবে তার আগে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারিতে সুযোগ পেয়েছিলাম। এই সময় জয়েন্ট বা নিট পরীক্ষা ছিল না। সরাসরি ভর্তি হওয়া যেত। কিন্তু আমি একেবারেই ডাক্তারিতে আগ্রহী ছিলাম না। আমি একটু ভীতু প্রকৃতির মানুষ। রক্ত সহ্য করতে পারি না। তার ওপর জ্যান্ত ব্যাঙ, আরশোলা ইত্যাদি নিয়ে কাটাছেঁড়া করা— আমার অন্তর সাড়া দিত না। ফলে ফিজিক্স অনার্সে ভর্তি হলাম মৌলানা আজাদ কলেজে। তবে প্রেসিডেন্সি এবং সেন্ট জেভিয়ার্সেও সুযোগ পেয়েছিলাম।
ফারুক আহমেদ: শেষ দুটোতে ভর্তি না হয়ে মৌলানা আজাদ কলেজকেই কেন বাছলেন?
শেখ নুরুল হক: আমি মিডিওকার পরিবারের সন্তান। বাংলা মিডিয়ামে পড়াশোনা করেছি। আর প্রেসিডেন্সি বা সেন্ট জেভিয়ার্স উচ্চবিত্তদের জন্য। তাদের আভিজাত্যের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারব না— এই ভয়ে সেখানে ভর্তি হইনি। সেদিক থেকে মৌলানা আজাদই আমার জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত মনে হয়েছিল।
ফারুক আহমেদ: তার মানে কিছুটা হীনমন্যতা সেই সময় আপনার মধ্যে কাজ করেছিল?
শেখ নুরুল হক: অস্বীকার করছি না। আমি সারাজীবন একটা নীতি ফলো করে এসেছি— ‘স্বর্গে দাসত্ব করার থেকে নরকে রাজত্ব করা অনেক ভালো।’ অর্থাৎ যেখানে আমি থাকব সেখানে যেন সেরা হয়ে থাকতে পারি, রাজার মতো থাকতে পারি। প্রেসিডেন্সি বা সেন্ট জেভিয়ার্সে এমন পরিবেশ পেতাম না বলেই এখনও মনে করি।
ফারুক আহমেদ: আপনার মনের মতো পরিবেশ কি মৌলানা আজাদ কলেজে পেয়েছিলেন?
শেখ নুরুল হক: অনেকটাই পেয়েছিলাম। ১৯৬৯ সালে মৌলানা আজাদে ভর্তি হই। পরের বছর বার্ষিক পরীক্ষায়, অর্থাৎ ফার্স্ট ইয়ারে কলেজের মধ্যে সেরা হয়েছিলাম। ফিজিক্স এবং গণিতে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিলাম। ফিজিক্স অনার্সে প্রথম হওয়ার সুবাদে এই সময় কলেজের ভালো ভালো শিক্ষকদের সুনজরে পড়ে গেলাম। এমনকি দু’জন শিক্ষক বাড়িতে ডেকে নিয়ে বিনা পয়সায় পড়াতে লাগলেন আমাকে। প্রসঙ্গত বলে রাখি, মৌলানা আজাদ কলেজে আমিই প্রথম ফিজিক্স অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছিলাম। আমার আগে এই কৃতিত্ব কারওর ছিল না। এর মধ্যে একটা ব্যাপার বলে নেওয়া দরকার, যে দু’জন অধ্যাপকের কথা বললাম তাঁরা আমাকে ভীষণ স্নেহ করতেন এবং ভালোবাসতেন। তাঁরা এমনকি তাঁদের বাড়িতে পর্যন্ত আমাকে ডেকে নোট দিতেন, পড়াতেন, খাওয়াতেনও। তাঁদের একজন ছিলেন অশোকবাবু এবং অন্যজন মণীন্দ্রবাবু। এঁদের প্রভাব আমার জীবনে অপরিসীম।
ফারুক আহমেদ: মৌলানা আজাদ কলজের পাঠ চুকিয়েই কি আই.এ.এস. হওয়ার প্রস্তুতি শুরু করলেন?
শেখ নুরুল হক: না, না। এরপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিজিক্সে এম.এস.সি.-তে ফার্স্ট ক্লাস থার্ড হই। আমার ক্যাম্পাস ছিল রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ। যদিও এম.এস.সি-র প্রথম বছরে পড়তে পড়তেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের চাকরিতে ঢুকে যাই। দু’বছর সেই চাকরি করলেও মানসিক শান্তি ছিল না। তাই এম.এস.সি. ফাইনাল পরীক্ষা দিয়ে খড়গপুরের একটি কলেজে ঢুকি ফিজিক্সের অধ্যাপক হিসাবে। এই সময়টা খুব উপভোগ করেছি আমি। ছাত্রছাত্রীরাও খুব পছন্দ করত আমার পড়ানো। জিডি-তে ঢোকার পর থেকে গত দশ বছর ধরে আমি একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির ফিজিক্স পড়াচ্ছি। নিটের জন্য এখান থেকে যারা প্রস্তুতি নিচ্ছে তাদেরও ফিজিক্স পড়াচ্ছি আমি। বেশ ভালোই লাগছে।
ফারুক আহমেদ: অধ্যাপনার সঙ্গে কত বছর যুক্ত ছিলেন?
