দর্পণ নাটকটি সকলের অভিনয় গুণে আলাদা মাত্রা পেয়েছে
ইন্দ্রজিৎ আইচ
মোহিত চট্টোপাধ্যায় বাংলা সাহিত্যে বা বাংলা নাটকে এক ব্যতিক্রমী নাট্যকার। তার নাটকের বিষয়, সংলাপ, চরিত্র ও জীবনের নানা দ্বন্দ্ব, জটিলতা, রাজনৈতিক, সামাজিক সমস্যা ও তার থেকে উত্তরণ ছিল তার নাটকের মূল বিষ়বস্তু। বাস্তবের উল্টো পথে হেঁটে মোহিত চট্টোপাধ্যায় non Riyalistic নাটককে বাংলা থিয়েটারে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তার দর্পণ নাটক টি রূপক নাটক আকারে প্রকাশিত হলেও এই নাটক টি চরম বাস্তবধর্মী। নাট্যকার তার এই নাটকের ক্ষেত্রে বা এর চরিত্র সৃষ্টির ক্ষেত্রে ভিতরের মানুষকে প্রাধান্য দিয়েছেন। কারন বাইরের মানুষটা সমাজের শেখানো নিয়মের মধ্যে চললেও ভিতরের মানুষটা আলদা। তার এই দর্পণ নাটক inner রিয়েলিটির কথাবলে। দর্পণ নাটকের চরিত্রের গভীরতা বিশ্লেষণ করলে নাট্যকারের জীবনদৃষ্টির সমগ্রতা আমাদের সামনে উন্মোচিত হয়। Totality of life অর্থাৎ জীবন দৃষ্ঠির সমগ্রতাকে বোঝাতে তিনি গোটা মানুষটাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। সামাজিক কুসংস্কার ও সামাজিক নিয়মের গণ্ডিতে আবদ্ধ মানুষের জীবনদর্শন কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা এই নাটকে পরিস্কার হয়ে উঠেছে। সামাজিক নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ মানুষ কতটা আত্মকেন্দ্রিক হতে পারে তা পরিস্কার ভাবে বোঝাগেছে । সমাজের আবর্তে পড়ে অসহায়, বিপন্ন, বিদ্ধস্ত স্বর্ণর রুখে দাঁড়ানো কে তিনি এক অভিনব ভঙ্গিতে তুলে ধরেন। মানুষের মানবিক অবক্ষয় তার এই দর্পণ নাটকে বিদ্যমান। কিন্তু নরেন চরিত্রের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন সমাজে মানবিক অবক্ষয় সৃষ্ঠি হলেও কিছু মানুষের বিবেক এখন জীবিত রয়েছে। কারন একজন সত্যিকারের মানুষ হিসাবে আমাদের যে দ্বায়িত্ব কর্তব্য পালন করা উচিত তা নরেন চরিত্রের মাধ্যমে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তাই এখানেই এই নাটকের উত্তরণ ঘটে। তাই সবশেষে গোবরডাঙা নাবিক নাট্যমএর দর্পণ প্রযোজনা টি জীবন অধিকারির পরিচালনায় সার্থকতা লাভ করেছে। আস্তিক মজুমদারের আবহ বেশ সুন্দর, দক্ষতার সাথে অভিনয় করেছেন অবিন দত্ত, রাখি বিশ্বাস, অনিল কুমার মুখার্জি ও প্রদীপ কুমার সাহা। অশোক বিশ্বাসের আলোর ব্যবহার চমৎকার। তবে মঞ্চ সজ্জায় আরেকটু নজর দিলে ভালো হতো।