নির্ভীক জনহিতকর সাংবাদিকতার গুরুত্ব উল্লেখ করে বীরভূম এসপি কে তদন্তের নির্দেশ
মোল্লা জসিমউদ্দিন (টিপু)
একদা পূর্ব বর্ধমানের খন্ডঘোষে নিহত দলীয় কর্মীদের পরিপেক্ষিতে বালিকান্ডে একগুচ্ছ হুশিয়ারি দিয়েছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিশেষত রাজস্ব ফাকি দিয়ে চলা বালিঘাট গুলি বন্ধ করবার পাশাপাশি পুলিশের অন্দরমহলে ভিজিল্যান্স তদন্তের হুংকার পর্যন্ত সেখানে ছিল৷ এমনকি তদন্তকারী সংস্থা সিআইডি কে বালি নিয়ে অনুসন্ধানে নামিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এখন সেইসব অতীত, লোকদেখানো কিছু বিধিনিষেধ থাকলেও অবাধে চলে বালি লুট। অজয় নদের এপারে পূর্ব বর্ধমান এবং ওপারে বীরভূম জেলাজুড়ে বালি সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম ক্রমশ উদ্ধগ্রামী। শাসক দলের প্রভাবশালী অংশ পুলিশ প্রশাসনের একাংশ কে নিয়ে চালাচ্ছে এই বালি সিন্ডিকেট বলে অভিযোগ। জেসিবি দিয়ে নদী গর্ভে বালি তোলা এখন অজয় নদের দিনকার ব্যাপার। রাতেও জেনারেটার লাগিয়ে হ্যালোজেন লাইটে অজয় নদের বালিঘাট গুলিতে থাকে সারিসারি লরি /ডাম্পার৷ ঠিক এহেন মৌচাকে ঢিল মেরেছিলেন বীরভূমের বোলপুর এলাকার এক সাংবাদিক। পথেঘাটে প্রাণনাশের হুমকির পাশাপাশি জুটেছিল দুখানি ননবেলেবেল ধারায় পুলিশ কেস। তদন্তকারী পুলিশঅফিসাররা ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে নোটিশ না পাঠিয়ে গ্রেপ্তারের জন্য অতিসক্রিয় হয়ে উঠছিলেন। ঠিক এইরকম পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হয়েছিলেন ওই সাংবাদিক। কলকাতা হাইকোর্টের সাংবাদিকদের দুঃসময়ে থাকা আইনজীবী হিসাবে পরিচিত জয়ন্ত নারায়ণ চট্টপাধ্যায় ও নাজির আহমেদ এই মামলাটি ওই সাংবাদিকের হয়ে লড়েন। গত সপ্তাহের শেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর এজলাসে এই মামলার ভার্চুয়াল শুনানি চলে। সেখানে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ এই আগাম জামিনের মামলায় দুটি এফআইআর কপি দেখে পর্যবেক্ষণে জানায় – ‘ বেআইনী কাজ নিয়ে খবর করা সাংবাদিকদের মৌলিক অধিকার। এই প্রকাশিত সংবাদ প্রশাসনের চোখে ভালো না লাগতেও পারে। তবে নির্ভীক জনহিতকর সাংবাদিকতা জনগণ কে সচেতন ও জনমত গড়তে সাহায্য করে ‘। ডিভিশন বেঞ্চ আরও জানায় – ‘ বীরভূম জেলা পুলিশ এই মামলা দুটির ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি মেনে অভিযুক্ত সাংবাদিক কে তদন্তের জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য কোন নোটিশ পাঠায়নি।যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তা সত্য হলে ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগকারী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থাগ্রহণ করা উচিত পুলিশের ‘। অনলাইন শুনানি শেষে ডিভিশন বেঞ্চ ওই আগাম জামিনের আবেদন গ্রহণ করে বীরভূম জেলার এসপি কে নির্দেশ দেয় – সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দুটি এফআইআর খতিয়ে দেখতে হবে। পাশাপাশি প্রকাশিত খবরে যেসব পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে ঘুষের অভিযোগ উঠেছে। তা বিভাগীয় ভাবে তদন্ত করে দেখতে হবে ‘। আদালত সুত্রে জানা যায়, বীরভূমের অজয় নদে জেসিবি মেশিন দিয়ে যততত্রভাবে বালি তোলা হচ্ছে। এই বিষয়ে ওই সাংবাদিক খবর প্রকাশ করেন। গত ১ লা জুন ইলামবাজার থানায় স্থানীয় এক ব্যবসায়ী প্রকাশিত খবর নিয়ে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ভয় দেখিয়ে তোলা আদায়, প্রাণনাশের হুমকি সহ বেআইনীভাবে আটক রাখার অভিযোগ জানান। এই ঘটনার পরের দিনেই বোলপুর থানাতেও ওই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে উত্তেজিত জনতা কে পুলিশের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেওয়া, সরকারি কাজে বাধাদান সহ বেশকিছু জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়। উল্লেখ, ওই সাংবাদিক বোলপুর পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে তোলাবাজির খবর প্রকাশ করেন। প্রিজনভ্যানে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় এক পথচারী। তাতে পুলিশের বিরুদ্ধে জনরোষ দেখা যায়। এই জনরোষ কে সাংবাদিকের করা ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করা হয় মামলায়। তবে বীরভূম জেলা পুলিশের তরফে অজয় নদের বালির গাড়িতে তোলাবাজির অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। দুটি পৃথক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলায় আগাম জামিন নিতে কলকাতা হাইকোর্টের দারস্থ হন আবেদনকারী সাংবাদিক। সেখানে গত সপ্তাহের শেষে কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি বিবেক চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চ আগাম জামিনের আবেদন গ্রহণ করে বীরভূম জেলার এসপি কে ওই দুটি এফআইআর ভালোমতো খতিয়ে দেখবার পাশাপাশি অভিযুক্ত তোলাবাজিতে যুক্ত পুলিশকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত করার নির্দেশ দেয়। তবে ডিভিশন বেঞ্চের পর্যবেক্ষণ গুলি নির্ভীক জনহিতকর সাংবাদিকতা করার পথে এক নবদিশা দেখালো বলে মনে করছে সাংবাদিকমহল।