শেখ নুরুল হক: দুই বছর। আমার মেজদাও ইতিমধ্যে স্কুলশিক্ষক থেকে অধ্যাপক হয়ে গেছেন। বড়দা তখন বললেন, বাড়িতে একজন অধ্যাপক আছে। আর অধ্যাপকের দরকার নেই। আমাকে আই.এ.এস. হতে হবে। বড়দার আদেশের পরপরই পুরোদমে চলতে লাগল আই.এ.এস. হওয়ার প্রস্তুতি।
ফারুক আহমেদ: এরপর তো ইতিহাস তৈরি হল।
শেখ নরুল হক: হ্যাঁ, বলতে পারেন। প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই পেয়ে গেলাম। যদিও সরাসরি আই.এ.এস. তখনও হইনি। প্রথম একবছর কাশীপুর গান ফ্যাক্টরিতে আমার পোস্টিং হল অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসাবে। তার পরের একবছর নাগপুর থেকে ১০০ কিমি ভিতরে কেমিক্যাল অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরিতে চাকরি করলাম। এই সময় আরও ভালো করে পড়াশোনা করে ইউপিএসসি পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম এবং যথারীতি ১৯৮২ সালে প্রপার আই.এ.এস. হয়ে বেরোলাম। তবে ফিজিক্স ও ম্যাথমেটিক্স সাবজেক্ট নিয়ে আই.এ.এস. হওয়া অত্যন্ত কঠিন।
ফারুক আহমেদ: পশ্চিমবঙ্গের প্রথম বাঙালি মুসলিম আই.এ.এস. হিসাবে আপনার নাম উল্লেখ হলেও একই সঙ্গে মুস্তাক মুর্শেদের নাম নিয়েও কিছুটা ধন্দ আছে। বিষয়টা যদি একটু পরিষ্কার করে দেন।
শেখ নুরুল হক: মুস্তাক মুর্শেদকে অনেকে প্রথম বাঙালি আই.এ.এস. বললেও তিনি ছিলেন ‘হাফ বাঙালি’ আই.এ.এস.। কারণ, তাঁর বাবা এবং মায়ের মধ্যে একজন ছিলেন বাংলাভাষী এবং একজন উর্দুভাষী। তাছাড়া উনি নিজেও বাংলা কথা বলতে পারতেন না।
ফারুক আহমেদ: অর্থাৎ খাঁটি বাঙালি মুসলিম আই.এ.এস. বলতে আপনিই প্রথম।
শেখ নুরুল হক: আমি উঠে এসেছি একেবারে প্রান্তিক গ্রাম্য পরিবেশ থেকে। তখনকার দিনে কুপীর আলোয় পড়াশোনা করে, বহুদূর ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট পেরিয়ে এই স্তরে পৌঁছনোটা খুব সহজসাধ্য ব্যাপার ছিল না। ফলে এটা আমার কাছে সত্যিই একটা গর্বের ব্যাপার।
ফারুক আহমেদ: মেদিনীপুরের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে এসে শহর কলকাতার ঝাঁ চকচকে অভিজাত ফ্ল্যাটে বাস— এতদিনের এই জার্নিটাকে কীভাবে বর্ণনা করবেন?
শেখ নুরুল হক: ১৯৮২ সালে আই.এ.এস. ট্রেনিং নিলাম মুসৌরিতে। ১৯৮৪ সালে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুরে এস.ডি.ও. হিসাবে যোগ দিলাম। এটা আরও আগে হত। কিন্তু ইন্দিরা গান্ধী মার্ডার হওয়ার জন্য পিছিয়ে গেল। বরাবারই গ্রাম্য পরিবেশ আমার ভালো লাগে। আর আমি যেহেতু গ্রামের ছেলে, ফলে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে মিশে যেতে আমার সমস্যা হয়নি কখনও। আমার সমগ্র চাকরি জীবনে আমি ৪০: ৬০ রেশিওতে বিরোধী এবং শাসকদলকে গুরুত্ব দিতাম। যাইহোক এরপর ১ বছর বীরভূমের এ.ডি.এম. এবং বর্ধমানে দু’বছর এ.ডি.এম. হিসাবে কাজ করি। সবটাই শহুরে ঘরানা। আমি তখনও ততটাও সহজ হতে পারিনি। আসানসোল-দুর্গাপুর ডেভলপমেন্ট অথরিটি (আড্ডা)-তে একজিকিউটিভ অফিসার হিসাবেও বেশ কিছুদিন কাজ করেছি। এরপর পশ্চিম দিনাজপুরের ডি.এম. হলাম। সেখান থেকে পঞ্চায়েতের ডিরেক্টর, সেরি কালচার বোর্ডের ডিরেক্টর— সব মিলিয়ে জার্নিটা মন্দ ছিল না। তাছাড়া কর্মসূত্রেই পাকাপাকিভাবে আমাকে কলকাতা শহরকে বেছে নিতে হয়েছে। ফলে সমগ্র জার্নি নিয়ে আলাদা করে কোনও নস্টালজিয়া কাজ করে না।
ফারুক আহমেদ: রাজ্য সরকারের একাধিক দফতরে কাজ করার সুবাদে বহু দেশ ঘোরার অভিজ্ঞতা হয়েছে আপনার। সেই বিষয়ে যদি কিছু বলেন।
শেখ নুরুল হক: চিন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ডে গিয়েছি। আমাদের কাজের সঙ্গে তাদের কাজও দেখেছি। দারুণ এক সিস্টেমেটিক ওয়েতে তারা সবকিছু পরিচালনা করে। ওয়ার্ল্ড ব্যাঙ্কের প্রোজেক্টে স্বাস্থ্য দফতরের যে কাজ হত সেই সুবাদে আমেরিকা, জার্মানির বেশ কয়েকটি শহর ছাড়াও কম্বোডিয়ায় যেতে হয়েছিল আমাকে। মোটামুটি অভিজ্ঞতা ভালোই বলতে হবে। শিশু ও নারীকল্যাণ দফতরে কাজ করে খুব আনন্দ পেয়েছি।
ফারুক আহমেদ: একাধিক দফতরে কাজ করতে গিয়ে কখনও ক্লান্ত হয়ে পড়েননি? মনে হয়নি কখনও যে হতাশা এসে গ্রাস করছে?
শেখ নুরুল হক: একেবারেই না। কারণ আমি কাজ করতে ভয় পাই না। তাছাড়া বহু দফতরে বিচিত্ররকম কাজ করতে করতে কখনও একঘেয়ে লাগেনি। তবে কিছু দফতরের কাজ একেবারেই ভালো লাগেনি। আবার কিছু কাজ খুব আনন্দের সঙ্গে করেছি। কিন্তু ক্লান্তি বা হতাশা— কোনওটাই আমাকে স্পর্শ করতে পারেনি।
ফারুক আহমেদ: বাংলার তিনজন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার কাজ করার সুযোগ হয়েছে। সবচেয়ে স্বচ্ছন্দ্য কার সঙ্গে ছিলেন?
শেখ নুরুল হক: বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। অত্যন্ত খোলামেলা মানুষ ছিলেন। বোধের জায়গাটাও ছিল খুব ভালো। জ্যোতি বসুর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হাতে গোনা। তাছাড়া আমলাদের সঙ্গে উনি একটা দূরত্ব বজায় রাখতেন। তবে অনেক সময় দলের ঊর্ধ্বে উঠে তিনি উচ্চপদস্থ আমলাদের কথাকে বেশি গুরুত্ব দিতেন। বাম আমলে বিশ্বনাথ চৌধুরী, পাখি সেনগুপ্ত, সূর্যকান্ত মিশ্র, পার্থ দে, আনিসুর রহমান প্রমুখ মন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। এঁরা সকলেই কাজ করার স্কোপ দিয়েছেন আমাকে, কখনও বিরোধ হয়নি। এখন মনে হয় অনেস্টি আর এফিসিয়েন্সি দিয়ে আমি সবাইকে জয় করতে পেরেছিলাম।
ফারুক আহমেদ: ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে তো আপনার বড় কাজ রয়েছে। ব্যাকওয়ার্ড ক্লাস ডিপার্টমেন্টে থাকার সময় ওবিসি সংরক্ষণ নিয়ে আপনার যে কাজ তা আজও বাংলার মানুষ মনে রেখেছে।
শেখ নুরুল হক: এখানে আমার কিছু বলার আছে। হর্টিকালচার ডিপার্টমেন্ট থেকে দ্বিতীয়বারের জন্য আমি ব্যাকওয়ার্ড ডিপার্টমেন্টে আসি। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমাকে দায়িত্ব দিলেন ওবিসি সংরক্ষণের কাজ করতে। বিশেষ করে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে কীভাবে ওবিসি-র ছাতার তলায় আনা যায় তা ভাবতে বললেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্যাটিসটিক্স ডিপার্টমেন্ট এবং অ্যানথ্রোপলজি ডিপার্টমেন্টের সাহায্যে গোটা বাংলা জুড়ে সার্ভে করেছিলাম। এই সময় আমি দক্ষিণ ভারতে আমার টিম নিয়ে গিয়ে স্টাডি করি। ওবিসি নিয়ে কর্নাটক সরকারের যে পলিসি ছিল সেটা আমার ভালো লেগেছিল। সাতদিন ধরে স্টাডি করে কর্নাটক মডেলকে আমরা গ্রহণ করি। এখানে একটা বিশেষ ব্যাপার বলা দরকার। বুদ্ধবাবু আমাকে এই কাজ করার জন্য দু’মাস সময় দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি ছ’মাস সময় চাইলে তিনি তা মেনে নেন। এটাই তাঁর উদারতা। সৎ এবং নিষ্ঠাবান অফিসারদের তিনি যতটা পছন্দ করতেন, ঠিক ততটাই দূরত্ব বজায় রাখতেন অসৎ-ঘুষখোর অফিসারদের থেকে। তবে ওবিসি সংরক্ষণের কাজ করতে গিয়ে আমাকে অনেক বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তৎকালীন একটি উগ্র বিরোধী রাজনৈতিক দল হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এটি নিয়ে মামলা করে। যদিও সে মামলা ধোপে টেকেনি। কিন্তু আমি সবচেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম আমার সম্প্রদায়েরই কিছু মানুষ আমার চূড়ান্ত বিরোধিতা করে প্রকাশ্যে আমার বিরুদ্ধে উল্টোপাল্টা বলে বেড়াচ্ছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল আমি নাকি মুসলমানদের মধ্যে ভাগ করে দিচ্ছি। তবে বুদ্ধবাবুর সহযোগিতা এবং উদারতা আমাকে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জুগিয়েছিল সেই সময়।
ফারুক আহমেদ: অর্থাৎ এমন উদারতা আপনি বর্তমান শাসকদল, অর্থাৎ তৃণমূল আমলে পাননি বলতে চান? এই সরকারের কাছ থেকে পদে পদে বাধা পেয়েছেন বলে শুনেছি।
শেখ নুরুল হক: এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। তবে এটা ঠিক, এই সরকারের প্রথম দু’মাসের পর থেকেই আমাকে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ওবিসি সংরক্ষণের কাজ করতে গিয়ে মণ্ডল কমিশনের রিপোর্টের যে প্যারামিটার ছিল তা আমাদের খুব কাজে লেগেছিল। এটাকেই মান্যতা দিয়ে রায় দেয় কলকাতা হাই কোর্ট। হার মানতে বাধ্য হয় বিরোধী পক্ষ।
ফারুক আহমেদ: ১৭ শতাংশ না করে ওবিসি হিসাবে মুসলিমদের পার্সেন্টেজ তো আপনি আরও বাড়িয়ে দিতে পারতেন ইচ্ছা করলে। সেই ক্ষমতা তো আপনার হাতেই ছিল।
শেখ নুরুল হক: পারতাম। কিন্তু সেটা টিকত না। হাই কোর্টে ইনজাংশন হয়ে যেত। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও বলেছিলেন, কোনওভাবে বাড়ানো যায় কি না দেখতে। কিন্তু আমি করিনি। সেটা অসাংবিধানিক হত।
ফারুক আহমেদ: ২০১১, অর্থাৎ তৃণমূল সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরপরই তো আপনাকে মাইনরিটি ডিপার্টমেন্টে ডেকে নেয়…।
শেখ নুরুল হক: হ্যাঁ। তার আগে পর্যন্ত আমি ব্যাকওয়ার্ড ডিপার্টমেন্টে ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আমাকে দিয়ে অনেক কিছু করতে চেয়েছিলেন বলে শুনেছিলাম। তবে সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিল না। সেসব নিয়ে আমি বিশেষ কিছু বলতে চাই না। মাত্র মাসকয়েক মাইনরিটি ডিপার্টমেন্টে কাজ করে আমি ফুড ডিপার্টমেন্টে চলে আসি। ফুড দফতরটা যদিও খুব খারাপ ছিল। তবু আমি এই দুর্নীতিগ্রস্ত জায়গাটিকেই বেছে নিলাম। কিছুটা হলেও এখান থেকে দুর্নীতিকে আমি দূর করতে পেরেছিলাম।
ফারুক আহমেদ: তখনকার খাদ্যমন্ত্রী বর্তমানে জেলে। কী মনে হয়, সময় কি এভাবেই মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেয়?
শেখ নুরুল হক: এ ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। কারণ, বিষয়টা বিচারাধীন। তবে একটা ব্যাপার আমার খুব খারাপ লাগে এখনও। এই সরকারের আমলে আমি মন থেকে কাজ করতে পারিনি। পদে পদে অসম্মান, লাঞ্ছনা আর অবহেলার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে আমাকে। একজন সৎ আই.এ.এস. অফিসার হিসাবে যে সম্মানটুকু প্রাপ্য ছিল তা আমাকে দেয়নি এই রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেসের সরকার।
ফারুক আহমেদ: পি.এস.সি-র চেয়ারম্যান হিসাবে কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
শেখ নুরুল হক: এককথায় বলতে গেলে খুবই খারাপ। তখন আমি প্রাণিসম্পদ দফতরের সচিব এবং মাইনরিটি ডিপার্টমেন্টের অতিরিক্ত মুখ্যসচিব হিসাবে কাজ করছি। হঠাৎ আমাকে বলা হল পি.এস.সি-তে যেতে হবে। আমার একেবারেই ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু বাধ্য হয়েই ওখানে গিয়েছিলাম।
ফারুক আহমেদ: শুনেছি পি.এস.সি-র মেয়াদ সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই আপনি চাকরি থেকে পদত্যাগ করেছিলেন?
শেখ নুরুল হক: পি.এস.সি-তে আমি ছিলাম দুই বছর। আমার আরও দেড় বছর চাকরি ছিল সেখানে। কিন্তু আমার অন্তরাত্মা আর সাড়া দিচ্ছিল না। চোখের সামনে অনৈতিক কাজকর্ম দেখে ভালো লাগছিল না। প্রতিবাদ করলেই কোপ পড়বে আমার ওপর। এই অবস্থায় পদত্যাগপত্র পাঠালাম মুখ্যসচিবের কাছে।
তিনি সেটা রাজ্যপালের কাছে না পাঠিয়ে ফেলে রাখলেন প্রায় ১৫ দিন। বাধ্য হয়ে আমি হাতে লেখা পদত্যাগপত্র সরাসরি পাঠিয়ে দিলাম রাজ্যপালের কাছে। কারণ তিনিই হচ্ছেন আমাদের অ্যাপয়েন্টিং অথরিটি।
ফারুক আহমেদ: চাকরি ছেড়ে দেওয়ার পরেও তো রেহাই মেলেনি। একাধিকবার ডিপার্টমেন্টাল তদন্তের মুখোমুখি হতে হয় আপনাকে। কী বলবেন এটাকে? প্রতিহিংসা নয়?
শেখ নুরুল হক: দেখুন একটা কথা বলি। আমার সারাজীবনে একটাই নীতির ওপর আমি প্রতিষ্ঠিত থেকেছি। তা হল সততা। এখান থেকে আমাকে কেউ কখনও টলাতে পারেনি। তাই আমার বিরুদ্ধে তদন্তের ভয় দেখিয়ে বা প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে যাঁরা প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন, আজ তাঁদের অবস্থা দেখুন। আমি আমার জায়গায় এখনও স্থির আছি। কাউকেই কিছু বলতে চাই না। ওপরওয়ালা সব জানেন। সব দেখছেন তিনি। তবে চাকরি জীবন থেকে আমি এখন অনেক শান্তিতে আছি। শান্তিতে ঘুমাতে পারছি।
ফারুক আহমেদ: গরিব এবং মেধাবী ছেলেমেয়েদের ভিতরে মিশন স্কুলে পড়ার কনসেপ্টটা আপনিই প্রথম ঢুকিয়েছিলেন। যার সুফল আজ ভোগ করছে বাংলার একাধিক মিশন স্কুলের শিক্ষার্থীরা। এই কনসেপ্ট বাস্তবায়িত করার ভাবনাটা আপনার মধ্যে কীভাবে কাজ করছিল?
শেখ নুরুল হক: আমার স্কুলে একটি ছেলে ছিল, আবদুল গফুর। পড়াশোনায় অত্যন্ত ভালো ছিল। অঙ্কে আমার থেকেও ভালো ছিল। অত্যন্ত হতদরিদ্র ঘরের ছেলে। প্রাইমারি পাশ করে আর সে স্কুলে যেতে পারেনি। মাদ্রাসায় চলে যায়। অনেক পরে যখন তার খবর পাই, জানতে পারি সে একটা মসজিদে ইমামতি করে। অনেকগুলো ছেলেমেয়েকে নিয়ে কোনওরকমে সংসার চালায়। অথচ পড়াশোনায় একটু সহযোগিতা পেলে সে হয়তো প্রফেসর বা ভালো কোনও চাকরি পেতে পারত। তার অবস্থা আমার মনে গভীর রেখাপাত করে।
আর একটি ঘটনা অমল দাসকে নিয়ে। তার বাবা খবরের কাগজ বিক্রি করতেন। একদিন অসুস্থ হয়ে পড়লে সেই কাজ করতে হত পড়াশোনায় অত্যন্ত মেধাবী অমলকে। দিন আনা দিন খাওয়া সংসার তাদের। কিন্তু তার পড়াশোনার স্কোপটা ছিল বলেই সব বিষয়ে অত্যন্ত ভালো রেজাল্ট করে এক চান্সেই ডব্লিউ.বি.সি.এস অফিসার হয়ে গেল। যদিও সে তারপরেই আই.এ.এস. হওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় এবং সফলতা অর্জন করে। সেও কিন্তু দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করেই এই জায়গায় পৌঁছেছে। তাই আমার মনে হয় দারিদ্র যেমন অভিশাপ, তেমন কিছুটা হলেও আশীর্বাদ। অ্যাডভারসিটি লিডস টু প্রসপারিটি। মোদ্দা কথা হল— নো পেইনস, নো গেইনস। এইসব ঘটনা আমাকে এমনভাবে নাড়া দিল যে তখন অর্থাৎ ১৯৭৭ সাল থেকেই বিষয়টি নিয়ে আমি ভাবতে লাগলাম। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। ক্ষুদ্র পরিসরে দরিদ্র ও মেধাবী পড়ুয়াদের প্রশিক্ষণ দিতে লাগলাম। এভাবেই শুরু আর কী।
ফারুক আহমেদ: এবার একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। জিডি-তে আপনার যুক্ত হওয়ার ঘটনাটা যদি একটু বলেন।
শেখ নুরুল হক: তার আগে একটা বিষয়ে জানতে হবে। আল-আমীন মিশনের সম্পাদক এম নুরুল ইসলামের সঙ্গে আলাপ আমার বহুদিনের। ১৯৬৯ সাল থেকে। আমি বেকার হোস্টেলে থাকার সময় এম নুরুল ইসলাম তাঁর পাড়ার একটা ছেলের সঙ্গে মাঝে মাঝে দেখা করতে আসতেন। সেখান থেকেই আমার সঙ্গে পরিচয়। আমি প্রথম এস.ডি.ও. হওয়ার পর বিষ্ণুপুরে আমার সঙ্গে দেখা করতে যান এম. নুরুল ইসলাম। ১৯৮৪ সালে বিষ্ণুপুরের এস.ডি.ও. ছিলাম আমি। আর আল-আমীন মিশন প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। যদিও প্রথমদিকে অন্য নাম ছিল। মিশনের ভিত্তিপ্রস্তব স্থাপনের জন্য আমাকে নিমন্ত্রণ করে নিয়ে গেলেন। এরপর তিনি প্রায়ই আসতেন আমার কাছে। বীরভূমের এ.ডি.এম. হয়ে যাওয়ার পর এম নুরুল ইসলাম আবার এলেন আমার কাছে। ওখানে তখন যত পাঁচামি/খাদান আছে তার লাইসেন্স হত আমার হাত দিয়ে। অনেক অবস্থাসম্পন্ন মুসলমান সে সময় পাঁচামির ব্যবসা করতেন। আমি তাঁদের কয়েকজনকে ডেকে অনুরোধ করলাম তাঁরা বছরের শেষে জাকাতের জন্য যত টাকা ব্যয় করেন তার অর্ধেক যেন আল-আমীন মিশনকে দেন। এইভাবে প্রতি রমজান মাসে এম নুরুল ইসলাম এসে মিশনের জন্য কালেকশন করে নিয়ে যেতেন। এমনকি খুব সস্তায় বা কখনও বিনা পয়সায় স্টোনচিপস, সিমেন্ট, বালি মিশনের বিল্ডিং তৈরির জন্য সংগ্রহ করতে লাগলেন তিনি। এরপর আমি যখন বর্ধমানের এ.ডি.এম. হয়ে যাই দু’বছরের জন্য তখনও রমজান মাসে এম নুরুল ইসলাম সেখানে যেতেন কালেকশনের জন্য। বড় বড় রাইস মিলের মুসলিম মালিকদের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিই তাঁকে আমি। ফলে অল্প দামে এবং বিনা পয়সায় অনেকে মিশনকে চাল দিতেন। এভাবেই আল-আমীনের প্রথম দিকের দিনগুলোতে আমি জড়িয়ে ছিলাম। এমনকি বড় বড় সরকারি অফিসারদের নিয়ে গিয়ে পড়ুয়াদের ডব্লিউ.বি.সি.এস. ক্লাস করিয়েছি। তাঁদের অবদান ভোলার নয়। ২০০৬ সাল পর্যন্ত আল-আমীন মিশনে আমার এই কর্মকাণ্ড জারি ছিল। ইতিমধ্যে বেশ কয়েক বছর আগে মোস্তাক সাহেবও যোগ দিয়েছেন। তিনি চেয়ারম্যান হলেন মিশনের। আমি তো আগে থেকেই সদস্য ছিলাম। আল-আমীন মিশন গড়ে ওঠার পিছনে মোস্তাক হোসেনের অবদান বিশাল। বহু টাকা তিনি ব্যয় করেছেন আল-আমীন মিশনের জন্য। কিন্তু সমস্যা শুরু হল ২০০৬ সালের মাঝামাঝি নাগাদ। বেশ কিছু বিচ্যুতি চোখে পড়ে আমাদের। যার কোনও সদুত্তর আমরা পাইনি। ফলে শুরু হয় মনোমালিন্য। আর্থিক অস্বচ্ছতা দেখা দেওয়ায় তদন্তের কথা বললাম আমি। মোস্তাক হোসেন সাহেবও রাজি হলেন। কিন্তু আমাদের তদন্ত কমিটি আল-আমীন মিশনে পৌঁছলে অত্যন্ত দুর্ব্যবহার করা হয় আমাদের সঙ্গে। মোস্তাক হোসেন সাহেবকে এই ব্যাপারে রিপোর্ট করলে তিনি জানান, আমরা আল-আমীন মিশনের সঙ্গে আর থাকব না। অবশেষে ২০০৭ সাল নাগাদ আমরা আল-আমীন ছেড়ে বেরিয়ে আসি। সেসব এখন অনেকেই জানেন। তাই সেসব নিয়ে বলতে চাই না। আল-আমীন ছেড়ে আসার পর একদিন মোস্তাক হোসেন সাহেব বললেন, ‘হক সাহেব মন খারাপ করবেন না। যা হয়েছে সেসব পিছনে ফেলে চলুন আমরা নতুন করে কিছু শুরু করি।’ ব্যস, সেই শুরু। প্রথমদিকে পার্ক সার্কাস ময়দানের পূর্ব দিকে মোস্তাক হোসেন সাহেবদের নিজস্ব বাড়িতে কোচিং চলত। এভাবেই আস্তে আস্তে বিস্তার লাভ করে জিডি। তারপর থেকে আজও চলছে। খুব ভালো আছি আমি। অবসর জীবন দারুণ কাটছে। এই মুহূর্তে জিডি-র অধীন প্রায় ৬০টি মিশন আছে। এইসব মিশনের নানামুখী কর্মকাণ্ড নিয়ে মেতে আছি। প্রথমে বাড়ি ভাড়া নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেডিক্যালের কোচিং দিই আমরা। অভূতপূর্ব সাফল্য পাই তাতে। বেশ কয়েক বছর পর জিডি অ্যাকাডেমির ঠিকানায় নিজস্ব বিল্ডিং তৈরি করে চলে আসি। তবে আমার মনে হয় আল-আমীন মিশনকে কেন্দ্র করে এমন ঘটনা না ঘটলে হয়তো জিডি-র এই উত্থান হত না।
ফারুক আহমেদ: এতগুলো মিশন, তাদের এত সব কর্মকাণ্ড, সবার ওপর জিডি মনিটরিং কমিটির চেয়ারম্যান আপনি— কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন?
শেখ নুরুল হক: ভালো-মন্দ মিশিয়ে ঠিকঠাক। কিছু মিশন খুব ভালো কাজ করছে। কারও পারফরম্যান্স ভালো নয়। অনেকে ঠিকমতো আর্থিক হিসাব দাখিল করছে না। যারা অস্বচ্ছভাবে কাজ করছে তারা আমাদের নজরে আছে। তাই ভবিষ্যতে কড়া পদক্ষেপ নিতে আমাদের সমস্যা হবে না। জিডি-র তরফ থেকে ইন্টারনাল এবং এক্সটারনাল স্কলারশিপ অ্যালট করা হয়। তবে শুধু ডাক্তারি বা ইঞ্জিনিয়ারিংই নয়, আমরা চাই অন্যান্য পেশায় এগিয়ে যাক সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের ছেলেমেয়েরা। তাতেও জিডি সমানভাবে তাদের সহযোগিতা করবে।
ফারুক আহমেদ: জিডি যে পলিসি নিয়ে কাজ করছে তাতে মুসলিম সমাজ প্রভূত উপকৃত হয়েছে। অনেক ভালো ছেলেমেয়ে জিডি-র প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত। অর্থাৎ মুসলিম সমাজের পিছিয়ে পড়া তকমাটা ঘুচতে শুরু করেছে। এখানে আপনার অভিমতটা একটু জানতে চাইব। তাছাড়া মুসলিম সমাজের উত্তরণের পথ কী? সে বিষয়েও কিছু বলুন।
শেখ নুরুল হক: বলতে খারাপ লাগলেও এটাই বাস্তব যে, আমাদের বাংলার মুসলিম ছেলেমেয়েরা অলস প্রকৃতির। তাছাড়া শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য তেমন কোনও উদ্যোগও নেই এই সমাজের। দক্ষিণ ভারতের প্রচুর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল আছে মুসলিম পরিচালিত। অথচ বাংলায় তেমন মানসম্পন্ন কোনও ইংরেজি মাধ্যম স্কুল আপনি দেখতে পাবেন না। উদ্যমী না হলে এবং অভিভাবকরা সচেতন না হলে এই জাতির উত্তরণ অত্যন্ত মুশকিলের ব্যাপার।
ফারুক আহমেদ: মোস্তাক হোসেন সম্পর্কে আপনার মূল্যায়ন কী?
শেখ নুরুল হক: একজন অসাধারণ সমাজদরদি এবং বাস্তববোধ সম্পন্ন মানুষ। তাঁর হাত ধরে সংখ্যালঘু সমাজে শিক্ষার যে প্রভূত উন্নয়ন হয়েছে, এই কারণে তাঁকে ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। শুধু চাইব তিনি আরও অনেক-অনেক দিন আমাদের মধ্যে থাকুন এবং সর্বশক্তিমান তাঁকে সুস্থ রাখুন।
ফারুক আহমেদ: এই বাংলা থেকে আর তেমন কোনও বাঙালি আই.এ.এস. তৈরি হচ্ছে না কেন?
শেখ নুরুল হক: ওই যে বললাম উদ্যমের অভাব। আসলে কী জানেন তো, মনের মধ্যে স্বপ্নটাকে লালন না করলে আপনি কখনওই সফল হতে পারবেন না। তাছাড়া নিজেকে যোগ্য হতে হবে।
আমরা যে কেরিয়ার কাউন্সেলিং করি সেটাও অনেক ফলদায়ক। সিভিল সার্ভিস, পুলিশ সার্ভিস এবং আইন নিয়ে যাতে পড়ুয়ারা পড়াশোনা করে সেই ব্যাপারে এবার জোর দিচ্ছে জিডি। আর্টসের পড়ুয়ারাও যাতে ভালো রেজাল্ট করে এইসব জায়গায় নিজেদের উন্নীত করতে পারে সেটাও আমাদের নজরে আছে। এছাড়াও জার্নালিজম এবং মাস কমিউনিকেশন নিয়ে যাতে ছেলেমেয়েরা আগ্রহী হয় সেটাও ভাবছি আমরা।
ফারুক আহমেদ: এই ভাঙা সময়ে সংখ্যালঘু মুসলিম সমাজের জন্য কী বার্তা দিতে চান?
শেখ নুরুল হক: প্রথমত পড়ুয়ার অভিভাবককে সচেতন হতে হবে। তার পাশাপাশি মরালিটি, এথিকস, ইন্টেগরিটিকে প্রাধান্য দিতে হবে। শুধু ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারই হব— এই ভাবনা ত্যাগ করতে হবে। আমাদের সমাজে বেশি প্রয়োজন ভালো মানের শিক্ষক, আই.এ.এস., আই.পি.এস., ডব্লিউ.বি.সি.এস., উকিল, ব্যরিস্টার। সেই উদ্দেশ্যে সমাজের ধনী ও শিক্ষিত মানুষদের একত্রিত হয়ে কাজ করা উচিত।
মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে থেকে আই.এ.এস. তৈরির প্রশিক্ষণের জন্য চার-পাঁচজন ছেলেমেয়েকে প্রতি বছর স্কলারশিপ দিতে রাজি হয়েছেন মোস্তাক হোসেন সাহেব। কিন্তু যোগ্য কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। জিডি অ্যাকাডেমির একজন প্রাক্তনীকে গতবছর থেকে আই.এ.এস. কোচিং-এর জন্য স্কলারশিপ দিয়ে দিল্লি পাঠানো হয়েছে।
ফারুক আহমেদ: তাহলে বলছেন এই সমাজের উত্তরণের আদৌ কোনও পথ নেই?
শেখ নুরুল হক: অবশ্যই আছে। সাউথ ইন্ডিয়া বিশেষ করে কেরল কী করে পারছে? কাশ্মীর বা বাংলার পাশের রাজ্য আসাম থেকে কী করে মুসলিম ছেলেমেয়েরা আই.এ.এস. হচ্ছে? তবলীগ, জামাত-ই-ইসলাম, আহলে হাদিস, পীরপন্থা নিয়ে আমরা মারামারি করছি। সবাই যদি এক হয়ে সমাজটার জন্য ভাবতাম তাহলে ৫০ বছর আগেই এই সমাজ উত্তরণের পথ খুঁজে পেত। আসলে এই কমিউনিটির মনের মধ্যে যদি আঘাত দেওয়া যায়, একটা ধাক্কা দেওয়া যায়, তবেই হয়তো জেগে উঠবে এই সমাজ।
ফারুক আহমেদ: সমাজকল্যাণে অগ্রনায়ক মোস্তাক হোসেন। এই মুহূর্তে তিনি একটি বহুল চর্চিত নাম। তাঁর কর্মকাণ্ড দাগ কেটে গিয়েছে সাধারণ মানুষের মনে। এমন একজন সফল মানুষকে নিয়ে আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা আমরা শুনতে চাই।
শেখ নুরুল হক: মোস্তাক হোসেন সাহেব কোনও কিছুতেই দুঃখ পান না। তিনি অনেকবার আমাকে বলেছেন তাঁর কাজ হচ্ছে দান করে যাওয়া। আল্লাহপাক দেখবেন, কে সেই দানের সদ্ব্যবহার করছে আর কে করছে না। বিচার করার মালিক আল্লাহ। তাঁর মনের সারল্যই তাঁকে এই কথা বলিয়ে নিয়েছে। ফলে তিনি মুক্ত হস্তে দান করতে দ্বিধা করেন না। কেউ জানতে পারে না, এমন কত যে গোপন দান তাঁর রয়েছে যার কোনও ইয়ত্তা নেই। ফলে এমন একজন মানুষকে বুঝতে গেলে তাঁকে আগে পড়তে হবে, ভালোভাবে জানতে হবে। তাঁর সবচেয়ে বড় গুণ— দান করার ক্ষেত্রে তিনি কোনও ভেদাভেদ করেন না। হিন্দু-মুসলমান সকলেই তাঁর উদারতার ছোঁয়া পেয়েছে।
একটা কথা বলি— জীবনে শান্তির মতো বড় জিনিস খুব কমই আছে। চাকরি ছাড়ার পর আমি অনন্ত শান্তিতে আছি। চাকরি ছাড়ার আগে কয়েক মাস আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারিনি। তারপর মোস্তাক হোসেনের অনুরোধে জিডি-র হাল ধরা এবং এত এত কর্মকাণ্ড নিয়ে মেতে থাকা— আমার জীবনকে শান্তি দিয়েছে। খুব ভালো আছি আমি।
ফারুক আহমেদ: সুস্থ থাকতে বা জীবনকে সুন্দর রাখতে সমগ্র সমাজকে কী পরামর্শ দেবেন?
শেখ নুরুল হক: ইংরেজিতে একটি কবিতা তথা প্রবাদবাক্য আমাদের ছোটবেলায় শেখানো হয়— ‘Early to bed and early to rise, makes a man healthy, wealthy and wise’ এই কথাটিকে যদি আমরা বাস্তবে আমাদের জীবনে প্রয়োগ করি তাহলে বাস্তবেই আমরা সুস্বাস্থ্য ও সমৃদ্ধি লাভ করতে পারি।
বলতে দ্বিধা নেই, বর্তমান যুব সমাজ আগের যুব সমাজের তুলনায় অলস। তার প্রধান কারণ মোবাইলে আসক্তি। যাইহোক নবপ্রজন্মই আগামীর ভবিষ্যৎ। তাই বর্তমান প্রজন্মকে সুস্থ থাকতে আমি কিছু টিপস দিতে চাই। সেগুলি হল: প্রতিনিয়ত সকাল-সকাল ঘুম থেকে ওঠা। নিম দাঁতন করা। খালি পেটে একগ্লাস জল পান করা। দূষণমুক্ত খোলা পরিবেশে এক ঘণ্টা মর্নিং ওয়াক করা। এরপর পুনরায় দু’গ্লাস জল পান করা। তারপর বিনা তেলে নুনে ভাজা চিনাবাদাম খাওয়া। সম্ভব হলে অঙ্কুরিত ভেজানো ছোলা বা মুগকলাই, লেবুর রস বা আদা দিয়ে খাওয়া। কিছুক্ষণ পর আটার রুটি, ডাল সবজি বা দুধ-সুজি-সিমুই খাওয়া। এরপর পাতিলেবু বা দুধ চা খেতে হবে।
দুপুর ১টার মধ্যে খাবার খেয়ে নিতে হবে। তিন ঘণ্টা পর ফাইবারযুক্ত কম ক্যালোরির বিস্কুট খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী। অল্প মুড়িও খাওয়া যেতে পারে। সন্ধ্যায় হালকা স্ন্যাক্সের সঙ্গে আদা-চা।
রাতে খাওয়ার কয়েক মিনিট আগে এক গ্লাস জল খান। রাত ৯টার মধ্যে খাওয়া শেষ করতে হবে। দাঁতে খাবারের টুকরো আটকে থাকলে সুতির কাপড় বা সুতো দিয়ে খিলাল করা। খাওয়া শেষ হওয়ার আধ ঘণ্টার মধ্যে ব্রাশ করতে হবে। খাওয়ার ১ ঘণ্টার মধ্যে আরও এক গ্লাস জল খেতে হবে। এরপর ইচ্ছেমতো লিখুন, আনন্দদায়ক কিছু পড়ুন, অথবা পরিবারের সাথে সময় কাটিয়ে রাত সাড়ে দশটার মধ্যে ঘুমিয়ে পড়তে হবে।
মনে রাখতে হবে রাতে মাংস ও ডাল খাওয়া যাবে না। সুস্থ থাকতে রাতে রুটির সঙ্গে মাছ এবং সবজি খেতে হবে। তেল, চর্বি, মাখনের ব্যবহার কমাতে হবে, পারলে একেবারে বন্ধ করতে হবে। কাঁচা লবণ, ফ্রিজের ঠান্ডা জল, কোল্ড ড্রিঙ্ক একেবারেই খাওয়া যাবে না।
পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ, কাঁচা লঙ্কা এবং অন্যান্য মশলা বেশি করে খেতে হবে।
কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি পেতে সপ্তাহে তিনদিন রাত্রে খাওয়ার ঘণ্টাখানেক পর ৩/৪ চা-চামচ ইসবগুলের ভুসি এক গ্লাস জল-সহ খেতে হবে।
প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী হতে গেলে ছাত্রছাত্রীদের মাছ, ডিমের কুসুম, টম্যাটো, বাদাম, সবুজ শাকসব্জি খেতে হবে।
বাইরে থেকে এলে মুখ, হাত-পা ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে। সর্বোপরি শরীর ও মনকে সুস্থ রাখতে মোবাইলের আসক্তি কমাতে হবে। এতে ঘাড়, চোখ, নার্ভ তথা ব্রেন-এর কার্যকরী ক্ষমতা বেড়ে যাবে।
ফারুক আহমেদ: মুসলিম সমাজ থেকে কী প্রত্যাশা করেন? যুব সমাজের প্রতিই বা কী বার্তা দিতে চান?
শেখ নুরুল হক: মুসলিম সমাজের একটা বড় অংশ শিক্ষার থেকে অর্থের প্রতি বেশি প্রাধান্য দেয়। আমার অনুরোধ— এটা করবেন না। জ্ঞান যদি আপনার মধ্যে থাকে তবে অর্থ নিজেই এসে ধরা দেবে। আর জ্ঞানহীন ধনী মানুষের কোনও মূল্য নেই। এই ধনসম্পদ অনন্তকাল থাকবে না। কিন্তু জ্ঞান বংশ পরম্পরায় থেকে যাবে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম প্রবাহিত হবে জ্ঞানের ধারা।
আমাদের যুব সমাজও টাকার পিছনে ছুটে চলেছে অবিরত। এটা বন্ধ হওয়া উচিত। ছুটতে হলে জ্ঞানের পিছনে, শিক্ষার পিছনে ছুটতে হবে। মনুষ্যত্বের শিক্ষা নিতে হবে। এটাই হবে আমাদের জীবনের সাফল্যের চাবিকাঠি।
অফুরন্ত সময় দিয়ে বিশেষ সাক্ষাৎকার দেওয়ার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ‘উদার আকাশ’ পত্রিকার সম্পাদকের পক্ষ থেকে।